×

জাতীয়

জামিনপ্রাপ্ত জঙ্গি নিয়ে শঙ্কা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:১৭ এএম

জামিনপ্রাপ্ত জঙ্গি নিয়ে শঙ্কা

প্রতীকী ছবি

গুলশানের হলি আর্টিজান হামলা মামলার রায়ের মধ্য দিয়ে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গিবাদ দমনে আরো একবার দৃষ্টান্ত স্থাপনে সক্ষম হলেও আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই বলে মনে করছেন সন্ত্রাস দমন সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা। যুক্তরাজ্যের লন্ডন ব্রিজে হামলার ঘটনাকে এর বড় কারণ হিসেবে দেখছেন তারা। এ ছাড়া কাউন্টার র‌্যাডিকেলাইজেশনের ব্যাপকতা ও ডির‌্যাডিকেলাইজেশনের অপ্রতুলতাকেও সামনে আনা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে তারা বলছেন, সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে কারাগারে থাকা হামলাকারী উসমান গত বছর ডিসেম্বরে ছাড়া পান। আগাম মুক্তির শর্তানুযায়ী শরীরে একটি ইলেকট্রনিক ট্যাগ লাগানোসহ তার গতিবিধি নজরদারি করছিল পুলিশসহ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই ফাইভ। এত কিছুর পরও গত ২৯ নভেম্বর রাতে লন্ডন ব্রিজের মতো স্পর্শকাতর স্থানে ঠিকই হামলা করতে সক্ষম হন উসমান। তার ছুরিকাঘাতে কয়েকজন আহত হওয়াসহ নিহত হন দুজন।

এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে গ্রেপ্তারের পর জামিনে থাকা জঙ্গিদের নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। কেননা, বিভিন্ন মতাবলম্বী হাজারখানেক দেশীয় জঙ্গি ইতোমধ্যে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। জঙ্গি দমনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখা পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাবের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬ সালে হলি আর্টিজানে হামলার পর থেকে গত নভেম্বর মাস পর্যন্ত শুধু র‌্যাব ৮৩২ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে জেএমবির ৫৫৭ জন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ৪৫ জন, হুজি ২০ জন, হিযবুত তাহরীর ৬৮ জন, আনসার আর ইসলাম ১০২ জন, আল্লাহর দল ৪০ ও হামজা ব্রিগেডের ১ জন সদস্য রয়েছে। এদের মধ্যে ইতোমধ্যে জামিনে মুক্তি পেয়ে পলাতক রয়েছেন প্রায় ৩০০ জন। এ ছাড়া অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর জামিন পেয়েছেন আরো ৬০০-৭০০ জঙ্গি। যে কোনো সময় এরা সংগঠিত হয়ে চালাতে পারে ভয়াবহ হামলা। এর বাইরে নতুন যুক্ত হয়েছে লোন উলফ (একাকি হামলাকারী) জঙ্গি। এরাও হয়ে উঠছে উদ্বেগের আরো একটি কারণ।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ ভোরের কাগজকে বলেন, সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃতরা জামিনে বের হয়ে বেশিরভাগই আগের কাজে যুক্ত হয় এমনটাই দেখা গেছে। তবে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত জামিন পাওয়া সবার সাংবিধানিক অধিকার। এ ক্ষেত্রে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িতদের জামিন পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবা যেতে পারে। এ ছাড়া তদন্ত কার্যক্রমের ধীরগতিও জঙ্গিদের জামিন পাওয়ার একটি কারণ। একজনকে দোষী প্রমাণে তদন্ত করে অভিযোগ দিতে যত দেরি হবে, ততই তার জামিন পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে নিয়েই জঙ্গি দমনে সচেতনতামূলক কাজ হচ্ছে। আর এ বিষয়টিকে কাউন্টার র‌্যাডিকেলাইজেশন বলা হয়। এ কাজটিও ভালো। তবে জঙ্গিদের ডির‌্যাডিকেলাইজড করার কাজগুলো কম হচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ড বাড়াতে হবে। আর এ কাজে প্রশিক্ষিত লোকেরও অভাব রয়েছে। তাই ডির‌্যাডিকেলাইজেশনের বিষয়ে আরো মনোযোগী হওয়ার সময় এসেছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমোডর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, লন্ডন হামলার এ ঘটনা থেকে আমাদের সচেতন হতেই হবে। সেখানকার কারাগারে জঙ্গিদের ডির‌্যাডিকেলাইজড করার জন্য অক্সফোর্ড-ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরা স্কলাররা কাজ করছেন। এরপরও এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। যেখানে আমাদের দেশে এমন কিছু এখন পর্যন্ত নেই বললেই চলে। এখানে আইনের ফাঁকফোকর ও দুর্বল সাক্ষীর কারণে প্রায়ই জামিন পেয়ে আবারো জঙ্গিরা ওই কাজেই জড়াচ্ছে। তাই সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ নিয়ে এখন বড় পরিসরে ভাবার বিকল্প নেই।

এ বিষয়ে র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম ভোরের কাগজকে বলেন, জঙ্গি দমন অভিযানকে র‌্যাব সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আমরা জঙ্গি আটকের পর থানায় সোপর্দ করি। পরে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠায়। এমন পরিস্থিতিতে আদালত থেকে তারা জামিন নেয় বা সাজা পায়। এ ক্ষেত্রে পুলিশ ও আদালতের কাজটাই থাকে বেশি। তবে জঙ্গিদের জামিন দেয়ার বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবা যেতে পারে। আর জঙ্গিদের ডির‌্যাডিকেলাইজেশনেও আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট সূত্র মতে, জামিন নিয়ে পালিয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ জঙ্গিদের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া আছে। এ ছাড়া কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের গোয়েন্দারা তাদের বিষয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন। বিশেষ করে জামিনে পলাতক গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজন জঙ্গি নেতার খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা ভোরের কাগজকে বলেন, জামিনে থাকা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ডাটাবেস সংরক্ষণ করাসহ তাদের নজরদারির মধ্যে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে পুলিশ। যদিও কাজটি সহজসাধ্য নয়। এ ছাড়া আইন প্রয়োগের পাশাপাশি আমরা সামাজিক সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে সামাজিকভাবেই এই হুমকির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মনোনিবেশ করছি। জড়িতদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে আমরা সংশ্লিষ্টদের পরিবারের সঙ্গেও কাজ করছি। এ লক্ষ্যে আমরা বিশিষ্ট ধর্মীয় পণ্ডিতদের সহায়তায় কাউন্টার ন্যারেটিভ গড়ে তুলছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App