×

জাতীয়

স্বাভাবিক হয়নি সড়ক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০১৯, ১১:১৪ এএম

স্বাভাবিক হয়নি সড়ক
পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণার পরও পুরোমাত্রায় সচল হয়নি সড়ক। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অনেকস্থানেই স্বাভাবিক হয়নি বাস চলাচল। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালের দিকে রাজধানীর দূরপাল্লার বাস টার্মিনালগুলো থেকে কিছু কিছু বাস যাত্রী নিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেলেও চালকদের অনীহার কারণে বেশিরভাগ বাসই টার্মিনাল ছাড়েনি। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন জেলায় গতকালও ধর্মঘট অব্যাহত ছিল। অনেক জেলায় কোনো যানবাহন চলাচল করেনি। কোথাও কোথাও বিআরটিসি বাস চলাচলের চেষ্টা করলেও শ্রমিকরা বাস আটকে দেয়। এক শ্রেণির পরিবহন মালিক ও শ্রমিকের এমন কর্মকাণ্ডর পেছনে বিশেষ মহলের ইন্ধন রয়েছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। কারো কারো মতে, নতুন পরিবহন আইনকে কেন্দ্র করে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের উস্কানির পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে থেকেও কেউ কেউ পরিবহন খাতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। সেখানে সব ধরনের যানবাহন স্বাভাবিকভাবে চলাচল করেছে। এ দিকে সড়ক পুরোপুরি সচল না হওয়ায় রেলপথে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীরা বিপাকে পড়ে। তবে পরিবহনের অস্থিরতা অনেকটাই কেটেছে বলে মনে করছেন সরকারের নীতি-নির্ধারকরা। তাদের আশা, দুয়েকদিনের মধ্যেই স্বাভাবিক অবস্থা ফিরবে সড়কে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ প্রসঙ্গে বলেন, সড়ক পরিবহন আইন নিয়ে কোনো ধরনের সমস্যা হবে না। নতুন আইন প্রয়োগে কোনো অহেতুক বাড়বাড়িও হবে না। গতকাল বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি বিষয়ক সাংস্কৃতিক উপকমিটির সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ পরিবহন শ্রমিকদের গাড়ি চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন শ্রমিক ঐক্য পরিষদের অঘোষিত ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীতে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল শুরু হয়েছে। তবে তা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে সংখ্যায় অনেক কম ছিল। রাজধানীর ফার্মগেট, কাওরানবাজার, গুলিস্তান, মহাখালী, আগারগাঁও, তেজগাঁও, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কে বাস-মিনিবাস, দূরপাল্লার বাস, পিকআপ, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের চাপ অনেক কম দেখা যায়। সড়কে ৬০ শতাংশ গণপরিবহন চালাচল করেছে বলে রাস্তায় দায়িত্বরত একাধিক ট্রাফিক সার্জেন্ট জানিয়েছেন। সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও গণপরিবহন ও পণ্য পরিবহনের গাড়িগুলোর উপস্থিতি অনেক কম ছিল বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ট্রাফিক) উত্তরের ডিসি প্রবীর কুমার। পরিবহন মালিকরাও সড়কে গণপরিবহনের সংখ্যা কম থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। মহাখালী বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির সভাপতি হাজি আবুল কালম জানান, সব শ্রমিক কাজে যোগ দেয়নি। এ কারণে গাড়ির সংখ্যা কম। একই ধরনের তথ্য দিয়েছেন সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস-মালিক সমিতির নেতারা। একতা পরিবহনের চালক জালাল সরদার জানান, ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হলেও দেশের অনেক স্থানে শ্রমিকরা এখনো