×

সারাদেশ

রাজবাড়ীতে তিন ফসলি জমিতে ইটভাটা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০১৯, ০১:৫৯ পিএম

রাজবাড়ীতে তিন ফসলি জমিতে ইটভাটা
রাজবাড়ীতে তিন ফসলি জমিতে ইটভাটা
রাজবাড়ীতে তিন ফসলি জমিতে ইটভাটা
রাজবাড়ীতে কৃষি ফসলি জমিকে অকৃষি দেখিয়ে একের পর এক ইট ভাটা গজিয়ে উঠছে। কে আর ডি ব্রিকস নামে এমনি একটি ইটভাটা স্থাপন করা হচ্ছে রাজবাড়ী সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের শাইলকাঠি গ্রামের তিন ফসলী মাঠে। ভাটা মালিকরা মানছেন না পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা। স্থানীয়দের দাবি রাজবাড়ী সদর কৃষি কর্মকর্তার যোগসাজসে তিন ফসলী জমিকে অনাবাদী দেখিয়ে ছাড়পত্র দেবার কারণেই ওই ভাটা নির্মাণকারীরা আরো বেশি উৎসাহিত হয়েছেন। সরজমিনে ওই মাঠে গিয়ে দেখাযায়, বিস্তৃর্ণ ফসলী মাঠ। ওই মাঠের বেশির ভাগ অংশে এখন বাতাসে নাচছে আধা পাকা ধান। তারপরও মাঠের একপাশে স্থাপন করা হচ্ছে ইট ভাটা। আর ওই ভাটায় তৈরী করা হচ্ছে ইট পড়ানোর চিমনী। সেই সাথে পুরোদমে তৈরী করা হচ্ছে মাটির ইট। যা তৈরীর পর রোদেও শোকানো হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, এই মাঠে প্রায় সারা বছরই বিভিন্ন ধরণের ফসলের আবাদ হয়। অথচ কোন রকম আইন না মেনে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ওই ফসলী জমিকে অকৃষি উল্লেখ করে ইট ভাটা তৈরী করছে। স্থানীয় বাসিন্দা ইব্রাহিম শেখ জানান, ওই ইট ভাটার এক প্লট পরেই তার ১ একর ১০ শতাংশ জমি রয়েছে। সে জমিতে তিনি প্রতি বছর তিনটি ফসল আবাদ ও উৎপাদন করছেন। তারা এখানে ভাটা তৈরী না করতে অনুরোধ করলেও শুনছেন না ওই প্রভাবশালীরা। এখানে ভাটা স্থাপন করা হলে তার জমি সহ পাশ্ববর্তী শত শত একর জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাবে। যে কারণে তারা পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলোতে এই ইটভাটা স্থাপন না করার জন্য অভিযোগও দায়ের করেছেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পত্র দিয়ে এই ইটভাটা তৈরী না করতে বলেছে। তবে কারও কথাই শুনছেন না, ভাটার মালিকরা। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সদর উপজেলা কৃষি অফিসার একজন দুর্ণীতিবাজ কর্মকর্তা। তিনি এই মাঠে তিন ফসলী জমি থাকার পরও তা অনাবাদী দেখিয়ে অর্থের বিনিময়ে ছাড়পত্র দিয়েছে। ফলে ভাটা স্থাপনকারীরা প্রাথমিকভাবে ওই ছাড়পত্র পেয়ে হয়েছেন উৎসাহিত। যদি কৃষি অফিসার ওই ছাড়পত্র না দিতেন তা হলে এখানে আর ভাটা স্থাপন করা হতো না। সেই সাথে তাদেরও ফসল উৎপাদন নিয়ে চিন্তার মধ্যে পরতে হতো না। কে আরডি ব্রিকস এর পরিচালক জিয়াউর রহমান শেখ জানান, তারা ইতোমধ্যে ওই ইট ভাটা নির্মাণের লক্ষে সদর উপজেলা কৃষি অফিসের ছাড়পত্র পয়েছেন। তবে এখনো পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন পান নি। কৃষি জমিকে অকৃষি উল্লেখ করে সদর উপজেলা কৃষি অফিসার যে ছাড়পত্র দিয়েছেন তাতে কোন অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, না কোন টাকা দিতে হয়নি। তাদের ২ একর ৩ শতাংশ জমি সাম্প্রতিক সময়ে চাষাবাদ করছিলেন না। এই কারণে তারা দশ জন মিলে সেখানে ইটভাটা তৈরী করছেন। তবে তারা পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে ভাটা স্থাপনের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন। ইতোমধ্যে পরিবেশ অধিপ্তরের লোকজন তাদের ভাটার স্থান পরিদর্শন করেছেন। তবে এখনো পাননি তারা কোন অনুমোদন। সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ বাহাউদ্দিন শেখ জানান, কোন অর্থেও বিনিময়ে নয়। সরজমিনে দেখে ওই জমি তিনি অকৃষি উল্লেখ করে ছাড়পত্র দিয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর ফরিদপুর কার্যালয়ে উপ-পরিচালক আসাদুর রহমান জানান, কে আরডি ব্রিকস এর পরিচালক জিয়াউর রহমান শেখকে ইতোমধ্যেই ওই ভাটা স্থাপন না করার জন্য পত্র দেয়া হয়েছে। সেই সাথে এই কার্যক্রম বন্ধ করা না হলে জেল ও জরিমানা করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। অপরদিকে, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ শাখা-১ এর সিনিয়র সহকারী সচিব আফরোজা বেগম পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর পাঠানো এক পত্রে বলেছেন, রাজবাড়ীর সুলতানপুরের শাইলকাঠিতে জিয়া শেখ, মোজা শেখ, সাঈদ মোল্লাসহ অন্যান্য লোকজন সরকারের নিয়ম নীতি ভঙ্গ করে তিন ফসলী কৃষি জমি নষ্ট করে বেআইনীভাবে ইটভাটা স্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার নির্দেশ দেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App