×

অর্থনীতি

টাকার আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন আমানতকারীরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০১৯, ১০:৪৪ এএম

টাকার আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন আমানতকারীরা

বর্তমান সময়ে অর্থনীতির আলোচিত বিষয় পিপলস লিজিং লিমিটেড। ব্যাংক ও আর্থিক খাতের মধ্যে বাংলাদেশর একমাত্র অবসায়নকৃত আর্থিক প্রতিষ্ঠানটিতে টাকা রেখে একেবারেই নিঃস্ব হয়ে পথে পথে ঘুরছেন আমানতকারীরা। জমাকৃত ৭০০ কোটি টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় ছুটছেন সংশ্লিষ্টদের দ্বারে দ্বারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থমন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রায় সব মহলেই তারা ধরনা দিয়েছেন। পেয়েছেন শুধুই সান্ত্বনা। আমানতকারীরা বলছেন, পিপলস লিজিংয়ের পরিচালকরা বিলাসী জীবনযাপন করছেন। কেউ রিসোর্ট, কেউ হোটেল খুলেছেন। অর্থ লুণ্ঠনের অভিযোগে ৯ পরিচালকের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও শেয়ার জব্দ করা হয়েছে। একটি অডিট প্রতিষ্ঠানকে পিপলস লিজিংয়ের খুঁটিনাটি দেখার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পিপলসের আমানতের ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের। প্রায় ৬ হাজার সাধারণ গ্রাহকদের আমানত রয়েছে ৭০০ কোটি টাকা। এরমধ্যে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে ৫৭০ কোটি টাকা বের করে নেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে বিভিন্ন অনিয়ম বের হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি থেকে পরিচালক সামসুল আল আমিন, নার্গিস আল আমিন, হুমায়রা আল আমিন ও খবির উদ্দিনকে অপসারণ করা হয়। আর চেয়ারম্যান এম মোয়াজ্জেম হোসেন স্বেচ্ছায় পদ ছাড়েন। সূত্র জানায়, পিপলস লিজিংয়ে ১৪টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৮৩১ কোটি টাকা আটকে আছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ৬টি ব্যাংকবহিভর্‚ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত এবং ৩টি বেসরকারি ব্যাংক। এ ছাড়া কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের ৫০০ কোটি টাকা আটকে গেছে। গ্রাহকদের আমানতের অর্থ ফেরত দিতে না পারায় চলতি বছরের ১৪ জুলাই পিপলস লিজিং অবসায়নের জন্য আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওইদিনই মামলার শুনানি শেষে প্রতিষ্ঠানটি অবসায়নে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে পিপলস লিজিংয়ের নামে থাকা সব হিসাব ও অনিয়মের দায়ে বহিষ্কৃত নয়জন পরিচালকের নামে থাকা শেয়ার ও তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশ দেন। এ ছাড়া অবসায়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান খানকে অবসায়ক নিয়োগ দেয়া হয়। আদালতের নির্দেশনার আলোকে বহিনিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান একনাবিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট পিপলস লিজিংয়ের সম্পদের মূল্যায়ন কার্যক্রম শুরু করেছে গত ১৫ সেপ্টেম্বর। ২০১৫ সালের অক্টোবর প্রান্তিক থেকে গত ১৪ জুলাই পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির ঋণ, আমানত, স্থায়ী সম্পদসহ সার্বিক দায়দেনা মূল্যায়ন করবে একনাবিন। অবসায়নের মাধ্যমে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়ার পর আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, পিপলস লিজিং নিয়ে আদালতে মামলা হয়েছে। আদালত যে নির্দেশনা দেবেন সেটাই বাস্তবায়ন করা হবে। এখানে অনেক আমানতকারী রয়েছেন। সবাইকে হয়ত একসঙ্গে টাকা দেয়া যাবে না। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টাকা দেয়া হতে পারে। সেটাও আদালতের নির্দেশেই হবে। জানা গেছে, পিপলস লিজিংয়ের প্রায় ছয় হাজার আমানতকারী রয়েছেন। তারা আমানতের টাকা ফেরত চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হন। তাদের অর্থ ফেরত দেয়ার আশ্বাস দিয়ে গত ১০ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, নানা অনিয়ম আর দুর্নীতি কারণে চরম সংকটে থাকা পিপলস লিজিংকে অবসায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে সময় তারা বলেছিলেন, পিপলস লিজিংয়ের আমানতের চেয়ে সম্পদের পরিমাণ বেশি রয়েছে। অতএব আমানতকারীদের কোনো সমস্যা হবে না। তারা টাকা ফেরত পাবেন। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের আশ্বস্থের চার মাস পার হলেও অর্থ ফেরত পাননি আমানতকারীরা। তাই গত ৪ নভেম্বর ‘পিপলস লিজিং এন্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিতে আমানতকারীদের কাউন্সিল’-এর ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অর্থ ফেরতের বিষয়ে সহায়তা চান। সাক্ষাৎ শেষে তারা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, অর্থমন্ত্রী আমানতকারীদের টাকা দ্রুত ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন। ওইদিন অর্থমন্ত্রী নিজেও সাংবাদিকদের বলেছেন, টাকা ফেরতের বিষয়ে আইন অনুযায়ী ও প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরপর গত ৯ নভেম্বর গুলশানের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সহায়তা চেয়েছেন পিপলস লিজিংয়ের আমানতকারীরা। সে সময় পিপলস লিজিং এন্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসকে অবসায়ন না করে পুনর্গঠন অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে ব্যক্তি আমানতকারীদের সঞ্চয় ফেরত দেয়ার দাবি জানান তারা। আমানতকারী সামিয়া বিনতে মাহবুব ভোরের কাগজকে বলেন, পিপলস লিজিংয়ের পরিচালকরা আমাদের টাকা মেরে দিয়েছে। এদের মধ্যে পরিচালক উজ্জ্বল কুমার নন্দী আমানতকারীদের টাকা মেরে চট্টগ্রামে হোটেল র‌্যাডিসন ব্লু খুলেছেন। অথচ এখনো তার ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়নি। আরেকজন পরিচালক নং চৌ মং আমানতকারীদের টাকা মেরে বান্দরবানে বড় রিসোর্ট চালাচ্ছেন। তাদের অর্থ আত্মসাতের প্রমাণপত্র সব জায়গায় দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের ব্যাংক হিসাব ‘ফ্রিজ’ হয়নি। পিপলসের পরিচালকরাই সব টাকা সরিয়ে নিয়েছেন। আমানতকারীদের টাকা নিয়ে তারা আরাম-আয়েশে জীবনযাপন করছেন। আর আমরা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছি টাকা ফেরত পাওয়ার আশায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App