×

জাতীয়

দক্ষিণাঞ্চলে জোরদার হচ্ছে মাদকবিরোধী অভিযান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০১৯, ১২:২২ পিএম

দক্ষিণাঞ্চলে জোরদার হচ্ছে মাদকবিরোধী অভিযান
দক্ষিণাঞ্চল তথা বরিশাল বিভাগে ক্রমেই জোরদার হচ্ছে মাদকবিরোধী অভিযান। ফলে সময়ের সাথে সাথে বাড়ছে মাদক সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তার সংখ্যা। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আলোর পথে আসার সুযোগ পাচ্ছে মাদকসেবী ও বিক্রেতারা। বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত দুইবছরে আগের দুইবছরের চেয়ে মাদকবিরোধী অভিযান, মামলা ও গ্রেপ্তারের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৭ সালের আগস্ট মাস থেকে ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত যেখানে বরিশাল রেঞ্জের ছয় জেলায় মাদক মামলা হয়েছে আট হাজার ৬৩৮টি, সেখানে এর আগের দুইবছরে (২০১৫-২০১৭) মামলার সংখ্যা ছিল তিন হাজার ৯০১টি। আবার মাদক সংশ্লিষ্ট মামলায় যেখানে গত দুইবছরে গ্রেপ্তার হয়েছে ১১ হাজার ৬৭৫ জন, সেখানে আগের দুইবছরে গ্রেপ্তার হয়েছে পাঁচ হাজার ৭৮০ জন। তবে এ দুইবছরে অর্থাৎ রেঞ্জ ডিআইজি মোঃ শফিকুল ইসলামের সময়েই সর্বপ্রথম গোটা দেশের মধ্যে বরিশাল অঞ্চলে চালু হয় মাদকসেবী ও মাদক বিক্রেতাদের আলোর পথে ফিরে আসার সুযোগ। যে সুযোগের আওতায় কোনো মাদকসেবী বা বিক্রেতা সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে চাইলে তাকে সে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের চিকিৎসা, মামলা পরিচালনা ও পুনর্বাসনের সহায়তা করা হচ্ছে। তবে যদি কেউ সুস্থ জীবনে ফিরে এসে আবার মাদকের সাথে যুক্ত হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি সুনিশ্চিত করা হয়েছে। রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, এখন পর্যন্ত রেঞ্জের ছয় জেলায় প্রায় ১৪০০ মাদকসেবী ও বিক্রেতা সুস্থ জীবনে ফিরে আসার প্রত্যয়ে পুলিশ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। যারমধ্যে এক হাজারের ওপরেই রয়েছেন মাদক বিক্রেতা। মোট আত্মসমর্পণকারীর এখন পর্যন্ত ৩৪৩ জনকে চিকিৎসার জন্য মাদক নিরাময় কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। এরইমধ্যে চিকিৎসা শেষে নিজ বাড়িতে ফিরে এসেছেন ৩০৮জন এবং বাকি ৩৫ জন এখনও নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়া ৩৯০জন আত্মসমর্পণকারীকে পুনর্বাসন করা হয়েছে এবং ২৮১ জন আত্মসমর্পণকারীর লিগ্যাল এইডে মামলা পরিচালনার জন্য আবেদন গৃহীত হয়েছে। রেঞ্জের পুলিশ সুপাররা বলেন, বিট ও কমিউনিটি পুলিশিংয়ের কারণে এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিটি বাড়ির খোঁজ-খবর রাখতে পারছেন। ফলে মাদকসেবী ও বিক্রেতাদের বিষয়টিও পুলিশের নজরে সহজে চলে আসছে। মাদক ব্যবসা বরিশাল রেঞ্জ থেকে এখনো নির্মূল না হলেও মাদক বিক্রেতারা অনেকটাই কোনঠাসা বলে তারা দাবি করেন। সূত্রমতে, বরিশাল রেঞ্জের ছয় জেলায় বর্তমানে বিটের সংখ্যা ৪০১টি এবং কমিউনিটি পুলিশিংয়ের তিন হাজার ৬৬১টি (পুর্নগঠিতসহ) কমিটি এবং ২২৬টি স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিং কমিটি রয়েছে। সচেতন বরিশালবাসীর মতে, জেলার মধ্যে সর্বপ্রথম মাদক নিমূর্লে সফলতা এনেছিলেন গৌরনদী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফিরোজ কবির। মাত্র চারমাসের ব্যবধানে তিনি মাদক নিমূর্লে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেন। পরবর্তীতে তাকে এখান থেকে বদলী করে নেয়া হয়। বর্তমানে তিনি (ফিরোজ কবির) ভোলা পুলিশ সুপারে কার্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন। সূত্রমতে, বর্তমানে মাদকের রমরমা বাণিজ্য হচ্ছে উজিরপুর মডেল থানা এলাকায়। ওই উপজেলায় বর্তমানে ওসি শূণ্য রয়েছে। তাই শতভাগ মাদক নিমূর্লে সফলতা আনার জন্য উজিরপুর মডেল থানায় ওসি ফিরোজ কবিরকে পোস্টিং দেয়ার জন্য সচেতন বরিশালবাসী চৌকস রেঞ্জ ডিআইজি’র কাছে জোর দাবি করেছেন। এ ব্যাপারে বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, মাদক সমাজের অনেক বড় ক্ষতি করে। বিশেষ করে যুবসমাজ অর্থাৎ ভবিষ্যত প্রজন্ম এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে মাদক ব্যবসায়ীরা মামলা পরিচালনা, আর্থিক সংকটসহ নানা কারণে ইচ্ছে করলেও ওই পথ থেকে সরে আসতে পারেন না। তিনি আরও বলেন, আমরা মাদকসেবী ও বিক্রেতার আলোর পথে ফিরে আসার যে সুযোগ দিচ্ছি তাতে শুরু থেকেই ব্যাপক সাড়া পরেছে। এখন পর্যন্ত এক হাজার ৪৫০ জনের মতো মাদকসেবী ও বিক্রেতা আত্মসমর্পণ করেছেন। তাদের সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে নেয়ার জন্য আমরা কাজ করছি। তাদের চিকিৎসা দেয়া, পুনর্বাসন করা, পূরাতন মামলাগুলো পরিচালনার জন্য লিগ্যাল এইডের সহায়তা করার মতো কাজগুলো আমরা হাতে নিয়েছি। এ লক্ষ্যে স্বপ্ন তরী সমবায় সমিতির কাজ শুরু করা হয়েছে। ডিআইজি বলেন, শুধু আত্মসমর্পণ নয়; আমরা গত দুইবছরে মাদকবিরোধী প্রচুর অভিযান ও প্রচারণা চালিয়েছি। যার কারণে বিপুল পরিমান মাদক উদ্ধার ও মাদক সংশ্লিষ্টদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা চাই সকলের সহযোগিতায় সমাজ থেকে মাদক নির্মূল করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App