×

জাতীয়

আইন কঠোর হলেও সড়কে ফিরছে না শৃঙ্খলা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০১৯, ০২:০৬ পিএম

আইন কঠোর হলেও সড়কে ফিরছে না শৃঙ্খলা

দেশের প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম সড়ক পথে নিয়মিত ঘটছে দুর্ঘটনা। বাসের ধাক্কায় রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে রমিজ উদ্দিন কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুল করিম রাজীব ও দিয়া খানম মিমের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে নিরাপদ সড়কের দাবীতে শুরু হওয়া ছাত্র বিক্ষোভ সাড়া তুলেছে পুরো বাংলাদেশে। কিন্তু তার পরও সড়কে ফেরানো যাচ্ছে না শৃঙ্খলা। বেপরোয়া হয়ে উঠছে যানবাহন, কেড়ে নিচ্ছে একের পর এক তাজা প্রাণ। আবার কেউ কেউ আজীবন পঙ্গুত্ব বরণ করে নিচ্ছেন। সড়কে শৃঙ্খলা না থাকায় হরহামেশা দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়কে লেন মেনে চলে না কোন গাড়ি, আছে শুধু প্রতিযোগিতা করে বাস চালানোর দৃশ্য।

সেই বহুল আলোচিত বাসচাপায় রাজীব-দিয়ার মৃত্যু মামলার রায়ে জাবালে নূর পরিবহনের চালকসহ তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

গত ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট ২০১৮ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের গণবিক্ষোভ আন্দোলনের পর শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকার নিয়েছে নানা উদ্যোগ। যদিও দায়সারা এসব উদ্যোগের বেশিরভাগই আলোর মুখ দেখেনি। ফলে এখনো সড়কে আগের বিশৃঙ্খলাই বিরাজ করছে। কোন কোন ক্ষেত্রে তা আরো বেড়েছে। তাই সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, কবে নাগাদ শৃঙ্খলা ফিরবে ঢাকার সড়কে।

সড়কে বিশৃঙ্খলার জন্য দুই বাসের রেষারেষিতে চাপা পড়ে হাত হারিয়েছে সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাজীব হোসেন। তিনি কয়েকদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে চিরতরে বিদায় নিয়েছেন। এর তিন দিন না যেতেই বাসচাপায় মেরুদ ভেঙে গেছে গৃহিণী আয়েশা খাতুনের। আর কখনোই দাঁড়াতে পারবেন না তিনি। এমন দুর্ঘটনার পরেও থেমে নেই বাস চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানো। শুধু রাজীব বা আয়েশা নন, প্রতিদিন রাজধানীতে এভাবে কাউকে না কাউকে দুর্ঘটনায় পড়তে হচ্ছে। এতে অনেকই পঙ্গুত্ব, দুর্বিষহ জীবন যাপন করতে হচ্ছে। পরিবারকে বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে চলে যেতে হচ্ছে না ফেরার দেশে। আর তা ঘটছে বাস বেপরোয়া চালানোর কারণেই।

অনেকে মনে করেন, ড্রাইভারদের খামখেয়ালীর কারণেই সড়কে শতকরা ৮০ ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে। তারা প্রায়ই অতিদ্রুত গতিতে গাড়ি চালায়। ফলে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। তে গাড়িটি রাস্তার পাশে খাদে গিয়ে পড়ে, অথবা সামনে রাস্তার পাশে দাঁড়ানো কোন গাড়িকে ধাক্কা দেয় অথবা বিপরিত দিক থেকে আসা কোন গাড়ির সাথে এই গাড়ির সামনা সামনি সংঘর্ষ হয়। এর ফলে বহুলোক হতাহত হয় এবং মানুষের রক্তে লাল হয়ে যায় পিচঢালা কালো রাস্তা। এভাবে ড্রাইভারদের খামখেয়ালীর কারণে অকালে ঝরে যায় বহু তাজা প্রাণ। অথচ ড্রাইভাররা সতর্ক হলে এ ধরনের দুর্ঘটনায় বহুলোকের জীবন বিনাশ হতনা। আবার অদক্ষ ড্রাইভার এবং ফিটনেস বিহীন গাড়ির কারণেও সড়কে বহু দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।

পুলিশ এবং বিআরটিএর অসৎ কর্মচারীদের ঘুষ দিয়ে অদক্ষ ড্রাইভাররা ভুঁয়া লাইসেন্স দিয়ে গাড়ি চালায়। যার ফলে অহরহ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে এবং বহুলোকের প্রাণহানী ঘটে। সঠিক নজরদারীর অভাবে সড়কপথে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল করে এবং এসব ফিটনেসবিহীন গাড়ি প্রায়ই দুর্ঘটনা কবলিত হয়।

সড়কপথে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হলে এবং সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস করতে হলে দুর্ঘটনার কারণগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো দূর করতে হবে। বেপরওয়া ড্রাইভারদের নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে সড়ক দুর্ঘটনার শাস্তি বৃদ্ধি করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনার শাস্তি বৃদ্ধি না করলে বেপরওয়া ড্রাইভাররা ইচ্ছামত দুর্ঘটনা ঘটিয়ে মানুষ মারবে। সরকার ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ পাশ করেছেন। কিন্তু সড়কে শৃঙ্খলা স্থাপনের জন্য এবং সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসের জন্য আইনটি মোটেই যথেষ্ট নয়। অব্যাহত সড়ক দুর্ঘটনা এরই বাস্তব প্রমাণ। তাই অবিলম্বে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ সংশোধন করে সড়ক দুর্ঘটনার শাস্তি আরো বৃদ্ধি করতে হবে। সাথে সাথে সড়কপথে নজরধারী বৃদ্ধি করতে হবে এবং সড়ক পরিবহন আইন পুরোপুরি বাস্তবায়িত করতে হবে। সড়কে যাতে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল করতে না পারে এবং ভূয়া লাইসেন্সধারী অদক্ষ ড্রাইভাররা যাতে সড়কে গাড়ি চালাতে না পারে এর বিহীত ব্যবস্থা করতে হবে। বিআরটিএর অসাধু কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং বিআরটি-এর অফিসকে দুর্নীতি ও দালালমুক্ত করতে হবে।

অব্যাহত সড়ক দুর্ঘটনায় জনগণ আতঙ্কিত। তাই জনগণের প্রশ্ন-আর কত রক্ত ঝরলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে এবং সড়ক নিরাপদ হবে? নিরাপদ সড়ক এখন দেশের আপামর জনগণের দাবী। সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদের মত সড়ক দুর্ঘটনাও আমাদের জাতীয় সমস্যা। তাই সরকারের উচিত অনতি বিলম্বে কঠোর আইন প্রয়োগ করে সড়ক পথে আইন-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা এবং সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস করা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App