×

সাময়িকী

শাহরিয়ার কবিরের কিশোরসাহিত্য

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০১৯, ০৮:৪৬ পিএম

শাহরিয়ার কবিরের কিশোরসাহিত্য

শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ১০১ সদস্যবিশিষ্ট একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটির বর্তমানে সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন শাহরিয়ার কবির।

বাংলায় কিশোর সাহিত্য ধারাবাহিকভাবে অবহেলিত। সবাই শুধু বড়দের জন্য লিখতে চায়, বড়দের কথা লিখতে চায়। বড়দের লেখার মধ্যে অন্যায় কিছু নেই। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অনুভূতিগুলো গাঢ় হয়, মানুষ অনেক বেশি সংবেদনশীল হয়। সেই চিন্তাগুলো সাহিত্যে স্থান পেলে সাহিত্যই মহিমান্বিত হয়। পরিণত সাহিত্য তাই খুবই জরুরি। তবে তাই বলে যে কিশোর সাহিত্যকে অবহেলা করতে হবে, এমন তো কথা নেই। আমাদের শিশুসাহিত্য এখন কী অবস্থায় আছে? মানের দিক দিয়ে কোথায় আছে? বইগুলো ছোটরা পড়ে কিনা? পড়লে তাদের মানসিক বিকাশে সেগুলো কতটুকু সহায়ক? বইগুলোর প্রকাশনার মানও সঠিক কিনা? এসব প্রশ্ন আমরা ভেবে দেখি না। মুদ্রণ প্রযুক্তির কারণে প্রতি বছর ছোটদের অগণিত বই প্রকাশিত হচ্ছে। আমরা মুখে বলে বেড়াচ্ছি, আমাদের শিশুসাহিত্য অনেক সমৃদ্ধ। শিশুসাহিত্যের বিকাশ উড্ডয়নশীল। বাংলাদেশ নেই, ধানখেত নেই, বিস্তীর্ণ মাঠ নেই, নদী নেই, শৈশব নেই, সেই সংস্কৃতি শিশুর ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এভাবে আগামী প্রজন্মকে সাংস্কৃতিক উদ্বাস্তু বানানো কি লেখকের কাজ? বিদেশি সস্তা চটুল রূপকথাগুলো বাজারে ছেয়ে আছে। হ্যান্স আন্দেরসেনের গল্প বা গ্রিম ভাইদের গল্প শিরোনামে কত বই দেখা যায়। কিন্তু দেশীয় রূপকথাগুলো নিয়ে আমাদের শিশুসাহিত্যিকদের নেই কোনো মাথাব্যথা? এটা কি আমাদের অক্ষমতা নাকি ঔপোনিবেশিক মন ও মানসিকতা? নাকি ইংরেজি রূপকথার বইয়ের সস্তা ও চটুল উপস্থাপনায় বিভ্রান্ত আমাদের কতিপয় লেখক। এগুলো একেবারেই বাণিজ্যিক বই। সেই ধরনের বইয়েরও সস্তা ও ভুল অনুবাদে এরকম বই হরদম বের হচ্ছে। এসব বইয়ের মাধ্যমে আমরা মনোজগৎকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছি। তাকে চিন্তাশূন্য একটা পৃথিবী তৈরি করে দিচ্ছি। যখন বেশি প্রয়োজন নিজস্বতা, নিজের ভুবন, স্বাদেশিকতা, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির কাছে তাকে সমর্পিত হতে শেখানো- তখন এই উন্মুল করে দেওয়ার প্রচেষ্টা কোনোভাবেই শুভকর নয়। শাহরিয়ার কবির এদিক দিয়ে ব্যতিক্রমী লেখক। ছোটদের জন্য তিনি অনেক বই লিখেছেন। তার মধ্যে আছে- নুলিয়াছড়ির সোনার পাহাড়, একাত্তরের যীশু, সীমান্তে সংঘাত, হানাবাড়ির রহস্য, নিশির ডাক, বার্চবনে ঝড়, কার্পেথিয়ানের কালো গোলাপ, বহুরূপী, লুসাই পাহাড়ের