×

জাতীয়

সুনামগঞ্জে জলমহাল নিয়ে উত্তেজনা, নীরব প্রশাসন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০১৯, ০৯:৪০ পিএম

সুনামগঞ্জে জলমহাল নিয়ে উত্তেজনা, নীরব প্রশাসন
সুনামগঞ্জে জলমহাল নিয়ে উত্তেজনা, নীরব প্রশাসন
সুনামগঞ্জে জলমহাল নিয়ে উত্তেজনা, নীরব প্রশাসন

সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক অবস্থিত জৈন্নার হাওরের সোহারা বিল নিয়ে চার গ্রামবাসীর মধ্যে চলছে উত্তেজনা। উপজেলার দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের ধনপুর মৌজার জলমহালটি ব্যবহারকারীদের তিন গ্রামের প্রভাবশালীরা হুমকি দিয়ে মাছ লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। দেশীয় অস্ত্রে-সস্ত্রে স্বজ্জিত হয়ে সরকারি ইজারা উপেক্ষা করে এই সব কাজ। এতে জলমহালে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে ঘটতে পারে খুন খারাপি পারে যেকোন ধরণের ঘটনা। এ ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় স্থানীয়দের মনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

সোহারা জলমহাল ব্যবহারকারী সংগঠনের সদস্য ও স্থানীয় গ্রামবাসী জানান, দিনে ও রাতে ছাতক উপজেলার সেওতরচর, রাতপুর, ধনপুর ও চেচান গ্রামের লোকজন সোহারা বিলে প্রবেশ করে বিলের মাছ লুট করেছে।

সুনামগঞ্জ এলজিইডি হিমলিফ সূত্রে জানা যায়, হাওর অঞ্চলের বন্যা ব্যবস্থাপনা ও জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যবস্থাপনাধীন ছাতক উপজেলার দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের ধনপুর মৌজার জেএল নং-৩১৫, দাগ নং- ২৪০, ৪৬১, ৪১৮, ৩৯৩ এ মোট ৪.১৬ একর সোহারা জলমহালটি উপজেলার চরমহল্লা ইউনিয়নের সেওতরচর, জালালীচর, সিদ্দারচর গ্রামের সোহারা বিল ব্যবহারকারী সংগঠনকে ৪৬.০২.৯০৩৩.০০০.১৪.০০১.১৯-৭২৩ নং স্মারকে, ১৫.১০.২০১৯ইং তারিখে ১৪২৪ বাংলা হতে ২০২২ইং সন এর জুন পর্যন্ত ইজারা প্রদান করা হয়। বিলটি ইজারা দেওয়ার পর থেকেই পার্শবর্তী রাতপুর, ধনপুর, চেচান ও সেওতরচরের কিছু লোকজন অবৈধ ভাবে বিলে প্রবেশ করে মাছ লুট করতে থাকে।

ইজারাদার ও এলাকাবাসী জানান, উপজেলার চেচান গ্রামের আবাব মিয়া ছেলে এলাইছ মিয়া, তারাই মিয়ার ছেলে ইরফান আলী, মৃত ইমানীর ছেলে ছইফুল্লাহ, রাতপুর গ্রামের মৃত উলফত আলীর ছেলে আজমান আলী, মৃত আব্দুল আহাদের ছেলে রুবেল মিয়া, সোনাহর আলীর ছেলে আশক আলী, মনতাজ আলীর ছেলে ফারুক মিয়া, সেওতরচর গ্রামের মৃত আসিদ আলীর ছেলে জুনাব আলী, আরব আলীর ছেলে মেহেরাজ আলী, আয়াজ আলী, হয়াজ আলী ও আশারাফ আলী, মৃত আব্দুল মতলিবের ছেলে লিলু মিয়া, মৃত সিদ্দেক আলীর ছেলে সুন্দর আলীর নেতৃত্বে ধনপুর সহ চার গ্রামের লোকজন সোহারা বিল থেকে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এতে ক্ষতির সম্মুখীন সোহারা বিল ব্যবহার কারী সংগঠনের নিম্ন আয়ের সাধারণ মৎস্যজীবি সদস্যরা।

