×

পুরনো খবর

রাণীনগরের কুমড়া বড়ির চাহিদা সারাদেশে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৭:৪৫ পিএম

রাণীনগরের কুমড়া বড়ির চাহিদা সারাদেশে
রাণীনগরের কুমড়া বড়ির চাহিদা সারাদেশে
রাণীনগরের কুমড়া বড়ির চাহিদা সারাদেশে

 নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে কুমড়া বড়ি তৈরির ধুম পড়েছে। আর এই বড়ি তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। এই কুমরা বড়ি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চালান হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। শীতকালই হচ্ছে এই কুমড়া বড়ি তৈরির মৌসুম। রাণীনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের খট্টেশ্বর গ্রামে সবচেয়ে বেশি এই সুস্বাদু কুমড়া বড়ি তৈরি করা হয়ে থাকে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, অনেক সকাল থেকেই বাড়ির উঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় চলে কুমড়া বড়ি তৈরির কাজ। বাড়ির গৃহিণী থেকে শুরু করে পুরুষ এবং ছোট-বড় ও বয়স্ক লোক সবাই মিলে তৈরি করেন কুমড়া বড়ি। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে ফাঁকা রোদ মাখানো বিভিন্ন স্থানে চাটাইয়ের উপড় সারি সারি করে বিছানো সাদা রঙ্গের মাসকালাইয়ের তৈরি কুমড়া বড়ি শুকানো হচ্ছে। কেউ শুকনো বড়িগুলো বাঁশের চাটাই থেকে খুলছে আবার কেউ সেই বড়ি সৎকার করছে, যা চোখে পড়ার মতো। ভোর রাত থেকে শুরু হয় এই কুমড়া বড়ি তৈরির কাজ।

শত বছরের ঐতিহ্যপূর্ণ এই কুমড়া বড়ি বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করে আসছে কারিগররা। খট্টেশ্বর গ্রামের ২০-২৫ টি পরিবারের মানুষ পৈত্রিক এই পেশাটিকে  এখনো টিকিয়ে রেখেছে। সারা বছর টুকটাক বড়ি তৈরি হলেও শীত মৌসুমে চলে বড়ি তৈরির ধুম। শীত মৌসুমে এই বড়ির চাহিদা বেশি থাকায় বড়ি তৈরি নিয়ে চলছে কারিগরদের প্রতিযোগিতা। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে কুমড়া বড়ি তৈরি হয়ে থাকে তবে খুব সীমিত। শীতের ৬ মাসই মূলত এই বড়িটি তৈরি করা হয়ে থাকে। দিন দিন এর চাহিদা বেড়েই চলেছে কিন্তু বড়ি তৈরির উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো মুনাফা পাওয়া যায়না এখন।

বড়ি তৈরির কারিগররা জানান, বড়ি তৈরির সব উপকরণই পুষ্টি গুণ সম্পন্ন খাবার। বড়ি তৈরিতে প্রথমে মাসকালাই পানিতে ভিজিয়ে ঘষে পরিস্কার করে মেশিনে ভেঙ্গে গুড়া করে আবার তা পানি দিয়ে ভিজিয়ে রুটি তৈরির আটার মতো অবস্থায় পরিণত করা হয়। এরপর এর সঙ্গে চাল কুমড়া পিষিয়ে অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে বড়ি তৈরি করা হয়। পরে তা ২-৩ দিন রোদে ভালভাবে শুকিয়ে বিক্রি করা হয়। বড়িকে শক্তিশালী করার জন্য এর সঙ্গে খুব কম পরিমাণে আলো চালের আটা মিশানো হয়। প্রতি কেজি মাসকালাই থেকে প্রায় ৬ থেকে ৭ শ গ্রাম কুমড়া বড়ি তৈরি হয়। এই বড়ি মূলত মাসকালাই, চাল কুমড়া, জিরা, কালোজিরা, মোহরী দিয়ে তৈরি করা হয়। যে কোন রান্না করা তরকারির সঙ্গে এই কুমড়া বড়ি রান্না করা যায়। আর রান্নার পর তরকারিতে এই বড়ি যোগ করে অন্য রকমের এক স্বাদ।

খট্টেশ্বর হাটখোলাপাড়া গ্রামের বড়ি তৈরির কারিগর সুবল চন্দ্র সরকার ও বলায় চন্দ্র জানান, কুমড়া বড়ি তৈরি আমাদের বাপ-দাদার পেশা। তাই আজো এই পেশা করে আসছি। এই বড়ি মূলত মাসকালাই, চাল কুমড়া, জিরা, কালোজিরা, মোহরী দিয়ে তৈরি করা হয়। প্রতি কেজি বড়ি ২২০-২৫০ টাকা (বড় আকারের) এবং ১২০-১৫০ টাকা (ছোট আকারের) করে খুচরা ও পাইকারি বিক্রয় করা হয়। নিজ এলাকার প্রয়োজন মিটিয়ে দেশের উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুর, পঞ্চগড়, জয়পুরহাট, লালমনিরহাট, রংপুর ও দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এই কুমড়া বড়িগুলো সরবরাহ করা হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিনিয়তই পাইকাররা এসে আমাদের কাছ থেকে এই বড়ি কিনে নিয়ে যায়। এছাড়া আমরা স্থানীয় বিভিন্ন হাটেও খুচরা বিক্রি করে থাকি। তবে বড়ি তৈরির উপকরণের দাম বেশি হওয়াই এবার আমাদের লাভটা খুব কম।

একই গ্রামের বড়ি তৈরির কারিগর মিঠন কুমার সরকার ও জয় কুমার জানান, আমরা নিম্ন আয়ের কিছু মানুষ ঐতিহ্যপূর্ণ এই পৈত্রিক পেশাটিকে ধরে রেখেছি। আমরা বিভিন্ন এনজিও-সংস্থা থেকে ঋন নিয়ে কাজ করি। যার কারণে, আমাদের ইচ্ছে থাকলেও এই শিল্পটাকে প্রসারিত করতে পারছি না। আমরা সরকারি সহযোগীতা বা কম সুদে ঋণ পেলে এই শিল্পটাকে আরো অনেক বড় করা যেত। আগের তুলনায় এখন বড়ি তৈরির উপকরণের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় লাভ অনেকটাই কমে গেছে। তবু শত কষ্টেও বাপ-দাদার এই পেশাটি আমরা ধরে রেখেছি।

১নং খট্টেশ্বর রাণীনগর (সদর) ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান পিন্টু জানান, এই গ্রামের তৈরি কুমড়া বড়ির সুনাম রয়েছে। অনেক দুর-দুরান্তের মানুষ এবং ব্যবসায়ীরা এসে এই গ্রামে থেকে কুমড়া বড়ি নিয়ে যান। তবে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত নিম্ন আয়ের মানুষরা যদি সরকারি ভাবে আর্থিক সহযোগীতা পেলে এই শিল্পটির আরো উন্নতি হতো। এতে অনেক বেকার মানুষদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হতো।

এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল মামুন বলেন, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে কুমড়া বড়ি তৈরি হয়। কিন্তু খট্টেশ্বর গ্রামটিতেই অনেক বছর যাবৎ বাণিজ্যিকভাবে কুমড়া বড়ি তৈরি করা হয়ে থাকে বলে আমি শুনেছি।  তবে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত এখানকার কারিগররা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য সহযোগীতা করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App