×

অর্থনীতি

ক্রিসেন্টকাণ্ডে বিপর্যস্ত জনতা ব্যাংক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০১৯, ১১:৪২ এএম

ক্রিসেন্টকাণ্ডে বিপর্যস্ত জনতা ব্যাংক
ক্রিসেন্টকাণ্ডে বিপর্যস্ত জনতা ব্যাংক
ক্রিসেন্টকাণ্ডে বিপর্যস্ত জনতা ব্যাংক
ক্রিসেন্টকাণ্ডে বিপর্যস্ত জনতা ব্যাংক

আর্থিক খাতে তোলপাড় সৃষ্টিকারী কয়েকটি ‘পুকুর চুরি’র ঘটনা এখনো অমীমাংসিত। দায়ী ব্যক্তিরা সাজা পায়নি। ক্ষতিগ্রস্তরাও পায়নি কোনো ক্ষতিপূরণ। এই নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক প্রতিবেদন

৬৫৭টি ভুয়া রপ্তানি বিলের বিপরীতে ১ হাজার ২শ ৯৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বিদেশে পাচার করেছে ক্রিসেন্ট গ্রুপ। ঘটনাটি গত বছর বেশ আলোচনায় ছিল। এই এক কেলেঙ্কারিতে আর্থিকভাবে ‘বিধ্বস্ত’ রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। ক্রিসেন্টের কাছে জনতা ব্যাংকের পাওনা ২ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা। ঘটনা জানাজানির পর গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি ক্রিসেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ কাদেরসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। সম্প্রতি ২০ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক করেছে সংস্থাটি। এরপর আরো তিনটি মামলা করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। বর্তমানে কারাগারে আছেন এম এ কাদের। শুল্ক গোয়েন্দাদের তথ্য মতে, এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে ক্রিসেন্ট গ্রুপ ও জনতা ব্যাংকের ১৫ জন কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন। অন্যদিকে, দুদকের অনুসন্ধানে জনতা ব্যাংক ও ক্রিসেন্ট গ্রুপের ১৭ জন কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।

গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রপ্তানির নাম করে জনতা ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কমপক্ষে ১ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা বের করে নিয়েছে ক্রিসেন্ট গ্রুপ। তবে কাস্টমস গোয়েন্দা বিভাগের ২০৮ পৃষ্ঠার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬৫৭টি ভুয়া রপ্তানি বিলের বিপরীতে ১ হাজার ২শ ৯৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বিদেশে পাচার করেছে ক্রিসেন্ট গ্রুপ। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানেও এই গ্রুপটির বিরুদ্ধে ১ হাজার ৩০৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে। কাস্টমস গোয়েন্দা বিভাগ বলছে, এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে ক্রিসেন্ট গ্রুপ ও জনতা ব্যাংকের ১৫ জন কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন।

অন্যদিকে, দুদকের অনুসন্ধানে জনতা ব্যাংক ও ক্রিসেন্ট গ্রুপের ১৭ জন কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। ঘটনা জানাজানির পর গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি ক্রিসেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ কাদেরসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এ বিষয়ে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুস সালাম আজাদ ভোরের কাগজকে বলেন, এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বেশ কয়েকজনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। অন্যদিকে সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। আমদানি ও রপ্তানির নামে এ টাকা যাচ্ছে। শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল এবং চাল আমদানির নামে টাকা কোথায় যাচ্ছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। তবে তার মতে, একবার দেশের বাইরে টাকা চলে গেলে তা ফিরিয়ে আনা কঠিন।

ক্রিসেন্ট লেদার : ‘এফডিবিপি’ প্রক্রিয়ায় ক্রিসেন্ট গ্রুপ টাকা পাচার করছে। এক্ষেত্রে ক্রিসেন্ট লেদারের কাছ থেকে গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৫৩টি বিলের বিপরীতে ৪৯৯ কোটি টাকার রপ্তানি বিল কিনে নেয় জনতা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখা। পরে ৩৮টি বিলের বিপরীতে মাত্র ৭১ কোটি টাকা সমন্বয় করা হয়েছে। বাকি ২১৫টি বিলের বিপরীতে ৪২৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা সমন্বয় করতে পারেনি।

রিমেক্স ফুটওয়্যার : গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রিমেক্স ফুটওয়্যারের ২৫৯টি বিলের বিপরীতে ৫১৯ কোটি ৪০ লাখ টাকার রপ্তানি বিল কিনে নেয় জনতা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখা। পরে ১৭টি বিলের বিপরীতে মাত্র ৩৪ কোটি ৩ লাখ টাকা সমন্বয় করা হয়েছে। বাকি ২৪২টি বিলের বিপরীতে ৪৮৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা সমন্বয় করতে পারেনি। ক্রিসেন্ট গ্রুপের ৫টি প্রতিষ্ঠানের পণ্য ২১টি কোম্পানির কাছে রপ্তানি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি প্রতিষ্ঠানের ক্রেডিট রিপোর্ট আন্তর্জাতিক ক্রেডিট এজেন্সির মাধ্যমে করা হয়নি। এক্ষেত্রে মিউচুয়াল ওয়েল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি মূলত তুলার ব্যবসা করে।

রূপালী কম্পোজিট লেদার : গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রূপালী কম্পোজিট লেদারের ২০৮টি বিলের বিপরীতে ৪১১ কোটি ৬৯ লাখ টাকার রপ্তানি বিল কিনে নেয় জনতা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখা। পরবর্তী সময়ে ১৬টি বিলের বিপরীতে মাত্র ২৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা সমন্বয় করা হয়েছে। বাকি ১৯২টি বিলের বিপরীতে ৩৮২ কোটি ১০ লাখ টাকা সমন্বয় করতে পারেনি।

ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ : ক্রিসেন্ট ট্যানারিজের কাছ থেকে গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮টি বিলের বিপরীতে ১৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকার রপ্তানি বিল কিনে নেয় জনতা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখা। পরবর্তী সময়ে কোম্পানি এর ১ টাকাও সমন্বয় করতে পারেনি। অর্থাৎ পুরো টাকাই বিদেশে পাচার করা হয়েছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর জানায়, দেশের বাইরের ব্যাংকের সঙ্গে এলসি খোলার সময় ওই ব্যাংক আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন কিনা, তা যাচাই করেনি জনতা ব্যাংক। আর রপ্তানির চুক্তিতে কোনো সাক্ষীর স্বাক্ষর নেই যা আন্তর্জাতিক আইনে গ্রহণযোগ্য নয়। এ ছাড়া এফডিবিপি ক্রয়ের ক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠানের স্বাক্ষর যাচাই করা হয়নি। জনতা ব্যাংকের নীতিমালায় কোনো ত্রুটিপূর্ণ বিল ক্রয় না করার নিয়ম থাকলেও এ ক্ষেত্রে সেটি মানা হয়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App