×

অর্থনীতি

অর্থ পাচাররোধে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:৩২ এএম

অর্থ পাচাররোধে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা

অর্থ পাচার (মানিলন্ডারিং) ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশের সার্বিক অগ্রগতি ভালো। সম্প্রতি এমন মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানিলন্ডারিং (এপিজি)। ২০২০ সালে ঢাকায় এপিজির পরবর্তী বৈঠকে ওই প্রতিবেদন তুলে ধরা হবে।

অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে সবচেয়ে দ্রুত উন্নয়ন করেছে এমন ১০ দেশের তালিকার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশের নাম রয়েছে। এ কাজে আরো উন্নতির জন্য বাংলাদেশ বড় ধরনের অ্যাকশন প্ল্যান প্রণয়ন করেছে। এটি বাস্তবায়নের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ জব্দ করা ও ওইসব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার আইনি কাঠামো প্রয়োগ করবে সংস্থাগুলো।

মূলত এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলে অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে কর্মকাণ্ড তদারকি করে এপিজি। অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী এসব নিয়ে কাজ করে ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্স (এফএটিএফ)। সম্প্রতি প্যারিসে আয়োজিত ৫ দিনের অধিবেশন শেষে জঙ্গিদের পুঁজি জোগানের অভিযোগে পাকিস্তানকে ৪ মাস সময় দিয়েছে এফএটিএফ। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধ না হলে পাকিস্তানকে কালো তালিকাভুক্ত করবে ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্স।

জানা গেছে, ২০১৬ সালে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থ প্রতিরোধে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থা এপিজি একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। ওই রিপোর্টে দেখা যায়, প্রযুক্তিগত ৫টি শর্তে বাংলাদেশের অগ্রগতি কম (পার্টিয়ালি কমপ্লাইন্স)। কিন্তু চলতি বছর প্রকাশিত মূল্যায়ন প্রতিবেদনে ওইসব শর্ত পূরণ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ৪টি শর্তেই আগের অবস্থানের চেয়ে অগ্রগতি হয়েছে। আর একটি শর্ত শতভাগ পূরণ হয়েছে। এপিজির মূল্যায়ন প্রতিবেদনে প্রযুক্তিগত শর্তগুলো পূরণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন প্রতিরোধ মানদণ্ডে ৪০টি শর্তের মধ্যে কমপ্লাইন্স ক্যাটাগরি (পরিপূর্ণ) অর্জন করেছে ৮টি। পাশাপাশি ২৬টি শর্তে লার্জলি কমপ্লাইন্স (মূলত অনুগত) ক্যাটাগরিতে পৌঁছেছে এবং ৬টি পার্টিশিয়ালি কমপ্লাইন্স (আংশিক অনুগত) অর্জন করেছে।

জানা যায়, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশের সর্বশেষ অবস্থান জানতে গত জুলাই মাসে বাংলাদেশ সফরে আসে এপিজির প্রতিনিধিদল। ওই সময় বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অগ্রগতি, অভ্যন্তরীণ সমন্বয়, ফলোআপ অ্যাসেসমেন্ট ও মিউচুয়াল ইভালুয়েশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে বাংলাদেশের স্ট্র্যাটেজিক ইমপ্লিমেন্ট প্ল্যানসহ (এসআইপি) সার্বিক অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা হয়। প্রতিনিধিদলটি অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পৃথক  বৈঠক করে। বাংলাদেশে সার্বিক অগ্রগতির ভিত্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে এপিজির মূল্যায়ন প্রতিবেদনে। ২০২০ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় এপিজির পরবর্তী বৈঠকে এটি তুলে ধরা হবে।

এপিজির মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নেয়া পদক্ষেপ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা জারি করা হয়। এ বিধিমালার আলোকে আর্থিক খাত বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতের তথ্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আদান-প্রদান করার বিধান রাখা হয়, যা আগে ছিল না।

সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে অ্যাকশন প্ল্যান প্রণয়ন : এদিকে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশ বড় ধরনের অ্যাকশন প্ল্যান প্রণয়ন করেছে। এটি বাস্তবায়নের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে এপিজির সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ জব্দ করা ও ওইসব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার আইনি কাঠামো প্রয়োগ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

দ্রুত উন্নয়নে সেরা বাংলাদেশ : মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সূচকে সবচেয়ে দ্রুত উন্নয়ন করেছে এমন ১০টি দেশের তালিকায়ও রয়েছে বাংলাদেশ। সারাবিশ্বের ১৪৬টি দেশের মধ্যে ঝুঁকির তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৮২, গত বছর যা ৫৪ নম্বরে ছিল। এর মাধ্যমে উচ্চ ঝুঁকির তালিকা থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশ মধ্যম ঝুঁকির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ব্যাসেল ইনস্টিটিউট অন গভর্নেন্স  মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন ঝুঁকি নিরূপণ এ সূচক ২০১৭ সালে প্রকাশ করা হয়। সংস্থাটি ৬ বছর পর পর মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ সূচক জরিপ প্রকাশ করে। পরবর্তী সূচক প্রকাশ করা হবে ২০২৩ সালে।

পাকিস্তানকে সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধে ৪ মাস সময় : পাকিস্তানকে সন্ত্রাস নির্মূলে ৪ মাস সময় দিয়েছে অর্থ পাচার নজরদারি বৈশ্বিক সংস্থা এফএটিএফ। আগামী ৪ মাসের মধ্যে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসীদের অর্থসাহায্য বন্ধ করতে হবে।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে তা সম্ভব না হলে এই দেশকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। গত ১৮ অক্টোবর প্যারিসে আয়োজিত ৫ দিনের অধিবেশন শেষে এমনটাই ঘোষণা করল বিশ্ব সন্ত্রাসে অর্থ জোগানের ওপর নজরদারি চালানো আন্তর্জাতিক সংস্থা ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্স বা এফএটিএফ।

জঙ্গি মদদের কারণে পাকিস্তানের কালো তালিকাভুক্ত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা  তৈরি হয়েছে। এই মুহূর্তে পাকিস্তান এফএটিএফের ধূসর তালিকায় রয়েছে। এই তালিকায় থাকা মানে, এফটিএফ মনে করছে আর্থিক অপরাধ বা জঙ্গিদের অর্থ সাহায্য বন্ধ করতে না পারার কারণে সে দেশের আইনশৃঙ্খলা বিঘি্নত হচ্ছে। সে ব্যাপারেই এবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে এফএটিএফ। এফএটিএফ ২৭টি শর্ত দিয়েছিল পাকিস্তানকে। তার মধ্যে মাত্র ৫টিকে পূরণ করতে পেরেছে দেশটি। এই দুর্বলতার কারণেই সে দেশকে এতদিন ধূসরাঞ্চলেই রাখা হয়েছিল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App