×

সারাদেশ

দালাল চক্রের খপ্পরে বরিশাল বিআরটিএ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০১৯, ০৩:৩৯ পিএম

দালাল চক্রের খপ্পরে বরিশাল বিআরটিএ
নতুন সড়ক আইনের কঠোর শাস্তি ও জরিমানা থেকে রেহাই পেতে বিভিন্ন ধরণের গাড়ির মালিক ও চালকরা নিবন্ধনসহ বিভিন্ন সেবা নিতে হন্ন হয়ে ধর্না দিচ্ছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) বরিশাল কার্যালয়ে। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে দালালচক্র। এতে করে প্রতিনিয়ত এ কার্যালয়ে আসা সেবা প্রত্যাশিরা পরছেন চরম ভোগান্তিতে। ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট দেওয়া, লাইসেন্স নবায়ন, গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন, ডিজিটাল নাম্বার প্লেট দেওয়াসহ নানা সেবায় দালালদের সাথে কার্যালয়ের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন সেবা প্রত্যাশিরা। জানা গেছে, নুরু, আনসার ফারুক, জলিল ওরফে কাউয়া জলিল ও জাকির বিআরটিএ কার্যালয়ে গড়ে তুলেছেন বড় একটি সিন্ডিকেট। দপ্তরটিতে সীমিত জনবল ও অসাধু কর্তাব্যক্তিদের সুবাধে দালালরা কায়েম করেছে ছায়া বিআরটিএ। যে কারণে কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন না সেবা গ্রহীতারা। ভূক্তভোগিরা অভিযোগ করেন, দালালদের লেখনির ফরম পেলেই সহসাই আবেদন জমা নেয়া হয় অন্যথায় ব্যস্ততা ও দুর্ব্যবহারে করে সরিয়ে দেয়া হয় আবেদনকারীদের। সূত্রমতে, সরকারী ফি’র বাহিরে হাতিয়ে নেয়া হয় ৪/৫ হাজার টাকা। অন্যথায় ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নবায়ন ও শিক্ষানবিস চালক লাইসেন্সসহ নানাবিধ কাজ করতে গেলে ঘুরতে হয় মাসের পর মাস। সূত্রে আরও জানা গেছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি প্রথমে লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি ১ ক্যাটাগরি-৩৪৫ টাকা এবং ২ ক্যাটাগরি-৫১৮ টাকা। অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন ফি মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিনের মধ্যে হলে ২৪২৭ টাকা ও মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিন পরে প্রতিবছর ২৩০ টাকা জরিমানা। আর পেশাদার লাইসেন্স নবায়নের জন্য পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হওয়ার পর নির্ধারিত ফি মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিনের মধ্যে হলে ১৫৬৫ টাকা ও মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিন পরে জরিমানাসহ প্রতিবছর ২৩০ টাকা। লাইসেন্স হারিয়ে গেলে তা পুনরায় কপি পাওয়ার জন্য নির্ধারিত ফি আটশ’ ৭৫ টাকা। স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি (পেশাদার ১৬৭৯ টাকা ও অপেশাদার ২৫৪২টাকা)। অপরদিকে গাড়ির ফিটনেস ও রেজিস্ট্রেশন পেতেও দালালদের ৫/৬ হাজার টাকা দিতে হয়। এ বিষয়ে দালাল জাকির হোসেন বলেন, আমরা যে টাকাটা নেই তা পরিশ্রম করেই নিয়ে থাকি। সত্যায়ন ফরম পুরণ ব্যাংকে টাকা জমাসহ অন্যান্য কাজ করি। কিন্তু অফিসকেতো প্রতিটি ফরমের জন্য ২/৩ হাজার টাকা দিতে হয়। আমরা মাত্র ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা পাই। অপরদিকে বিআরটিএ দপ্তরে দালালদের দৌরাত্ম ঠেকাতে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে নগরীর দুদক দপ্তর থেকে অভিযান পরিচালনা করেছিল কিন্তু এরপর ফের মাথাচারা দিয়ে উঠেছে দালালদের নেটওয়ার্ক। এ ব্যাপারে বরিশাল দুদকের উপ-পরিচালক দেবব্রত মন্ডল বলেন, দুর্নীতিগ্রস্থ দপ্তরগুলোতে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হবে। এছাড়া আমাদের কাছে অভিযোগ করারও যথেষ্ট মাধ্যম রয়েছে। যে কেউ ১০৬ নাম্বারে কল করে অভিযোগ জানাতে পারেন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রাইভিং লাইসেন্স পেতে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩/৪শ আবেদন জমা হয় এবং এরমধ্যে বেশিরভাগই মোটরসাইকেল ও থ্রি হুইলার। আর বরিশালে মোট নিবন্ধিত যানবাহন রয়েছে ৪৭ হাজার ৯৫২টি এরমধ্যে ৩৬ হাজার ৩৮৪জন চালকের লাইসেন্স রয়েছে। লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারী সাব্বির হোসেন বলেন, বিআরটিএ অফিসে ঢুকতে কমপক্ষে আধাঘন্টা সিরিয়ালে থাকতে হয়। এরপর ঢুকতে পারলেও কোন টেবিলে গিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করবো তারও কোন উপায় থাকেনা। কারণ প্রতিটি টেবিলের সামনে আমার মতো কমপক্ষে ১০/১২ জন দাঁড়িয়ে অপেক্ষমান থাকে সেবা নেয়ার জন্য। যারা প্রত্যেকে সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করা সত্বেও মাসের পর মাস অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু দিন পার হলেও তারা পাচ্ছেনা কাঙ্খিত সেবা। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে ধর্না দিলে তারা জানায়, মোবাইলে ম্যাসেজ পাবেন, অথচ মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও মোবাইলে ম্যাসেজ আসেনা। আনোয়ার হোসেন নামের এক সেবা প্রত্যাশী বলেন, আমি ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে বিআরটিতে আসলে লার্নার করতে বলে। এরপর লার্নার (শিক্ষানবিস) লাইসেন্স করি। বর্তমানে যা মেয়াদোর্ত্তীন কিন্তু আমার এক প্রতিবেশী লাইসেন্স করাতে গিয়ে দালালের সরান্নপন্ন হওয়ার পর সে লার্নার ছাড়াই হালকা মটরযান লাইসেন্স পেয়েছেন। বরিশাল বিআরটিএ দপ্তরে দালাল নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠার ব্যাপারে সহকারী পরিচালক মোঃ আতিক হোসেন বলেন, আমরা দালালদের চিনিনা, তবে পরিচিত অনেকেই আসে সুবিধা নেয়ার জন্য এবং সেক্ষেত্রেও আমরা সিস্টেম ভঙ্গ করিনা। তিনি আরো বলেন, আমাদের জনবল সংকট রয়েছে, যেকারণে অনেক সময় যথাযথ নিয়ম বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। যেমন ২০টি পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছে ১২ জন এবং শুন্যপদ রয়েছে আটজন। পাশাপাশি অফিস কক্ষও অপর্যাপ্ত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App