শয়তান, ব্যাভারিয়ার রহস্যময় দুর্গ, সাধু গ্রেগরির দিনগুলি, মরু শয়তান, একাত্তরের পথের ধারে, জাহানারা ইমামের শেষ দিনগুলি প্রভৃতি। যখন শাহরিয়ার কবিরের মা মারা যান, তিনি তখন অনেক ছোট। তার বয়স তখন মোটে ৪ বছর। তাই তার মায়ের কথা খুব মনে থাকলেও, ঘটনা তেমন মনে নেই। বেশিরভাগ ঘটনাই তার বাবা-খালাদের কাছে শোনা। শাহরিয়ার কবিরের মায়ের নাম ছিল সাঈদা খাতুন। তার মা ছিলেন যেমন গুন্দরী, তেমনি আত্মমর্যাদাশীল। অত্যন্ত সাহসী আর সেই সঙ্গে জেদী। তিনি ধার্মিক ছিলেন, কিন্তু কোনো গোঁড়ামি ছিল না তার মধ্যে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যেমন পড়তেন, তেমনি গুন্দর করে শাড়িও পরতেন। তার সাহসের একটা গল্প শাহরিয়ার কবিরদের বাসায় এখনো খুব বলাবলি হয়। একবার নাকি তাদের বাসায় ডাকাত পড়েছিল। তখন তারা থাকতেন পুরনো ঢাকার রূপচাঁদ লেনে। তার মা তখন ছিলেন রান্নাঘরে। ডাকাত এসেছে শুনে তিনি একেবারে বঁটি নিয়ে তেড়ে গেলেন। তাড়া খেয়ে ডাকাতরা পালিয়ে বেঁচে ছিল। ঘরসংসারের পাশাপাশি তিনি নারী আন্দোলনও করতেন। রাজনীতি সচেতনও ছিলেন। ’৫৪ সালের নির্বাচনে মায়ের নারী আন্দোলনের অন্যতম সঙ্গী শামগুন্নাহার মাহমুদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন যুক্তফ্রন্টের হয়ে। শামগুন্নাহারের হয়ে মিটিং-মিছিলে যোগ দিতেন মা। সঙ্গে নিয়ে যেতেন ছোট্ট শাহরিয়ার কবিরকে। তার বড়ভাইকে কিন্তু নিতেন না। অথচ তখন তিনি খুবই ছোট। স্কুলেও ভর্তি হননি।

শাহরিয়ার কবির নাকি তার ভাইদের মধ্যে সবচেয়ে কালো ছিলেন। তাই নিয়ে তাকে কত কথাই না শুনতে হতো ছোটোবেলায়। মা কিন্তু তাকে বেশি আদর করতেন। এমনকি তার বড়ভাইকে মারলেও, তাকে কখনো মারেননি। তবে তার মা তাকে না মারলেও, অন্য দুই ভাইয়ের মতো তাকেও অদ্ভুত সব শাস্তি দিতেন। তার মা কিন্তু গান খুব ভালোবাসতেন। তখন ছিল কলের গানের যুগ। কলের গানের একগাদা রেকর্ড ছিল তার। সবই রবীন্দ্রসংগীতের। রেকর্ডের গানগুলোই সারাদিন গুনগুন করে গান গাইতেন তিনি। শাহরিয়ার কবির আধুনিক লেখক। সত্তর দশকে তিনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে এসে যান। পড়ার মতো বলতে ছিল শাহরিয়ার কবিরের প্রতিটি বই। প্রতিটি লেখা। স্কাউটিং, প্রবাস ভ্রমণ, উঠতি বয়সের কুগুম কুগুম প্রেম, সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন ইত্যাদি নিয়ে জানতে পারতাম শাহরিয়ার কবিরের বই খুললে। এভাবে কেটেছে আমাদের প্রথম কৈশোর। সে সময়ের খুব প্রিয় বইগুলোর একটি ছিল নিকোলাস রোজারিওর ছেলেরা। কিশোর পাঠকদের জন্য লেখা শাহরিয়ার কবিরের একাত্তরের পথের ধারে একেবারে ছোটোদের জন্য নয়, সব ধরনের পাঠকদের জন্য লেখা। মুক্তিযুদ্ধের কথা জানতে চায় বর্তমান প্রজন্ম। এই বইয়ে সেই সময়ের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব