×

রাজনীতি

হঠাৎ তারেক বন্দনায় সিনিয়র নেতারা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০১৯, ০৮:২১ পিএম

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত জিয়াউর রহমানের জ্যেষ্ঠপুত্র তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা নিয়ে দলের সিনিয়র, অভিজ্ঞ ও প্রবীণ নেতাদের মধ্যে শুরু থেকেই এক ধরনের অস্বস্তি ছিল। যারা দলীয় যেকোনো সিদ্ধান্তের জন্য তাকিয়ে থাকতেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দিকে। তবে চেয়ারপারসন কারাবন্দী হওয়ার পর অনিবার্যভাবেই সব নির্দেশনা আসতে থাকে লন্ডনপ্রবাসী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছ থেকে। এতে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়েন প্রবীণ নেতারা। দলে তাদের মতামত ও অবস্থান ধীরে ধীরে গুরুত্ব হারাতে থাকলে তারা অভিমান ফুঁসতে থাকেন।

সম্প্রতি এমনই অভিমান নিয়ে দলের সঙ্গে কয়েক যুগের সম্পর্ক ছিন্ন করে রাজনীতির মাঠ ছেড়েছেন কয়েকজন নেতা। এ তালিকার শীর্ষে রয়েছেন দলীয় ভাইস চেয়ারম্যান পদে থাকা সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান। গুঞ্জন উঠেছে, আরো হাফডজন সিনিয়র নেতা দলত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যে গুঞ্জনের বার্তা লন্ডন অবধি পৌঁছে যাওয়ার পরে পরিস্থিতি অনেকটাই ঘুরে গেছে। যার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে।

হঠাৎ করেই সিনিয়র নেতারা তারেক বন্দনায় মেতে উঠেছেন। সভা সমাবেশে দেয়া বক্তব্যে তারেক রহমানের গুণকীর্তন শুরু করেছেন। কারণ ব্যাখ্যা করে দলের হাইকমান্ডের এক নেতা বললেন, বিএনপি লন্ডন প্রেসক্রিপশনেই চলবে। আগামী দিনের নেতৃত্বের জন্য সম্ভাবনার দুটি দিক হচ্ছে- জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া বিএনপি আর তার পুত্র তারেক রহমান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক নেতা জানালেন, দীর্ঘদিন ধরেই তারেক রহমানের নেতৃত্বকে ধ্বংস করতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল দলের বড় একটা অংশ। তবে ইতোমধ্যে সেসব ষড়যন্ত্রকারীকে চিহ্নিত করেছেন তারেক রহমান। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও চিন্তা করছেন। তাই অনেক নেতাই এখন সতর্ক হয়ে গেছেন। সে কারণেই যেকোনো ইস্যুতে আন্দোলন, নতুন নেতৃত্ব ও গঠনতন্ত্র নিয়ে লন্ডন থেকে যে বার্তা আসছে সেটাই মেনে নিচ্ছেন সিনিয়র নেতারা।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জিয়াউর রহমানের সুযোগ্য উত্তরসূরি তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপিতে ‘নতুন প্রাণ’ সৃষ্টি হয়েছে। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি দলকে গোছানোর কাজ শেষ করে এনেছেন। দলে নতুন প্রাণ সৃষ্টি করেছেন। মহাসচিব আরো বলেন, হাজার হাজার মাইল দূর থেকেই তিনি দলকে পরিচালিত করছেন। দুঃসময়ে সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন।

সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশনায়ক তারেক রহমান সুদূর প্রবাসে বসে প্রখর ধীশক্তি ও অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দল গোছানোর কাজে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নেতাকর্মীরা বর্তমানে সুসংঘবদ্ধ।

ঠিক একই সুরে বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সভায় কথা বলেছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমেদ। তারেক রহমানের প্রশংসায় ভেসে তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের যেসব গুণ ছিল সেসব গুণের অনেকগুলোই তারেক রহমানের মধ্যে দেখতে পাই। তিনি তারেক রহমানের চিন্তা ধারায়, আচার-আচরণে, চলাফেরায় জিয়াউর রহমানের প্রতিচ্ছবিও দেখতে পান বলে জানান। তার প্রত্যাশা, তারেক রহমানই আগামী দিনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রনায়কের ভূমিকা পালন করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

সূত্রমতে, বর্তমানে তারেক রহমানের ছকেই এগুচ্ছে বিএনপি। চেয়ারপারসনকে কারাগারে রেখে নির্বাচন ইস্যুতে সংলাপে যাওয়া, ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা, সাত দফা দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয়েও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং ক্ষুদ্র সংখ্যক বিজয়ীকে সংসদে পাঠানোর মতো সিদ্ধান্ত এসেছে লন্ডন থেকেই। তারেক রহমানের নির্দেশেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রদলের নিয়মিত আড্ডা ও প্রভাব তৈরি, প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ করা, বিভাগীয় পর্যায়ে পুলিশি বাধা সত্ত্বেও সমাবেশ সফল করছেন নেতাকর্মীরা।

নির্ভরযোগ্য দলীয় সূত্রমতে, বর্তমানে জনস্বার্থ ইস্যুতে দলের নেতাকর্মীদের অংশ নেয়ার নির্দেশনা রয়েছে তারেক রহমানের। সম্প্রতি পেঁয়াজকাণ্ডেও দলীয় কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া নতুন সড়ক আইন সংশোধনের দাবিতে ধর্মঘটেও সমর্থন ছিল বিএনপির। খালেদা জিয়ার মুক্তি ইস্যুতে সবাইকে একযোগে রাস্তায় নেমে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি পালনের সম্ভাব্য নির্দেশনা নিয়ে সজাগ রয়েছেন নেতাকর্মীরা। ঠিক এমনি পরিস্থিতিতে সিনিয়র নেতারা এখন তারেক বন্দনায় মেতেছেন।

/এসএইচ

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App