×

মুক্তচিন্তা

আত্মহত্যা ভেঙে দিচ্ছে পরিবারের স্বপ্ন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:৫৮ পিএম

আত্মহত্যা একটি ভয়ঙ্কর সামাজিক ব্যাধি। প্রতিনিয়ত আমরা সংবাদপত্রের মাধ্যমে কোনো না কোনো আত্মহত্যার খবর পেয়ে থাকি। আত্মহত্যা হলো নিজ হাতে নিজেকে মেরে ফেলা। অর্থাৎ স্বাভাবিক মৃত্যু হওয়ার আগেই নিজেই নিজের জীবনকে হত্যা করা বা ধ্বংস করাই হলো আত্মহত্যা। ডাক্তার বা চিকিৎসকরা আত্মহত্যার চেষ্টা করাকে মানসিক অবসাদজনিত গুরুতর উপসর্গ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। সব ধর্মেই আত্মহত্যাকে মহাপাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং পরকালে এর ভয়াবহ শাস্তির কথা উল্লেখ আছে। নানা কারণে মানুষ আত্মহত্যা করে থাকে। যখন জ্ঞান-বুদ্ধি, উপলব্ধি, অনুধাবন শক্তি লোপ পায়, নিজেকে অসহায়-ভরসাহীন মনে হয় তখনই মানুষ আত্মহত্যা করে। এ ছাড়া সাংসারিক কলহ-দ্ব›েদ্ব পড়ে, নিরাশ বা বঞ্চিত হওয়ার কারণে, অতিরিক্ত রাগের কারণে, কাক্সিক্ষত কোনো কিছু লাভ করতে না পারলে, লজ্জা ও মানহানিকর কোনো কিছু ঘটে যাওয়া বা অপ্রত্যাশিতভাবে প্রকাশ হওয়া, অভাব, দারিদ্র্যের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকার অসুখ-বিসুখে জর্জরিত হয়েও মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এমন প্রবণতা সবচেয়ে বেশি।

সম্প্রতি দেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েই চলছে। এসব আত্মহত্যার ফলে ঝরে পড়ছে শত শত মেধাবীর জীবন। সন্তান হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন বাবা-মা। মুহূর্তে ধ্বংস হচ্ছে একটি পরিবারের স্বপ্ন। যে বাবা-মা স্বপ্ন দেখতেন তাদের সন্তান পড়ালেখা শেষ করে প্রতিষ্ঠিত হয়ে তাদের দেখাশোনার দায়িত্ব গ্রহণ করবে কিন্তু ছোটবেলা থেকে তিল তিল করে গড়ে তোলা তাদের স্বপ্ন বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেক বাবা-মা আছেন যারা নিজের সন্তানের পড়ালেখার খরচ জোগানোর জন্য তাদের সহায়-সম্বল বিলিয়ে দিতেও কার্পণ্য করেন না। কারণ তারা স্বপ্ন দেখেন কিছুদিন পর তাদের সন্তান প্রতিষ্ঠিত হয়ে তাদের দেখাশোনার ভার গ্রহণ করবে। সংসারে তখন সুদিন ফিরবে। ঠিক এই সময়টাতে তাদের সন্তান যখন আত্মহত্যা করে বসে তখন তাদের কী উপায়? এমনিতেই সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য সহায়-সম্বল যা ছিল তা বিক্রি করেছে। তারপর নিজ সন্তানকে হারিয়ে তখন তাদের পাগলপ্রায় অবস্থা। দেখা যায়, এসব আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থী দেশের প্রথম সারির মেধাবী। তাদের থেকে দেশ ও জাতির অনেক কিছুই পাওয়ার ছিল। এমন আত্মহত্যায় দেশ ও জাতিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব অকাল মৃত্যুতে বাবা-মা হারাচ্ছেন তাদের প্রিয় সন্তানকে, ভাই হারাচ্ছে প্রিয় বোনকে, বোন প্রিয় ভাইকে, শিক্ষক প্রিয় শিক্ষার্থীকে, বন্ধু তার প্রিয় বন্ধুকে। এসব আত্মহত্যার কারণে ভেঙে যাচ্ছে পরিবারের সারাজীবনের গড়ে তোলা স্বপ্ন। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবার, সমাজ ও দেশ।

সন্তানকে আত্মহত্যা থেকে ফেরানো না গেলে একসময় জাতি হবে মেধাশূন্য। ধ্বংস হবে আমাদের সমাজ, সভ্যতা ও সংস্কৃতি। দেশের এসব মেধাবী সন্তানকে আত্মহত্যার প্রবণতা থেকে ফিরিয়ে আনতে হলে তাদের সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। খেলাধুলা ও চিত্তবিনোদনের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। সভা-সেমিনার করে তাদের সচেতন করতে হবে। পত্র-পত্রিকা, রেডিও ও টেলিভিশনের মাধ্যমে আত্মহত্যার কুফল তুলে ধরতে হবে। দেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে আত্মহত্যার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে হবে। কোনো শিক্ষার্থী অবসাদে ভুগছে কিনা, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত কিনা- এসব বিষয়ে শিক্ষকদের মনিটরিং সেল গঠনের মাধ্যমে তদারকি করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরও খোঁজখবর রাখতে হবে কোনো বন্ধু মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে কিনা, জটিল কোনো ব্যাধি আছে কিনা বা কেউ কোনো বিষয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত কিনা। এ ছাড়া খেয়াল রাখতে হবে কোনো শিক্ষার্থী একটানা অনেক দিন ক্লাসে অনুপস্থিত কিনা, তার শারীরিক বা মানসিক কোনো সমস্যা আছে কিনা। সর্বোপরি কোনো বন্ধুর কোনো সমস্যা থেকে থাকলে নিজেরা বা প্রয়োজনে শিক্ষকদের সহায়তায় তা সমাধান করা। তাহলে দেশের মেধাবী প্রাণগুলো এভাবে ঝরে পড়বে না, ক্ষতিগ্রস্ত হবে না আর কোনো পরিবার। নিঃশেষ হবে না আর কোনো পরিবারের স্বপ্ন। সন্তানহারা হবে না আর কোনো বাবা-মা। সর্বোপরি আত্মহত্যা রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই দেশের তরুণ-তরুণীদের আত্মহত্যা রোধ করা সম্ভব হবে।

[email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App