রাস্তায় অবস্থান করছে। তারা চালকদের মুখে পোড়া মোবিল মাখিয়ে দিচ্ছে। এ জন্য গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হতে সাহস হচ্ছে না। কোথাও কোথাও পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক : জানা গেছে, ট্রাক চালকরা ধর্মঘট তুলে নেয়ায় রাজধানীতে পণ্য পরিবহন স্বাভাবিকভাবেই চলছে। সকাল থেকে কোথাও কোনো সমস্যা দেখা যায়নি। বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বয়ক রুস্তম আলী খান জানান, পণ্যবাহী শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছে। ফলে পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। বাস মালিকরা দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে। এটা তাদের ব্যাপার। চট্টগ্রাম : বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন জেলার বাস-ট্রাক-কাভার্ডভ্যান চলাচল গতকাল একেবারেই স্বাভাবিক ছিল। সকাল থেকেই সড়কগুলো সরব হয়ে ওঠে। জানা গেছে, গত বুধবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের বৈঠক শুরুর পরপরই চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন রুটে বাস চলাচল শুরু হয়। ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক। রাত ৯টা থেকে ঢাকাগামী গ্রিনলাইন, সোহাগ পরিবহনসহ সব পরিবহন কোম্পানির বাস চলাচল শুরু করে। পণ্য পরিবহনকারী ট্রাক-কর্ভাডভ্যানগুলো পণ্য পরিবহন শুরু করে। বন্দর থেকে আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার নিয়ে যানবহনগুলো বন্দর ছেড়ে গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের বেশিরভাগ জেলায় গতকালও বাস চলাচল করেনি। ঢাকা, মাদারীপুর, ময়মনসিংহ, হিলিসহ কয়েকটি জেলায় গতকাল সকাল থেকেই বাস চলাচল করতে শুরু করে। তবে খুলনা, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, কুড়িগ্রাম, টাঙ্গাইলসহ অনেক জেলায় গতকালও বাস চলাচল বন্ধ ছিল। এসব জেলায় অভ্যন্তরীণ রুটে গণপরিবহনের সংখ্যা কম ছিল। দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। ফলে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন। মাদারীপুর : ঢাকার পর মাদারীপুরে গতকাল বাস চলাচল স্বাভাবিক ছিল। জেলার সব রুটে গণপরিবহন চলাচল করেছে। এখান থেকে বিভিন্ন রুটের দূরপাল্লার বাসগুলো যাত্রী নিয়ে সকাল থেকেই ছেড়ে গেছে। হিলি : দেশের অন্যতম স্থল বন্দর হিলিতে ট্রাক চলাচল স্বাভাবিক ছিল। বন্ধর থেকে যথারীতি পণ্য পরিবহন চলছে। যাত্রীবাহী বাস চলাচলও স্বাভাবিক। ময়মনসিংহ : গতকাল সকাল থেকেই ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাসহ সব রুটের বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। স্থানীয়ভাবে গণপরিবহন ব্যবস্থাও একেবারেই স্বাভাবিক ছিল। কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি। শরীয়তপুর : ব্যতিক্রম ছিল শরীয়তপুর। এই জেলার অভ্যন্তরীণ রুটে স্থানীয় পণ্য ও গণপরিবহন অনেকটাই চলাচল শুরু করেছে। তবে টার্মিনালগুলো থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। যাত্রীদের অপেক্ষার প্রহর গুণতে দেখা গেছে। খুলনা : খুলনায় গতকাল চতুর্থ দিনের মতো পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘট পালন করছে। অভ্যন্তরীণ বেশিরভাগ রুটে গণপরিবহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। খুলনা থেকে কোনো দূরপাল্লার বাস যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যায়নি। যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সহকারী সম্পাদক মো. জিয়াউর রহমান মিঠু জানিয়েছেন, খুলনায় বাস চলাচল শুরু হয়নি। আজ থেকে চালু হতে পারে। সাতক্ষীরা : গতকাল সাতক্ষীরাতেও