সরেজমিনে বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সকালে ছাতক উপজেলার জৈন্নার হাওরের সোহারা বিলে গিয়ে দেখা যায়, সেওতরচর, রাতপুর, ধনপুর ও চেচান গ্রামের লোকজন দেশিয় অস্ত্রে-সস্ত্রে স্বজ্জিত হয়ে সরকারি ইজারা অমান্য করে বিলের মধ্যে কোনা জাল, কারেন্ট জাল সহ বিভিন্ন প্রকার জাল দিয়ে অর্ধশত লোক বিলটির মাছ লুট করছেন। সবার হাতেই লাঠি ও ধারালো দেশিয় অস্ত্র। যেন কোন একটি যুদ্ধের রণক্ষেত্র।

উপজেলার চরমহল্লা ইউনিয়নের জালালীচর গ্রামের মৃত হারিছ আলীর ছেলে শামছুল হক জানান, সোহারা বিলটি সুনামগঞ্জ এলজিইডি’র হিমলিপ প্রকল্পের মাধ্যমে জালালীচর, শাহারচর ও সেওতরচর গ্রামের একটি সমিতির মাধ্যমে ইজারা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু, বিলটি ইজারা দেওয়ার পর থেকেই পার্শবর্তী রাতপুর, ধনপুর, চেচান ও সেওতরচরের কিছু লোকজন অবৈধ ভাবে বিলে প্রবেশ করে মাছ লুট করতে থাকে। গত ৩ নভেম্বর ইজারা প্রাপ্ত সংগঠনের লোকজন বিল থেকে মাছ আহরণ করে বিক্রয়ের উদেশ্যে লামাকাজী যাওয়ার পথে চেচান বাজারে উল্লেখিত লোকজন গাড়ি থামিয়ে প্রায় ৮৫ হাজার টাকার মাছ লুট করে ও গাড়িতে থাকা ২জন লোককে আটক করে রাখে। পরে চরমহল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে আটককৃত লোকজনকে মুক্ত করে নিয়ে আসা হয়। এ ব্যাপারে ঐ দিনই ছাতক থানায় সংগঠনের সভাপতি মো. আব্দুল হক বাদি হয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করা হলেও আজ পর্যন্ত কোন অজানা কারণে পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। অভিযোগ দায়ের করার পর থেকেই চার গ্রামের লোকেরা আরো উত্তেজিত হয়ে প্রতিদিন দেশিয় অস্ত্রে-সস্ত্রে স্বজ্জিত হয়ে মাছ লুট করে আসছে।

সেওতরচর গ্রামের মৃত সুরুজ আলীর ছেলে উসমান আলী, ছোয়াব আলীর ছেলে আবরুস আলী, আব্দুন নুর’র ছেলে মনির উদ্দিন জানান, আমাদেরকে তারা প্রাণে হত্যার হুমকি দিয়ে বিলের মাছ লুট করে আসছে। নিরুপায় হয়ে প্রশাসনের দারস্থ হলেও কোন কাজ হচ্ছে না। গত ১৭ নভেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে পুলিশি সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করলেও কোন সহযোগিতা পাইনি। যে কোন সময় একটি বড় সংঘর্ষ হতে পারে এই বিলে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সেওতেরচর গ্রামের মৃত আসিদ আলীর ছেলে জুনাব আলী জানান, আমরা যে জলমহালে মাছ ধরছি সেটি সোহারা বিল নয়। এটি জৈন্নার হাওর। সোহারা বিলটি অনেক আগেই ভরাট হয়ে গেছে এবং উপজেলা মুক্তিযোদ্ধারা ১০০ বছরের জন্য ইজারা নিয়ে তাদের ঘরবাড়ি তৈরি করে বসবাস করছেন। তারা সোহারা বিল ইজারা নিয়ে আমাদের জৈন্নার হাওরে মাছ ধরতে চায়।

এ ব্যাপারে উপজেলার চরমহল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত জানান, গত ৩ নভেম্বর তারিখে চেচান বাজারে বিলের ইজারাদারদের মাছের গাড়ি আটক করে মাছ লুট করে ২ লোককে আটক করে রাখেন। পরে আমি গিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। কিন্তু মাছ উদ্ধার করতে পারিনি। এটা সম্পূর্ণ অন্যায় কাজ।

এ ব্যাপারে হিমলিফ প্রকল্পের কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লাহ রহমান জানান, ইজারা দেওয়ার পর হতেই উল্লেখিত লোকজন বিলে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে মাছ লুট করে আসছে। এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।

এ ব্যাপারে ছাতক উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মো. গোলাম কবির জানান, আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঐ বিলে লোকজনদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। আমি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে পাঠিয়ে ছিলাম। এখানে কোন সংর্ঘষের আশংকা দেখা দেয়ার সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App