×

জাতীয়

সবার নজর যুবলীগের কংগ্রেসের দিকে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০১৯, ১০:৩২ এএম

সবার নজর যুবলীগের কংগ্রেসের দিকে
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী সংগঠন আওয়ামী যুবলীগের সপ্তম জাতীয় কংগ্রেস আগামীকাল শনিবার। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ১১টায় প্রথম অধিবেশন উদ্বোধনের পর বিকেল ৩টায় দ্বিতীয় অধিবেশনে নতুন নেতৃত্ব পাবে সংগঠনটি। নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়া সংগঠনটির নতুন নেতৃত্বে কারা আসছে, সেদিকে নজর সবার। কারণ সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শুরু হওয়া শুদ্ধি অভিযানে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে যুবলীগের শীর্ষ কয়েকজন নেতা। তাদের কাউকে কাউকে দল থেকে বহিষ্কারের পাশাপাশি গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। অব্যাহতি দেয়া হয়েছে যুবলীগের সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে। যুবলীগে যার কথাই ছিল শেষ কথা। এদিকে সম্মেলনকে ঘিরে সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন। তৃণমূল নেতারা চান কংগ্রেসের মাধ্যমে ক্লিন ইমেজের ত্যাগী, মেধাবী ও কর্মীবান্ধব তরুণ নেতারা দায়িত্বে আসুক। এতে করে যুবলীগ যে স্বকীয়তা হারিয়েছে, তা যেন ফিরে আসে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উত্তরাঞ্চলের একটি জেলা যুবলীগের সভাপতি গতকাল ভোরের কাগজকে জানান, ছাত্রলীগ করেছি দীর্ঘদিন। এরপর দীর্ঘ সময় দলীয় কোনো পদবি পাইনি। বিএনপির আমলে অনেক নির্যাতনের স্বীকার হয়েছি। মিথ্যা মামলায় জেল খেটেছি। পরিবারকে ঠিকমতো সময় দিতে পারিনি। ওয়ান ইলেভেনেও ঠিকমতো ঘরে থাকতে পারিনি। দল ও নেত্রীর নির্দেশে সব কর্মসূচি পালন করেছি। তারপরও যুবলীগের নেতা হতে চেয়ারম্যানকে টাকা দিতে হয়েছে। তার মতে, আর কোনো ত্যাগী, কমিটেড ব্যক্তিকে যেন টাকা দিয়ে নেতা হতে না হয়। তাহলে রাজনীতিকরা রাজনীতির মাঠ থেকে হারিয়ে যাবে। গতকাল যুবলীগের কয়েকজন তৃণমূল নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারাও কংগ্রেসে স্বচ্ছ ও ত্যাগী নেতাদের শীর্ষ নেতৃত্বে দেখতে চান। ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে যুবলীগের যে সুনাম নষ্ট হয়েছে, সেটা যেন ফিরে আসে নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে। পাশাপাশি বাইরে থেকে নয়, যুবলীগের বর্তমান নেতৃত্ব এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্য থেকে যাদের সাংগঠনিক দক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা আছে, তাদের মধ্য থেকে নেতা নির্বাচিত হোক। অবশ্য এ ক্ষেত্রে দলীয়প্রধান শেখ হাসিনার প্রতিই আস্থা রাখছেন তৃণমূল নেতারা। তাদের আশা, এমন বক্তিকে শেখ হাসিনা নেতৃত্বে নিয়ে আসবেন, যিনি যুবলীগের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে পারবেন। তৃণমূলে কমিটি দেয়ার ক্ষেত্রে আর কোনো বাণিজ্য হবে না। সাবেক ত্যাগী ছাত্রলীগ নেতারা মূল্যায়িত হবেন। এদিকে আগামীকাল যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হলেও এখনই ঘোষণা হচ্ছে না সবচেয়ে সমালোচিত দুই ইউনিট ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যুবলীগের কমিটি। আওয়ামী লীগের কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দক্ষিণ যুবলীগ সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, সহসভাপতি এনামুল হক আরমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তারের পর সংগঠনটির অনেক নেতার নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। দুদক অনেকের বিরুদ্ধে খোঁজখবর নিচ্ছে। তা ছাড়া উত্তর ও দক্ষিণের যুবলীগ নেতাদের ওপর চরম ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী। তাই এই দুটি ইউনিটে নতুন নেতৃত্বের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নিজেই খোঁজখবর নিচ্ছেন। আপাতত উত্তর-দক্ষিণের কমিটি হচ্ছে না। জাতীয় কংগ্রেসে নতুন কমিটি ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। অন্যদিকে কারা আসছেন যুবলীগের নেতৃত্বে এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-পর্যালোচনা। এবার বয়সসীমা ৫৫ বছর নির্ধারণ করায় বর্তমান কমিটির অনেকেই মূল নেতৃত্বে আসতে পারবেন না। ফলে সাবেক ছাত্রনেতাদের থেকেই নেতৃত্বে আসার সম্ভাবনা বেশ প্রবল। এবার নেতৃত্বে আনা হবে ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিদের। সেদিক দিয়ে জোরালো আলোচনায় আছেন যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণির ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ। এবার নেতৃত্বে তার আসার সম্ভাবনা খুব বেশি বলে জানা গেছে। এ ছাড়া আলোচনায় আছেন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম, সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট বেলাল হোসেন, আতাউর রহমান আতা, মো. ফারুক হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, সুব্রত পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক বদিউল আলম ও ফারুক হাসান তুহিন, প্রচার সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলু ও সহ-সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমেদ, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন। সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে আলোচনায় আছেন ইসহাক আলী পান্না, বাহাদুর ব্যাপারী, অজয় কর খোকন ও নজরুল ইসলাম বাবু। ঢাকা দক্ষিণে যারা নেতৃত্বে আসার আলোচনায় আছেন তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। তবে এমন কয়েকজনও আছেন যাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। এরই মধ্যে গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকেও এসব প্রার্থীর বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হয়েছে। দক্ষিণের প্রার্থীদের মধ্যে আলোচনায় আছেন বর্তমান সহসভাপতি মাঈনুদ্দীন রানা, আহমদ উল্লাহ মধু, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা (রাজধানী সুপার মার্কেটে চাঁদাবাজির অভিযোগে সংগঠন থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন), সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী সারোয়ার হোসেন বাবু ও উপ-দপ্তর সম্পাদক খন্দকার আরিফ-উজ জামান (জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা) এবং দক্ষিণের সদস্য এ আর মিঠু। মহানগর উত্তর যুবলীগে আলোচনায় আছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, সহসভাপতি জাকির হোসেন বাবুল, উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাসবীরুল হক অনু, উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সৈয়দ মিজানুর রহমান মিজানসহ বেশ কয়েকজন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App