বাস ধর্মঘট অব্যাহত ছিল। জেলা বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান জানান, বাস মালিকরা অনুমতি দিলেই শ্রমিকরা বাস চালানো শুরু করবে। অপরদিকে সাতক্ষীরা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি সাইফুল করিম সাবু বলেন, মালিকরা চালকদের বাস চালাতে নিষেধ করেনি। শ্রমিকরাই বাস চালানো বন্ধ রেখেছে। তবে ২১ ও ২২ নভেম্বর কেন্দ্রীয় মিটিংয়ের পর চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। যশোর : যশোরে গতকালও পরিবহন ধর্মঘট অব্যাহত ছিল। এই অঞ্চলের ১৮টি রুটে যাত্রীবাহী বাস চলাচল করেনি। পরিবহন বন্ধ থাকায় ভারত থেকে আসা পাসপোর্টধারী যাত্রীরা বিপাকে পড়েন। তারা বেনাপোলেই আটকে পড়েন। অন্যদিকে সকালে বাস টার্মিনালে আসা লোকজনের ভোগান্তি ছিল চরমে। যশোর জেলা পরিবহন সংস্থা শ্রমিক সমিতির সভাপতি মামুনুর রশিদ বাচ্চু বলেন, যশোরের বিভিন্ন রুটের শ্রমিকরা কাজে না আসায় বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঢাকায় সড়ক পরিবহন ফেডারেশনের বৈঠকের পর এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। এ ছাড়া চুয়াডাঙ্গা, নওগাঁ, ঝিনাইদহে গতকালও বাস চালক ও শ্রমিকদের ধর্মঘট অব্যাহত ছিল। নড়াইলেও গতকাল বাস চলাচল বন্ধ ছিল। রাজবাড়ীতে বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করেনি। সকাল থেকে এই জেলার সড়কগুলোতে কোনো বাস-ট্রাকের দেখা মেলেনি। গতকাল বাসচালক ও শ্রমিকরা টাঙ্গাইলে পরিবহন ধর্মঘট পালন করেছে। ফলে সকালে টাঙ্গাইল থেকে দূরপাল্লার বাস ছাড়েনি। টাঙ্গাইলের মতো জামালপুরেও বাসচালক ও শ্রমিকরা গতকাল ধর্মঘট করেছে। জামালপুর-ময়মনসিংহ সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হলেও জামালপুর-টাঙ্গাইল সড়কের ধনবাড়ী এলাকায় শ্রমিকরা রাস্তায় অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। তারা জামালপুর-টাঙ্গাইল রুটের সব ধরনের যানবাহন চলাচলে বাধা দেয়। গতকালও কুড়িগ্রাম থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সব রুটের বাস, মিনিবাস ও ট্রাক চলাচল বন্ধ ছিল। বেলা ১২টার দিকে বাসস্ট্যান্ডের কাছে পার্কিং করা অটোরিকশা চালকদের ওপর পরিবহন শ্রমিকরা হামলা চালিয়ে তাড়িয়ে দেয়। কুড়িগ্রাম কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনালে থেকে অনেকেই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু অনেকেই বাধার মুখে পড়ে। সৈয়দপুরে বাস চলাচল বন্ধ ছিল। বাস ও ট্রাক পরিবহন শ্রমিকরা রাস্তায় ছিল। সকাল ১১টার দিকে পরিবহন শ্রমিকরা বিআরটিসির দ্বিতল বাস আটকে দেন। সড়কে বাস চলাচল বন্ধ। ঠাকুরগাঁও থেকে রংপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া দুটি বাস যাত্রীসহ রাস্তা থেকে ডিপোতে ফেরত পাঠানো হয়। সৈয়দপুর-ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, সিলেটসহ সব গন্তব্যের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। রাজশাহীতেও গতকাল পরিবহন ধর্মঘট অব্যাহত ছিল। সকালের দিকে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী-নওগাঁ রুটে বাস ও পণ্যবাহী কিছু ট্রাক চলাচল করেছে। অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে ধীরে ধীরে বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়ে এলেও দূরপাল্লা রুটে বাস চলাচল করেনি। তবে শ্রমিক নেতারা দাবি করেছেন, দূরপাল্লা রুটের কিছু বাস রাজশাহী থেকে ছেড়ে গেলেও জেলার বাইরে গিয়ে আটকা পড়ছে। গতকাল বগুড়া থেকে বাস চলাচল শুরু হয়েছে। তবে এখনো বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। সীমিত আকারে কিছু বাস চলছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App