জাহানারা ইমামের নাম উল্লেখ করা হয়েছে কয়েকবার। উপন্যাসটিতে মুক্তিযুদ্ধকালীন নানা ঘটনার বর্ণনা রয়েছে। তার লেখা বইয়ে একটা অদ্ভুত আকর্ষণ ছিল। মন যেন হারিয়ে যায় সমবয়সী একদল কিশোরের মাঝে। একজন পাঠকের বর্ণনায় পাওয়া যায়- ‘সম্ভবত সেখানেই পড়েছিলাম, গল্পের কোনো এক বখাটে বড়ভাই বছরের পর বছর ধরে স্কাউটিং ক্যাম্পে নানা রকম গেয়ে যেত। তখন পর্যন্ত শুধু গানটির দুলাইন জানতাম। বই পড়েই খুঁজে-পেতে পুরো গান শুনেছিলাম। শাহরিয়ার কবিরের বই পড়ার অনুভূতিগুলো যেন সেই থেকেই আটকে গেছে ‘খরবায়ু বয় বেগে’র মধ্যে। প্রথমে মনে পড়ে নিকোলাস রোজারিওর ছেলেরা-র কথা। এরপর একে একে মনে পড়ে যায় নুলিয়াছড়ির সোনার পাহাড়, পাথারিয়ার সোনার খনি, কার্পেথিয়ানের কালো গোলাপ, বার্চবনে ঝড়, সীমান্তে সংঘাত, অনীকের জন্য ভালবাসা, লুসাই পাহাড়ের শয়তান, ব্যাভারিয়ার রহস্যময় দুর্গ, হানাবাড়ির রহস্য। সমাজ, রাজনীতি, ধর্ম, দর্শন, ইত্যাদি নিয়ে অনেক তর্ক চলে বড়দের মহলে। খুব বড় একটা ব্যাপার ভুলে যায় সবাই। মানুষের মনন স্থায়ী রূপ নিয়ে ফেলে তার কৈশোরে। শত চেষ্টায়ও এরপর আর তার চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন সম্ভব না। বিশ্বাসের মধ্যাকর্ষণের কাছে জ্ঞানের বহুমুখী বিস্তার মার খেয়ে যায়। রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, রাজসভায় মিছিল-সমাবেশ, বা মিডিয়ায় জ্ঞানগর্ভ আলোচনা কৈশোরোত্তীর্ণ মানুষের মনের ওপর খুব কমই প্রভাব রাখতে পারে।’ বাংলাদেশের কিশোর সাহিত্য এক সময় শুধু ধর্মের কথা বলত। উপদেশের কথা বলত। যে উপদেশ কোনো দিন ছোটরা মেনে নিত না। বলা যেতে পারে আমাদের দেশের সাহিত্য বিশ শতকের ষাটের দশক পর্যন্ত আধুনিক হয়ে উঠতে পারেনি। অবশ্য পশ্চিম বাংলার সাহিত্যকরা তখন অনেক আধুনিক হয়ে উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত ষাটের দশকের মাঝামাঝি এসে আমাদের কিশোর সাহিত্য হঠাৎ দিক পরিবর্তন করে। হিলফুল ফুজুল, সাহাবিদের গল্প থেকে বেরিয়ে আসে বাংলাদেশের কিশোর সাহিত্য। এখানে অগ্রগণ্য হিসেবে বেশ কিছু লেখক কাজ করেছেন। এ সময় উঠতি প্রজন্মের কাছে কৈশোরের মৌলিক কিছু অনুভূতি তুলে ধরেছিলেন শাহরিয়ার কবির, আলী ইমাম, মুনতাসীর মামুন আর মুহম্মদ জাফর ইকবালের মতো লেখকরা। অধীর আগ্রহে তাঁদের নতুন বইয়ের অপেক্ষা, আর বই এলেই গোগ্রাসে গিলে ফেলার সেই সময়টা মনে আটকে আছে সেই পাঠকবন্ধুর ভাষায় ‘খরবায়ু বয় বেগে’র মাঝে। কৈশোরের দ্বন্দ্ব আর ভয়গুলোর শৃঙ্খল বারবার ঝনঝন করে ওঠে এই একটি গানে। নিজের মনে প্রশ্ন জাগে, কতটুকু আসতে পেরেছি সেই দিনগুলো থেকে। স্বপ্নগুলো স্বপ্নই থেকে গেল। কান পাতলেই ঝন, ঝন, ঝন। গরমের ছুটি বা হয়তো ঈদের ছুটি। অথবা পরীক্ষা শেষে অবসর সময় কাটছে। একটা নতুন বই পেলে