×

সারাদেশ

নদী ভাঙনে রাজা থেকে পথের ভিখারী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০১৯, ০২:২৮ পিএম

নদী ভাঙনে রাজা থেকে পথের ভিখারী
যমুনার ভাঙ্গনের কারণে ১৯বার বাড়ি সড়াইছি। এবার বাড়ি হরাইয়া ঘর তোলার মত জমি নাই। একটা সময় প্রামানিক গোষ্টির ছিল প্রচুর জমি গোলা ভরা ধান গোয়ালঘর ভর্তি গরু পুকুর ভরা মাছ ছিলো তখন রাজার হালতে চলতাম এখন শুধুই স্মৃতি নদী ভাঙনে সব হারিয়ে এখন পথের ভিখারী। নদীর ধারে দাঁড়িয়ে থাকা আবু বক্কর সিদ্দিক ইয়াছমিন প্রামানিক এভাবেই অতীতের স্মৃতি বর্ণনা দিয়েছেন এই প্রতিবেদকের কাছে। সরে জমিনে দেখা গেছে, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে এই শুস্ক মৌসুমেও যমুনা নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। নদী ভাঙনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ফসলী জমি, বসত বাড়িসহ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। ফলে হতাশায় পড়েছেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা। চিকাজানী এলাকার প্রাক্তন শিক্ষক ডাঃ ওয়াজেদ আলী বলেন, ‘যমুনার ভাঙন এখন সময় আর অসময় লাগে না বর্ষাতেও ভাঙে শুষ্ক শীত মৌসুমেও ভাঙ্গছে. নদীর সামনের চরের জায়গায় হুকনা মৌসুমে বেশী ভাঙছে চরটা কাইটা দিলে ভাঙন হইতনা’। এভাবেই কথা বলছিলেন তিনি। খোলাবাড়ী স্কুল শিক্ষক হাফিজুর রহমান ও গ্রামবাসী মিস্টার আলী বলেন. ‘হামনের জেগে উঠা চরটা কাইটা দিলে ভাঙ্গন হইতো না’। খোলাবাড়ীর আনোয়ার হোসেন বলেন, নদী ভাঙনে রক্ষা জিও ব্যাগ ফেলা হইছে উপর দিক থেকে নিচে ফেলা হয় নাই জিও ব্যাগ গুলো সঠিক নিয়মে ফেলা হয় নাই। দেওয়ানগঞ্জ চিকাজানী ইউনিয়ন খোলাবাড়ী যমুনা নদীর অব্যাহত ভাঙনে প্রতি নিয়ত দীর্ঘ হচ্ছে বাস্তহারা মানুষের সংখ্যা। এসময় নদী ভাঙনের কথা না অথচ শুস্ক শীত মৌসুম অগ্রহায়ন মাসে আরো বৃদ্ধি পেয়েছে নদী ভাঙন। ভাঙনের সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে এখানকার মানুষের দূর্দশা। নদী ভাঙনে খোলাবাড়ী নবনির্মিত নৌ থানা তিনতলা ভবন নদী থেকে মাত্র দেড়-দুইশত গজ দূরে রয়েছে। হুমকির মুখে ভবনটি। ইতিমধ্যেই ১৯৩৬ সালে স্থাপিত খোলাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১৯৩৪ সালে তৎকালীন মজলুম জননেতা মওলানা ভাষানীর স্থাপিত খোলাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়সহ মসজিদ মাদ্রাসা ঐতিহ্যবাহী বাজার পাকা সড়ক নদী গর্ভে বিলীণ হয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়ে সহায় সম্বল হাড়িয়ে বিভিন্ন সেতু সড়ক উচু স্থানসহ নদী ভাঙ্গা মানুষ আশ্রয় নিয়েছে স্বজনদের বাড়িতে। অনেকে এলাকার মায়া ত্যাগ করে উত্তরাঞ্চলের রংপুর দিনাজপুরসহ বিভিন্ন শহরে চলে গেছেন। শীর্ঘ্রই নদী ভাঙন রোধে নদীর মধ্যে স্থানে জেগে উঠা চরটি ড্রেজিং না করছে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে আরও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দেওয়ানগঞ্জ রাজিবপুর সড়কের কাজলাপাড়া গ্রাম টাকিমারী মন্ডলবাজারসহ চিকাজানীর বিস্তৃর্ণ ভূ-খণ্ড। অব্যাহত ভাঙনের কারণে হুমকির মুখে নবনির্মিত নৌথানা ভবনটি। বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে খোলাবাড়ী ভাঙ্গন কবলিত এলাকা সরজমিন ঘুরে নদী ভাঙন মানুষের সঙ্গে আলাপ করে জানান যায়, যমুনার পানি যমুনার পাড় থেকে অন্তত্ব ৩০ফুট নিচে। তবে প্রচণ্ড শ্রোত পানির গভীরতাও বেশী থাকায় নদীর পাড় ফাটল ধরে দেবে যাচ্ছে। ঘূর্ণয়মান পানির পাকে ফেনার সৃষ্টি হচ্ছে। খোলাবাড়ীর শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭’শ শিক্ষার্থী হাটের খোলা সেডঘরে শীতের মধ্যে কষ্ট করে লেখাপড়া করছে। খোলাবাড়ী থেকে উত্তর দিকে গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি এরেন্ডাবাড়ী। এখানে যমুনা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদের মিলনস্থল। যমুনার পানি উজান থেকে নেমে এসে দেওয়ানগঞ্জ চিকাজান চুকাইবাড়ী হয়ে ভাটি এলাকার দিকে যাচ্ছে। অসময়ের নদী ভাঙনের কারণ হচ্ছে যমুনার পশ্চিম পাড়ে প্রায় দেড় কিলোমিটার জেগে ওঠা চরে ক্যানেলের মুখ শুকিয়ে যায়া পূর্ব পাড় দিয়ে প্রচণ্ড স্রুতে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর গভীরতা বেশী থাকায় পূর্ব পাড় খোলাবাড়ী ভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে। পশ্চিমাংশে নদীর মুখ শুকিয়ে যাওয়ায় ভারতীয় তিনটি জাহান আটকা পড়েছে বলে স্থানীয় লোকজন জানান। নদী ভাঙা এলাকার ইউপি সদস্য আ. মান্নান জানান, এখান থেকে যমুনা নদী প্রায় ১৫কিলোমিটার পশ্চিমে ছিল। এখন খোলাবাড়ী পুরাটায় নদী গর্ভে। ১,২,৩নং ওয়ার্ড নদী গর্ভে বিলীন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাইদ জানান, শুস্ক মৌসুমে এধরণের ভাঙ্গন এ্যাবসেশনাল। নদীর ভাঙনের ৬কিলোমিটার এলাকা স্থায়ী ভাবে তীর সংরক্ষন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে কারিগরি কাজও শুরু হয়েছে। আগামী সপ্তাহে বরাদ্দ পেলে ট্রেন্ডার করা হতে পারে। উপজেলা চেয়ারম্যান সোলায়মান হোসেন বলেন. ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংসদ সদস্যের সাথে কথা হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রনালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ জানান, ভাঙনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে ভাঙনের বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। খোলাবাড়ী রক্ষায় সব ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App