বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে অদম্য মাহমুদুন্নবী
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০১৯, ১১:৫০ এএম
কাজের স্বীকৃতি হিসেবে মাহমুদুন্নবীকে দেয়া হচ্ছে সম্মাননা
বিপদের ঝুঁকি নিয়ে এলাকার বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে বেড়ান মাহমুদুন্নবী। প্রায়ই তাকে শুনতে হয় কটু কথা। তাচ্ছিল্যের সুরে প্রায়ই অনেকে তার দিকে ছুড়ে দেয়, নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা কিংবা নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ায়ে আর কত দিন? এসব করে লাভ কী? এমন সব কথা। কয়েকবার মারও খেয়েছেন। কিন্তু কিছুতেই থামতে চান না মাহমুদুন্নবী। কোনো মেয়েকে যখন সে বাল্যবিয়ে নামক রাহু থেকে উদ্ধার করতে পারে তখন তার সব অপমান, কষ্ট হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। অনুভ‚ত হয় স্বর্গীয় এক সুখ।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নওগাঁর পত্নীতলার বরহট্টি গ্রামের মো. মাহমুদুন্নবী ৩৯টি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে ভূমিকা রেখেছেন। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে তার তৎপরতা দেখে ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর মাহমুদুন্নবীকে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) সম্মাননা স্মারক ও সাটিফিকেট দেয়।
২০১৫ সালে মাহমুদুন্নবী তখন নবম শ্রেণির ছাত্র। বিদ্যালয়কে কন্যাশিশুর জন্য কীভাবে নিরাপদ করা যায় তার একটি উদ্যোগ ছিল সিনেমা প্রদর্শন। সেখানেই মাহমুদুন্নবীর সঙ্গে দি হাঙ্গার প্রজেক্টের সখ্য গড়ে ওঠে। তখন থেকে শুরু হয় মাহমুদুন্নবীর বাল্যবিয়ে প্রতিরোধের ধারাবাহিক কার্যক্রম। মাহমুদুন্নবী এখন নজিপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজ একাদশ শ্রেণির ছাত্র। মাহমুদুন্নবী এমন একটি নাম যে বাল্যবিয় নিয়ে আপসহীন। এক কথায় বলা যায়, বাল্যবিয়ে যেখানে মাহমুদুন্নবীর প্রতিবাদ সেখানে। যেখানেই বাল্যবিবিয়ের নিউজ পায় সেখানেই সঙ্গে সঙ্গেথ উপস্থিত হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
মাহমুদুন্নবী বলেন, আমি দেখেছি অনেক মেধাবী কন্যাশিশুকে ঝড়ে যেতে। শুধু তাই নয়, বাচ্চা প্রসবের সময় মা ও শিশুকে মৃত্যু সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে ও মারা যেতে দেখেছি। বিষয়টি নিয়ে একদিন এক চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করি। তখন তিনি বলেন, এ সমস্যার মূল কারণ বাল্যবিয়ে। বাল্যবিয়ে বন্ধ হলে আমাদের দেশে সন্তান প্রসবকালীন মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমে যাবে। কী করবো বুঝতে পারছিলাম না। ঠিক এই সময় দি হাঙ্গার প্রজেক্টকে পাশে পেলাম। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে আমাকে সার্বিক সহযোগিতা করে।
কাজের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মাহমুদুন্নবী বলেন, ধামইরহাট থানার ইসবপুর ইউনিয়নের চকচান্দিরা গ্রামে বাল্যবিয়ের খবর পেয়ে তা বন্ধ করতে গিয়েছিলাম। পাত্রীর সঙ্গে ইসবপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যানের ছোট ছেলের বিয়ে হওয়ার কথা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছি। বিয়েতে বাধা দিতেই গ্রামের প্রভাবশালীরা আমাকে মারধর করে বন্দি করে রাখে। পরে পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল মালেক খবর পেয়ে আমাকে উদ্ধার করে। এমনো হয়েছে, বাল্যবিয়ে বন্ধ করার দায়ে আমার পরিবারকে একঘরে করে রাখারও ঘোষণা দেয়া হয়। নিজের লক্ষ্যে অবিচল মাহমুদুন্নবী। বলেন, আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করেই যাব। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা পেলে কাজটি আরো সহজ হয়। আমি স্বপ্ন দেখি বাংলাদেশ বাল্যবিয়ে মুক্ত হবে।