বেশ হতো। কিশোরপাঠ্য উপন্যাসের কথা ভাবতে গেলে নুলিয়াছড়ির সোনার পাহাড়-এর কথাই সবার আগে মনে পড়ে। শাহরিয়ার কবিরের লেখা বেশ কিছু জনপ্রিয় কিশোর উপন্যাস আছে। কিন্তু এই বইটি তার মধ্যে বিশেষভাবে বিখ্যাত। নেলীখালার চিঠি পেয়ে বাবুকে নিয়ে নুলিয়াছড়িতে নেলীখালার নতুন কেনা বাড়িতে দুমাসের গরমের ছুটি কাটাতে এল আবির আর বাবু। পাহাড়, সাগর, সোনার খনি, চোরাকারবারিদের উৎপাত আর রহস্য। সেই সঙ্গে নদীর ওপারে পাহাড়ের ওপরে দেখা গেল ভূতের আনাগোনা। ললি আর টুনিকে সঙ্গে নিয়ে রহস্যের সমাধানের জন্য উঠে পড়ে লাগল দুই বন্ধু। প্রতিটি কিশোরের মনে নিজস্ব একটা রহস্যময়তা আছে। একটা অদ্ভুত সময় এটা। এই সময়টার একটা চমৎকার উপস্থাপনা আছে এই বইটিতে। বাবু, টুনি, ললি, আবির, এরা সেই সময়টা পার করছে, যখন তারা না প্রাপ্তবয়স্ক, না অল্পবয়সী। যা কিছু এতদিন নাগালের বাইরে ছিল, জীবনের সেই সব রহস্যের দরজাগুলো একটু যেন ফাঁক হয়ে উঁকি দিচ্ছে। কিন্তু পুরোপুরি নাগালের ভেতর আসতে চাইছে না। কেউ তাদের বড় বলে ভাবছে না ঠিকই, কিন্তু কেমন করে বড়দের ব্যাপারগুলোতে ঠিকই জড়িয়ে যাচ্ছে ওরা। জীবনের দ্বন্দ্বগুলো ওদেরও টেনে নিচ্ছে, স্পর্শ করছে ওদের এ যাবৎ নিশ্চিন্ত-জীবনকে। পরীক্ষা শেষ, গরমের ছুটি, এই প্রথম বাবা-মা’কে ছেড়ে, ট্রেনে করে বহু দূরে ঘুরতে যাওয়া। বাবু আর আবিরের জন্য এটাই অনেক বড় অ্যাডভেঞ্চার। কিন্তু ওরা কি জানত, একটা সত্যিকারের অ্যাডভেঞ্চার অপেক্ষা করছে ওদের জন্য নুলিয়াছড়িতে? বার্মার সীমান্ত, সোনার খনি, গভীর রাতে আলোর সংকেত, অচেনা লোকেদের সন্দেহজনক আনাগোনা। সেইসঙ্গে নায়কের মতো দেখতে মেজর জাহিদ। আর নতুন বন্ধুতার হাতছানি। বাবু আর টুনি, ললি আর আবিরের এই ঝগড়া, এই ভাব, মান-অভিমান কিশোর পাঠকের জন্য বাড়তি আকর্ষণ। বারবার খুলে পড়া, পড়তে পড়তে কতই মনে হবে, আহা, আমিও যদি ওদের একজন হতাম! চারজন একসঙ্গে জঙ্গলে-পাহাড়ে ঘোরাঘুরি, শত্রুপক্ষের ওপর নজরদারি করা, গা-ছমছমে রাতে বেরিয়ে মিথ্যামিথ্যি ভয় পাওয়া, আবার সত্যিকারের বিপদে পড়া। নুলিয়াছড়ির সোনার পাহাড় যারা পড়েছে, তাদের পড়তেই হবে পাথারিয়ার খনি রহস্য। তারপর কী হলো তা জানতে হবে না! নেলীখালা আবার কী নতুন কাণ্ড ঘটাল, জাহিদ মামারই-বা কী হলো, আর শয়তান পাকড়াশিকে শেষপর্যন্ত পাকড়াও করা গেল কি না- সেসব জেনে নিতে হবে তো! নুলিয়াছড়ির সোনার পাহাড় না পড়ে যারা বড় হয়েছেন তাদের প্রতি আমার খানিকটা করুণা হয়। কিশোরদের জন্য শাহরিয়ার কবির অবশ্য পাঠ্য। শাহরিয়ার কবিরের বই এখনো পড়ছি। শাহরিয়ার কবির আমাদের প্রিয় লেখক। তাঁর লেখা বই- ওদের জানিয়ে দাও। এটি একটি রাজনৈতিক উপন্যাস। নিষিদ্ধ রাজনীতির মানুষরা এর মূল সব চরিত্র। সময়কাল ১৯৭৪। অস্থির এক সময়। দুর্ভিক্ষ তখন দেশের পথেঘাটে। রাজু, জাফর