×

জাতীয়

ভুয়া এনজিও’র এমডি অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে উধাও

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০১৯, ০৬:৪৩ পিএম

ভুয়া এনজিও’র এমডি অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে উধাও

এনজিওর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল বারিক

ভুয়া এনজিও’র এমডি অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে উধাও

মাঠ কর্মী ও ভুক্তভোগীরা

ভুয়া এনজিও’র এমডি অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে উধাও

টাকার রশিদ

যশোরের চৌগাছায় অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন এক এনজিও’র মালিক, এমনটাই অভিযোগ করেছে এনজিওর কর্মকর্তা, কর্মচারি এবং মাঠ কর্মীরা। উপজেলার ‘বন্যা ইসলামি ডেভলোপমেন্ট’ নামে নিবন্ধন বিহীন এক এনজিও’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল বারিকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করা হয়।

এ বিষয়ে এনজিওর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল বারিক চেয়ারম্যান জুলেখা বেগম, প্রকল্প ম্যানেজার জাহিদুল ইসলাম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, এরিয়া ম্যানেজার আব্দুল আলেক, সহকারি প্রকল্প ম্যানেজার মামুন উদ্দিন, শাখা ম্যানেজার হাবিব, বিউটি খাতুন ও তারেকের বিরুদ্ধে চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই এনজিও’র মাঠ কর্মী ফেরদৌসি।

অভিযোগপত্রে তিনি ওই এনজিও’র প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীসহ মোট ২১ জনের পক্ষে নিজে স্বাক্ষর করেছেন। ২৬ নভেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বিষয়টি আমলে নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অভিযোগটি চৌগাছা থানার ওসি বরাবর পাঠিয়েছেন।

২৫ নভেম্বর লিখিত অভিযোগে ফেরদৌসি জানিয়েছেন, বন্যা ইসলামি ডেভলোপমেন্ট নামের ওই এনজিওটির তাদের কাছ থেকে চাকরি দেওয়া, সঞ্চয় এবং বেতন বাবদ মোট ১৪,৬২,৫০০/ টাকা জালিয়াতি করেছে।

[caption id="attachment_181476" align="alignnone" width="700"] মাঠ কর্মী ও ভুক্তভোগীরা[/caption] এ বিষয়ে চৌগাছা উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা নির্মল কান্তি কর্মকার জানিয়েছেন, বন্যা ইসলামি ডেভলোপমেন্ট নামে একটি এনজিও তাদের নামের অনুমোদনের জন্য আমাদের কাছে দরখস্ত করে। আমরা সেটি জেলা অফিসে পাঠিয়েছিলাম। সেখানে তাদের নামের ছাড়পত্র মিললেও এনজিওটির নিবন্ধন হয়নি।

অভিযোগকারি ও ভুক্তভোগীরা জানান,তারা প্রায় চার মাস ধরে চৌগাছার ‘বন্যা ইসলামি ডেভলোপমেন্ট’ নামক এক এনজিওটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল বারিককে সাড়ে ১৪ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা করে দিয়ে নিয়োগ। চাকরি দেয়ার জন্য আব্দুল বারিক ‘বন্যা ইসলামি ডেভলোপমেন্টের রশিদের মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করেছেন। যেই রশিদের ক্রমিক সংখ্যা, গ্রহনকারি, ম্যানেজার এবং প্রদানকারির স্বাক্ষর আছে।

গ্রামের গরীব মেধাবী শিক্ষাার্থী ও অসহায় মানুষদেরকে ইসলামি পন্থায় অল্প সঞ্চয়ে বিভিন্নভাবে সহায়তা প্রদানের জন্য এই এনজিও কাজ করছে বলেই তাদেরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। চাকরি পেয়ে তারা সকলেই বিভিন্ন গ্রামের সাধারন অসহায় মানুষদেরকে বুঝিয়ে ‘বন্যা ইসলামি ডেভেলোপমেন্ট’ লেখা একটি জমা বইয়ের মাধ্যমে সঞ্চয় সংগ্রহ করেছেন। সেই সঞ্চয়ের টাকা তারা এনজিও’র সহকারি প্রকল্প ম্যানেজার মামুন উদ্দিন ও আবদুল বারিকের ভাই তারেকের কাছে জমা দিতেন। কখনোবা সেই টাকা বারিক নিজেই নিয়েছেন।

কিন্তু তিন থেকে চার মাস পার হলেও এই সকল কর্মকর্তা কর্মচারিরা কোন বেতন পাননি। সেখানে কর্মরত প্রকল্প ম্যানেজার জাহিদুল ইসলাম ২ লাখ, ফিল্ড অফিসার দেলোয়ার হোসেন ৭০ হাজার, গোলাম কবির ৬৪ হাজার, জুই, ফেদৌসি ও তৌহিদুজ্জামান ৩ লাখ, শাহানাজ খাতুন ও টিংকু ২৫ হাজার, নাসরিন খাতুন ও সুমন ৪০ হাজার, সুমন্ত ও শাহ আলম ৯৮ হাজার, মাসুদ আরাফাত ও রাকিবুল ৫০ হাজার করে সঞ্চয়ের টাকা জমা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়াও আরো অনেকে আছে এমন পরিস্থিতির শিকার।

[caption id="attachment_181485" align="alignnone" width="700"] টাকার রশিদ[/caption]

অন্যদিকে যশোরের মনিরামপু, রাজগঞ্জ ও কেশবপুরেও একই এনজিওর শাখা অফিস আছে। সেখান থেকেও চাকরি দেওয়ার নামে প্রায় ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই প্রতারক বারিক। এদিকে মাস পার হলেও বেতন না হওয়ায় তারা বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে দিন পার করতে থাকেন।

চৌগাছা থানার ওসি রিফাত খান রাজিব বলেন, আমি অভিযোগের কাগজপত্র পেয়েছি তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বন্যা ইসলামি ডেভলোপমেন্ট’র প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, এনজিওটি'র নিবন্ধন আছে কিনা আমার জানা নেই। বারিক আমাকে ২০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি দিয়েছিল। পরে আমি কাগজপত্র এবং এই এনজিওর কাজ সম্পর্কে জানতে চাইলে সে আমাকে শোকজ করে।

মনিরামপুর, রাজগঞ্জ ও কেশবপুরের এরিয়ার ম্যানেজার রেজা জানান, গত ২ নভেম্বর আমি চাকরিতে নিয়োগ পেয়েছি। ২৬ নভেম্বর থেকে আমাদের অফিস বন্ধ। আমরা যারা টাকা দিয়ে চাকরি নিয়েছি তাদের কেউই আর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল বারিক বা অন্য কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না।

এ বিষয়ে এনজিওটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে কোন ভাবেই তা সম্ভব হয়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App