×

জাতীয়

বঙ্গোপসাগরে নির্বিচারে হাঙর মারছে জেলেরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০১৯, ০২:২১ পিএম

বঙ্গোপসাগরে নির্বিচারে হাঙর মারছে জেলেরা

বাংলাদেশের উপকূলে জেলেরা যেভাবে নির্বিচারে হাঙর ধরছে তাতে হুমকির মুখে পড়ে গেছে এই প্রজাতি। এ কথা বলছেন মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও গবেষকরা। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী হাঙর ধরা নিষিদ্ধ হলেও গত কয়েকদিনে বরগুনা এবং ভোলায় জেলেদের কাছ থেকে বেশ কিছু হাঙর জব্দ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাইদুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, বঙ্গোপসাগর থেকে জেলেরা যেসব হাঙর ধরে সেগুলোর পাখা আলাদা করে বিদেশে পাঠানো হয়। বিষয়টি বেশ উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যাচ্ছে শুধু পাখা বা ডানা সংগ্রহের জন্য পুরো মাছ মেরে ফেলা হচ্ছে, পুরোটা ব্যবহার হচ্ছে না। বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তরের আওতাধীন সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের পরিচালক শরীফ উদ্দিন বলেন, হাঙর ধরা এবং বিদেশে পাঠানো অবৈধ। পুরো কাজটি গোপনে করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে হাঙর কোথায় যায়? চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাইদুর রহমান বলেন, চীন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে হাঙরের পাখা দিয়ে এক ধরনের স্যুপ তৈরি করা হয়। বাংলাদেশ থেকে এসব হাঙরের পাখা চীন, হংকং, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুরে যায়। হাঙর ধরার পর পাখনা আলাদা করে দেহের বাকি অংশ ফেলে দেয়া হয় সাগরে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের মানুষ হাঙর মাছ খায় না। তা ছাড়া বিদেশে হাঙরের চেয়ে তার পাখার চাহিদাই বেশি, জানান অধ্যাপক রহমান। জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়াইল্ডএইড। সংস্থাটি জানায়, সম্প্রতি হাঙরের পাখা দিয়ে তৈরি স্যুপ খাবার প্রবণতা কমে এলেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এটি বেশ জনপ্রিয়। সংস্থাটি তাদের এক প্রতিবেদনে জানায়, প্রতি বছর ১০ কোটি হাঙর শিকার করা হয়। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে সাত কোটি হাঙর শিকার করা হয় শুধু তাদের পাখা সংগ্রহ করার জন্য।

কিন্তু বাংলাদেশের জেলেরা কেন হাঙর ধরছে এভাবে? বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের উপকূলে এখন দামি মাছ ধরার পরিমাণ কমে যাচ্ছে। যেমন রূপচাঁদা, লাইক্ষ্যা, বড় পোয়া মাছ আশঙ্কাজনক হারে কমছে। ফলে জেলেরা হাঙর ধরার দিকে ঝুঁকছেন। তারা বিকল্প জিনিস খুঁজছেন। কিছু না কিছু তো তাদের করতে হবে। কক্সবাজারের একজন মৎস্যজীবী জানান, সাধারণ মাছ ধরার চেয়ে হাঙর ধরা বেশি লাভজনক। মাছ সবসময় সমানভাবে ধরা পড়ে না। সে জন্য অনেকে মাছ না পেলে হাঙর ধরে। আবার অনেকে আছে হাঙর ধরার জন্যই সাগরে যায়, বলেন ওই জেলে।

সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের পরিচালক শরীফ উদ্দিন বলেন, বঙ্গোপসাগরে হাঙর যে হুমকির মুখে রয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। একটি মাছ লক্ষ লক্ষ ডিম দেয়। কিন্তু হাঙর কোনো ডিম দেয় না, তারা বাচ্চা প্রসব করে। স্বাভাবিকভাবেই হাঙরের সংখ্যা কম হয়।

এভাবে হাঙর ধরতে থাকলে এটি দ্রুতই শেষ হয়ে যাবে। তিনি জানান, বাংলাদেশের জেলেরা ২০০ থেকে ২৫০ কেজি পর্যন্ত ওজনের হাঙর ধরে। এমন প্রমাণও মিলেছে- হাঙরের পাখা আলাদা করার পর বাকি অংশ শুকিয়ে অনেক সময় শুঁটকি তৈরি করা হয়। এ ছাড়া উপজাতীয়দের কাছে শুকনো হাঙরের চাহিদা রয়েছে বলে জানান মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App