×

মুক্তচিন্তা

নিশ্বাসে ছড়াচ্ছে মৃত্যু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০১৯, ০৮:৩৮ পিএম

সবাই বায়ুদূষণ সংক্রান্ত সব আইন মেনে চললে পরিবেশের এই বিপর্যয় অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। নয়তো এভাবে চলতে থাকলে আগামী ভবিষ্যতে আমরা যে বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হতে চলেছি তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

প্রতিদিনের মতো আজো ভার্সিটি থেকে বাসায় ফেরার পর নাকসহ সমস্ত মুখে অদ্ভুত জ্বালাপোড়া অনুভব করল মায়া। মুখে পানির ছিটা দেয়ার পরও মনে হচ্ছে ত্বকে রয়ে গেছে কালচে ভাব, পাশাপাশি র‌্যাশ। প্রতিনিয়ত রিকশায় চলাচল করে সে। বাস, ট্রাকসহ যানবাহনের কালো ধোঁয়া থেকে নিজেকে আর কতক্ষণই আড়াল করা যায়।

ঠিক তেমনিভাবে রাজধানীর একটি নামকরা কলেজে পড়ে আদি। নিয়মিত কলেজের বাসে আসা-যাওয়া করে এই কলেজছাত্র। তবুও কয়েক মাসের মাথায় শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগতে দেখা যায় তাকে। ডাক্তারের কাছে নেয়ার পর জানা যায়, সে ডাস্ট অ্যালার্জিতে আক্রান্ত, যা সময়মতো ট্রিটমেন্ট না করানো হলে বাড়াবাড়ি আকার ধারণ করতে পারে। উপরের দুটি উদাহরণের মাঝে নিশ্চয় অনেকেই নিজেদের সঙ্গে মিল খুঁজে পেয়েছেন এতক্ষণে। হ্যাঁ, এটাই বর্তমান সময়ের প্রায় প্রতিটি নাগরিকের সাধারণ চিত্র। এর কারণও আমরা সবাই কমবেশি জানি, বিশেষ করে যারা কাজের জায়গায় কিংবা স্কুল-কলেজে প্রতিনিয়ত ছোটাছুটি করেন প্রয়োজনের তাগিদে। বায়ুদূষণের হার যে কতটা বেড়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অন্তত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের বায়ুমান যাচাইবিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘এয়ার ভিজ্যুয়াল’-এর বায়ুমান সূচক (একিউআই)-বিষয়ক এক প্রতিবেদনের মাধ্যমে যখন জানা যায় যে, গত ২৪ নভেম্বর, রবিবারের ঢাকাই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহর, তখন আমাদের একটু সচেতন হতেই হয় এই ব্যাপারে। কারণ এই দিন বায়ুদূষণের মাত্রা ছিল ১৯৪, যা দূষণের সূচক অনুযায়ী অস্বাস্থ্যকর হিসেবে গণ্য করা হয়। এ ছাড়া গত সোমবার অর্থাৎ ২৫ নভেম্বর ঢাকার বায়ুমান সূচক ছিল ১৪৬ থেকে ১৫০ এবং পরিসংখ্যান অনুযায়ী এটিকেও খুবই অস্বাস্থ্যকর অবস্থা বলে মনে করা হয়। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বায়ুতে রোগের জীবাণু এবং ভুক্তভোগীর সংখ্যা। ২০১৪ সালের ডঐঙ-এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১২ সালে বায়ুদূষণে প্রায় ৭ মিলিয়ন মানুষ মারা গেছে।

এর কয়েকটি কারণের মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে ঝচগ (ঝঁংঢ়বহফবফ চধৎঃরপঁষধঃব গধঃঃবৎ), যা ধোঁয়া-ধুলা বা অ্যারোসল হতে পারে। যানবাহন বা জ্বালানি থেকে নির্গত ধোঁয়ার মধ্যে যে কার্বন কণা থাকে, তার আকৃতি মূলত ১০ ন্যানোমিটার থেকে কম হয়। এগুলো বাতাসে ভেসে থাকে এবং বাতাসের মধ্যে কয়েক সপ্তাহ থাকতেও পারে। এটি একটি বিশেষ কারণ। এ ছাড়া রাস্তাঘাটের বিভিন্ন জায়গায় অনিয়ন্ত্রিত খোঁড়াখুঁড়িও ইদানীং বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা রাস্তায় এসব অনিয়ন্ত্রিত কিংবা দীর্ঘমেয়াদি খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ না হলে রাজধানীর বায়ুদূষণ আরো বেড়ে যায়। কয়েকটি অনিয়ন্ত্রিত উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্দেশ্যে ঢাকা শহরের বেশিরভাগ রাস্তাই একযোগে খোঁড়া হচ্ছে এবং তাও দীর্ঘমেয়াদি আকারে। এতে বাতাসে ধূলিকণায় মিশে যাচ্ছে গ্যাসীয় মিশ্রণ, যার কারণে দূষণের মাত্রা বেড়ে চলেছে দিন দিন। যদিও রাস্তায় পানি দিয়ে ধুলা নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তার প্রয়োগ খুব একটা হচ্ছে না। দূষিত বায়ুতে ঝুঁকি বাড়ছে প্রতিটি মানুষের জীবন, বিশেষ করে শিশুদের। নবজাতকরাও সম্মুখীন হচ্ছে বিভিন্ন বায়ুবাহিত রোগের। এমনকি মাতৃগর্ভেও নিরাপদ নয় শিশুরা, যা একটি সমীক্ষায় জানা গেছে। দীর্ঘদিনের বায়ুদূষণের প্রভাবে গর্ভবতী একজন নারী আক্রান্ত হতে পারেন হৃদরোগ, ফুসফুসের সংক্রমণ-ক্যানসার, শ্বাসকষ্টজনিত রোগ (সিওপিডি), নিউমোনিয়াসহ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। এ ছাড়া একজন গর্ভবতী মা দূষিত বাতাসে শ্বাসগ্রহণ করলে তখন তা সন্তানের ফুসফুস ও মস্তিষ্কেও পৌঁছে যায়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে গর্ভের শিশুর মস্তিষ্ক ও ফুসফুসে সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু বায়ুদূষণের প্রতিকার তো আর একদিনে হবে না, আমাদের একটু সচেতনতাই পারে এই বায়ুদূষণের হার কমিয়ে আনতে। সবাই বায়ুদূষণ সংক্রান্ত সব আইন মেনে চললে পরিবেশের এই বিপর্যয় অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। নয়তো এভাবে চলতে থাকলে আগামী ভবিষ্যতে আমরা যে বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হতে চলেছি তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

শিক্ষার্থী, সেন্ট্রাল উইমেনস ইউনিভার্সিটি, ঢাকা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App