×

সারাদেশ

নানা অনিয়মে চলছে কসবা সীমান্ত হাট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০১৯, ১২:৫৬ পিএম

নানা অনিয়মে চলছে কসবা সীমান্ত হাট
নানা অনিয়মে চলছে কসবা সীমান্ত হাট
নানা অনিয়মে চলছে কসবা সীমান্ত হাট

কসবা সীমান্ত হাটে সাংবাদিকদের ছবি তুলতে নিষেধ করছেন বিজিবি সদস্য

ব্রা‏‏হ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্ত হাট থেকে আইন অমান্য করে অবৈধ ভাবে লাখ লাখ টাকার মালামাল পাচার করছেন একটি ব্যবসায়ী চক্র। এতে করে নির্ধারিত হাটের প্রবেশ পত্র (টিকেট) না পেয়ে ফিরে যেতে হচেছ অনেককেই। এ সুযোগে টিকেট কালেবাজারী চক্র চড়া দামে টিকেট বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সীমান্ত হাটের নীতিমালা অনুসারে কসবা সীমান্ত হাটের আশে-পাশের ৫ কিলোমিটার এলাকার অধিবাসী বাৎসরিক কার্ডধারীরা (ব্যান্ডি পাশ) হাটে যেতে পারবেন। ৫ কিলোমিটারের বাহিরের কোনো লোকজন এ হাটে যেতে পারবেন না। এ আদেশটি গত ১০ নভেম্বর থেকে কার্যকর হওয়ার কথা উল্লেখ করে কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে দেয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি। কসবা সীমান্ত হাট পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ব্রা‏হ্মণবাড়িয়ার জেলার অতিরিক্ত হাকিম (এডিএম) মিতু মরিয়ম বলেন, সীমান্ত হাটের বিষয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে আলোচনা হয়েছে। সীমান্তের ৫ কিলোমিটারের বাহিরের কাউকে এ হাটে যেতে দেয়া হবে না। বিষয়টি নিয়ে আমরা কঠোর অবস্থানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ ছাড়াও হাটে ব্যক্তিগত কেনা কাটাকে কেউ বাণিজ্যিক আকারে চালিয়ে নেবেন তা করতে দেয়া হবে না। এ বিষয়েও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। টিকেট কালোবাজারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়; ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ২০৩৯ পিলারের কাছে ব্রা‏হ্মণবাড়িয়ার কসবা পৌর এলাকার তারাপুর এবং ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সিপাহীজলা জেলার কমলাসাগর এলাকায় দুই দেশের সমপরিমাণ এক একর ৫০ শতক জায়গাজুড়ে সীমান্ত হাট বসে। ২০১৫ সনের ৬ জুন এ হাট উদ্বোধন হয়। প্রতি রোববার এ হাটের সাপ্তাহিক দিন। এতে ভারতের ৫০টি এবং বাংলাদেশের ৫০টি দোকান বসে। হাটে প্রসাধনী সামগ্রী সাবান, শ্যাম্পু, বিভিন্ন জাতের তেল, পাউডার, চাপাতা, চকলেট, হরলিক্স, কাপড়, চাদঁর, গুড়ো দুধ, বিস্কুট , মেহেদী, শাড়ী, ফল মুল এ হাটে ক্রয়-বিক্রয় হয়।

