×

অর্থনীতি

খেলাপি ঋণ বেড়েছে দিনে ৪৩ কোটি টাকা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০১৯, ০৬:২৮ পিএম

কোনোভাবেই খেলাপি ঋণের লাগাম টানা যাচ্ছে না। সরকারের নানা উদ্যোগেও কমানো যাচ্ছে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির হার। মাত্র তিন মাসের (এপ্রিল-জুন) ব্যবধানে এ ঋণ বেড়েছে ৩ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। যা দিনে গড়ে প্রায় ৪৩ কোটি টাকার মতো।

বড় উদ্যোক্তাদের বেশিরভাগের মধ্যেই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করার প্রবণতা বাড়ছে। এতে নগদ আদায় কমে যাওয়ায় ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পাহাড় জমছে। বর্তমানে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। খেলাপি থাকছে মোট ঋণের ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশই। যা এ যাবতকালের মধ্যে রেকর্ড।

খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণ খুঁজতে গত জুনে মাঠ পর্যায়ে ব্যাংকের শাখা পরিদর্শন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গঠন করা হয় উচ্চ পর্যায়ের কমিটি। এ ব্যাপারে ৬ ব্যাংককে চিঠিও দেয়া হয়। তবে খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে ধরা তো যায়ইনি, বরং ঋণখেলাপির সংখ্যা বেড়ে গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভোরের কাগজকে বলেন, অনেক গ্রাহক গত বছরের ডিসেম্বরে ঋণ পুনঃতফসিল করেছিলেন। কিন্তু পরে নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করতে পারেননি। নতুন করে তারা খেলাপি হয়ে পড়ায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিতে এসে অনেকাংশে বেড়ে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা হলেও আগের প্রান্তিক অর্থাৎ জুন মাস শেষে এর পরিমাণ ছিল এক লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা। যা ওই সময়ের বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ২ শতাংশ সুবিধা দিয়ে ঋণ পুনঃতফসিলের যে সার্কুলার জারি করা হয়েছে, তা এখনো কার্যকর হয়নি। এর প্রভাব আগামী ডিসেম্বরে পাওয়া যাবে। সে সময় খেলাপি অনেক কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

তবে ব্যাংকাররা বলেন, সাধারণত বছরের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিক অর্থাৎ মার্চ ও জুনে খেলাপি ঋণ কিছুটা বাড়ে। এবার বাড়ল তৃতীয় প্রান্তিকেও। এর কারণ ডিসেম্বরে বছর শেষের হিসাব হয় বিধায় ব্যাংকগুলো পুনঃতফসিল বাড়িয়ে দেয়। ঋণ আদায়েও বাড়তি চেষ্টা থাকে। এর বাইরে অন্য কারণও রয়েছে। এ বছরে ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষিত ঋণ পরিশোধের বিশেষ সুবিধা নেয়ার জন্য অপেক্ষা করায় মোট খেলাপি ঋণ বেড়েছে। যদিও যেসব সুবিধা ঘোষণা করা হয়েছে তা এখনও কার্যকর হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। তিন মাসের ব্যবধানে বেসরকারি ৪০ ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ২ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা বেড়েছে। সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি ব্যাংকে মোট খেলাপি ঋণ ৫৪ হাজার ৫৪৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা, যা এসব ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের ৭ দশমিক শূন্য ৪৩ শতাংশ।

গত জুন শেষে বেসরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৫১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা, যা ওই সময়ে তাদের বিতরণ করা ঋণের ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ। সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯২২ কোটি টাকা, যা তাদের বিতরণ করা ঋণের ৩১ দশমিক ৫২ শতাংশ। এর আগের প্রান্তিকে এসব ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ছিল ৫৩ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা, যা ওই সময়ের বিতরণ করা ঋণের ৩১ দশমিক ৫৮ শতাংশ। সে হিসেবে গত মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা।

সেপ্টেম্বর শেষে বিদেশি ৯ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯১ কোটি ২৪ লাখ টাকা, যা ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের ৬ দশমিক ১ শতাংশ। গত জুন শেষে এসব ব্যাংকে মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২ হাজার ৫৭ কোটি ৬২ টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ৫ দশমিক ৬২ শতাংশ। আর দুই বিশেষায়িত ব্যাংকের (কৃষি ও রাকাব) খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৭০০ কোটি ৪১ লাখ টাকা, গত জুন শেষে যা ছিল ৪ হাজার ৬৯৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। ব্যাংক দুটির বিতরণ করা ঋণের ১৭ দশমিক ৮১ শতাংশ খেলাপি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App