×

অর্থনীতি

নতুন ঋণের আবদার বিসমিল্লাহ গ্রুপের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০১৯, ১১:০৫ এএম

নতুন ঋণের আবদার বিসমিল্লাহ গ্রুপের
পুরনো ঋণ পরিশোধের উদ্যোগ নেই। খোলা নেই প্রধান কার্যালয় কিংবা করপোরেট অফিসও। মালিক-কর্মকর্তারাও পলাতক। কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তাদের নামে অর্থঋণ আদালতে চলছে মামলা। এরই মধ্যে নতুন করে ঋণের আবদার। এসব করছে ৬টি ব্যাংক থেকে ১২০০ কোটি টাকা নিয়ে উদাও হওয়া বিসমিল্লাহ গ্রুপ। আর বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, কোম্পানিটির অতীতের কার্যক্রম অডিট করে নতুন ঋণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সংশ্লিষ্টরা এসব তথ্য জানিয়েছেন। হলমার্ক কেলেঙ্কারির পর ব্যাংকিং খাতে আরেকটি আলোচিত ঘটনা ছিল টেরিটাওয়েল (তোয়ালে জাতীয় পণ্য) উৎপাদক প্রতিষ্ঠান বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারি। ২০১২ ও ২০১৩ সালে বিসমিল্লাহ গ্রুপ ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ভুয়া এলসির মাধ্যমে তা বিদেশে পাচার করে। এর মধ্যে জনতা ব্যাংক ৫২৭ কোটি টাকা, প্রাইম ব্যাংক থেকে ৩২৭ কোটি টাকা, প্রিমিয়ার ব্যাংক থেকে ৬১ কোটি টাকা, যমুনা ব্যাংক থেকে ১৫৪ কোটি টাকা এবং শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক থেকে ১১০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। কোনো টাকাই পরিশোধ করেনি। বরং গ্রুপটির এমডি খাজা সোলায়মান রাতারাতি পাড়ি জমিয়েছেন দুবাইয়ে। সেখানে করছেন হোটেল ব্যবসা। মালিকসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা বিদেশে থাকায় ওই সব ঋণ এখন ব্যাংকগুলোর কাছে গলার কাঁটা হয়ে আছে। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ১২ মামলায় ৫৪ জনকে আসামি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আসামিদের মধ্যে বিসমিল্লাহ গ্রুপের ১৩ জন এবং ৪০ জন আসামি জনতা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা। মামলাগুলোতে বিসমিল্লাহ গ্রুপের আসামিরা হলেন গ্রুপের মালিক ও মেসার্স আলফা কম্পোজিট টাওয়াল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) খাজা সোলায়মান চৌধুরী, তার স্ত্রী একই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান নওরীন হাবিব, তার পিতা সফিকুল আনোয়ার চৌধুরী, তিন পরিচালক আবিদা হাসিব, নাহিদ আনোয়ার খান, খন্দকার মো. মইনুদ্দিন আশরাফ, বিসমিল্লাহ গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি ও অথরাইজড সিগনেটরি) আকবর আজিজ মুতাক্কি, মহাব্যবস্থাপক (জিএম ও অথরাইজড সিগনেটরি) মো. আবুল হোসাইন চৌধুরী, ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার ও অথরাইজড সিগনেটরি) রিয়াজউদ্দিন আহম্মেদ, নেটওয়ার্ক ফ্রেইট সিস্টেম লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো আক্তার হোসেন, বে ইয়ার্ন লিমিটেডের মালিক গোলাম মহিউদ্দিন আহম্মেদ ও টিডব্লিউ এক্সপ্রেসের মালিক মো. মঈন উদ্দিন, শাহরিশ কম্পোজিট টাওয়েলস লি. এবং আলপা কম্পোজিট টাওয়েলস লিমিটেডের পরিচালক সারোয়ার জাহান। এ ছাড়া দি প্রিমিয়ার ব্যাংকের মতিঝিল শাখার ছয় কর্মকর্তারা হলেন সাবেক ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ শাহীনুর রহমান, ফার্স্ট এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট এম এ রহিম (রুহুল আমিন), ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. শাহাবুদ্দিন সরদার, ফার্স্ট এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. তানজিবুল, সাবেক ডেপুটি ম্যানেজার জি এম শাহাদাত হোসেন, এক্সিকিউটিভ অফিসার আবু সালেহ মো. আরিফুর রহমান। এরমধ্যে একটি মামলায় গত বছর গ্রুপের এমডি ও চেয়ারম্যানসহ ৯ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। অবশ্য কোনো আসামি কারাগারে নেই। অধিকাংশই বিদেশে রয়েছেন। এরই মধ্যে সম্প্রতি ঢাকা অফিসের ঠিকানা ব্যবহার করে বিশেষ সুবিধায় ঋণ নবায়নের জন্য ৬টি ব্যাংকের কাছে নতুন করে ঋণের জন্য চিঠি পাঠিয়েছেন গ্রুপের পলাতক চেয়ারম্যান খাজা সোলায়মান চৌধুরী। চিঠিতে নতুন ঋণ আবেদনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে তিনি জানিয়েছেন, আবার ব্যবসা চালু করবেন। এ ব্যবসা থেকে অর্জিত মুনাফা থেকে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করবেন। চিঠিতে তিনি বিসমিল্লাহ গ্রুপের নামে দায়ের করা মামলাগুলো নিষ্পত্তিরও পন্থা জানতে চেয়েছেন। তবে আবেদনের পর বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঢাকা অফিসে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। বিসমিল্লাহ গ্রুপের নতুন করে ঋণ আবেদনের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, ঋণ পুনঃতফসিলের সার্কুলার অনুযায়ী, বিসমিল্লাহ গ্রæপ যদি ইচ্ছাকৃত খেলাপি না হয় তবে অবশ্যই এ সুবিধা পাবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে খুব শিগগিরই অডিট করা হবে। এরপরই তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App