গত বছরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সীমান্ত হাটে ৫ কিলোমিটারের বাহিরের এক হাজার ব্যক্তি এ হাটে যেতে পারতেন। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল রোববার সীমান্ত হাটে যাওয়ার সময় কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে এক হাজারেরও অনেক বেশী লোকজন হাটে যাওয়ার প্রবেশ পত্র (টিকেট) নিতে আসেন। সকাল ১০টার দিকে গিয়ে দেখা যায় কোনো টিকেট নেই। শতশত মানুষ টিকেটের জন্য অপেক্ষমান। এ সময় কুটি শরৎনগর এলাকার গৃহবধূ নুরজাহান বেগম, কুমিল্লার শাসনগাছার আনিস মিয়া এবং নবীনগরের কাইতলা এলাকার তানিয়া বেগম বলেন, সাড়ে ৮টায় লাইনে দাড়িয়েও আমরা কোন টিকেট পাইনি। লাইনের আশে-পাশেই অনেকেই ৩০ টাকার টিকেট দুইশ থেকে তিনশ টাকা দিয়ে কিনেছেন। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী মোহাম্মদ মোতাহার হোসেন বলেন, টিকেট বিক্রি সাড়ে ৮টা থেকে শুরু করে সাড়ে ৯টায় টিকেট বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। এক হাজার টিকেট একঘন্টায় শেষ হলো কিভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশের উপস্থিতিতেই টিকেট বিক্রি করা হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট মো. রাশেদুল কাওসার ভুইয়া জীবনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, যে উপজেলায় দুর্নীতি জিরো টলারেন্স এখানে এধরনের টিকেট কালোবাজারীদের বরদাস্ত করা হবে না। হাতে নাতে ধরে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গতকাল রোববার সীমান্ত হাটে গিয়ে দেখা গেছে ৫ কিলোমিটারের অধিক দূরের বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা এ হাটে এসে পাইকারী ধরে বিভিন্ন মালামাল ক্রয় করছেন। ভারতের একটি চা পাতার দোকানে কয়েকজন ব্যবসায়ী কয়েক কাটুন করে চা পাতা ক্রয় করছেন। একই রকম দেখা গেছে দুধ, হরলিক্স, প্রশাধনীর বিভিন্ন দোকানগুলিতে। বিভিন্ন ফলমুলের দোকানগুলি থেকেই বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা পাইকারী দরে মালামাল ক্রয় করেছেন। এতে করে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কেনা কাটা করতে আসা লোকজন ক্রয় করতে পারছেন না।

[caption id="attachment_179970" align="aligncenter" width="700"] কসবা সীমান্ত হাটে সাংবাদিকদের ছবি তুলতে নিষেধ করছেন বিজিবি সদস্য[/caption]

হাটে কেনা কাটা করতে আসা সোমা আক্তার বলেন, হাটে গিয়ে দেখতে পাই পাইকারী দরে চাপাতা, হরলিক্স, দুধ ও প্রশাধনী বিভিন্ন মালামাল ক্রয় করছেন বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা। এতে করে কেনা কাটা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ অক্টোবর সীমান্ত হাট থেকে অবৈধ ভাবে মালামাল ক্রয় করে পাচার করার সময় ১৩জনকে গ্রেপ্তার করেছেন। এ সময় দুইটি মাইক্রোবাসসহ বিপুল পরিমানে প্রশাসধনী সামগ্রী সাবান, শ্যাম্পু, বিভিন্ন জাতের তেল, পাউডার, চাপাতা, চকলেট, গুড়ো দুধ, বিস্কুট ও মেহেদী জব্দ করেছেন পুলিশ। বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, সীমান্ত হাটে একজন ব্যক্তি দুইশ ডলারের মালামাল ক্রয় করতে পারেন। একটি ব্যবসায়ী চক্র কয়েকজনকে সাজিয়ে এনে মালামাল ক্রয় করে পাচার করতে থাকেন। গত রোববার ৬৩ হাজার টাকার অবৈধ ভাবে মালামাল জব্দ করা হয়েছে। গত ২৪ আগস্ট ২ লাখ ১০ হাজার টাকা, ১৭ আগস্ট ২ লাখ ২১ হাজার টাকা এবং ১০ আগস্ট ৬০ বিজিবির অধিনায়ক (সিও) মো. ইকবাল হোসেন বলেন, সীমান্ত হাটে একজন ব্যক্তি দুইশ ডলার মালামাল ক্রয় করতে পারবেন। একটি অসাধু ব্যবসায়ী চক্র কয়েকজনকে এনে হাট থেকে মালামাল ক্রয় করতে এক সাথে জমিয়ে পাচার করেন। বিজিবি গত চার সপ্তাহে ৫ লাখ ১৫ হাজার টাকার মালামাল জব্দ করা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App