আর দীপু। এই তিনজনের ওপর দায়িত্ব পড়েছে শ্রেণিশক্র খতমের। সাহেবালী একজন জোতদার, তাকে খতম করতে হবে। দীপুর প্রথম খতম। জাফরের অভিজ্ঞতা ৩শর বেশি খতমের। রাজু ওদের বড় নেতা। তিনজনই বেড়িয়ে যায় খতমের উদ্দেশ্যে। তারপরেই বসে দলের গোপন বৈঠক। বিষয় রাজু আর জাফররা খতম লাইন মানতে চাচ্ছেন না। তারা ভাবতে শুরু করছে যে এতে বিপ্লব হবে না। যে কৃষকের জন্য খতম, সেই কৃষক কিন্তু সচেতন না। ফলে আগে ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। এই নিয়ে দলে শুরু হয়েছে দ্বন্দ্ব। রফিক দলের মূল নেতা। গোপন বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় বিপ্লবকে এগিয়ে নিতে হলে হঠকারীদের তাদের সরিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। পার্টির মধ্যে আপোষের বীজ রাখলে পার্টিরই ক্ষতি। সিদ্ধান্ত হয় রাজু ও জাফরকে খতম করতে হবে। দায়িত্ব নেয় কেন্দ্রীয় কমিটির কমরেড মানু। পুরবীর মধ্যেও খতম নিয়ে দ্বিধা দেখা দিয়েছে। পুরবী গিয়েছিল পাশের জেলায় সভা করতে। ফেরার কথা ছিল না, কিন্তু ফিরতে হলো। গোপনে শুনে ফেলে কেন্দ্রীয় কমিটির এই গোপন সিদ্ধান্ত। সাহেবালীকে খতম করে ফিরছিল ওরা। পথে যোগ দেয় পুরবী। ওরা চারজন পালায়। সেই পালানোটাও সহজ হয় না। পুলিশের হাত থেকে বেঁচে যায় দুবার। জঙ্গলে হেঁটে দীর্ঘ রাস্তা পার হতে হয়। ট্রেনে উঠে ধরা পড়তে পড়তে বেঁচে যায়। এভাবেই একদিন পৌঁছে যায় ঢাকায়। সেখান থেকে চট্টগ্রামের জেলা পাড়ায়। এখানেও আছে প্রেম ভালোবাসা ও দ্বন্দ্ব। পুরবী বা রাজু। কিংবা পুরবী ও জাফর। বিয়েও করতে হয় পুরবীকে। কিন্তু সময়টা গোপন রাজনীতির জন্য সহজ সময় ছিল না। সিরাজ শিকদারকে মেরে ফেলা হয়। চরমপন্থীদের ধরতে জারি হয় জরুরি অবস্থা। তার আঘাত লাগে এই চারজনের জীবনেও। শাহরিয়ার কবিরের স্কুল জীবনের কাহিনি নিয়ে লেখা সাধু গ্রেগরীর দিনগুলি বইটা আমার কিশোর মনে যে ছাপ ফেলেছিল তা এখনও কিছুটা হলেও বিদ্যমান। ভালো লাগত তার বইয়ের চরিত্রের নামগুলো। সব মিলিয়ে চমৎকার বলা যায়। এভাবে স্বাধীন বাংলাদেশই হয়ে উঠেছে বাংলাসাহিত্যের রাজধানী। নতুন যুগের সিাহিত্যও সমৃদ্ধি অর্জন করবে আমাদের দেশেই। মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্য শিরোনামে বাংলাদেশীয় যে সাহিত্য প্রচলিত হয়েছে তা পৃথিবীর কোথাও নেই। এই সাহিত্য একান্তই আমাদের। নিজস্ব সাহিত্য। আমাদের জীবন, জনপদ ও সংগ্রামের সাহিত্য। এই মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্যের পথ ধরেই আমাদের সিাহিত্য নতুন মাত্রা পেতে পারে। আমরা বিদেশি ধার করা, অতি ব্যবহৃত, অতি চর্চিত সিাহিত্য থেকে মুক্তি চাই। দেশজ-সাহিত্যের রাঙাপথ দিয়ে আমরাই এগিয়ে যাব নতুন সূর্যের কাছে। কারণ জসীমউদ্দীন, হাবীবুর রহমান, সাজেদুল করিম, শাহরিয়ার কবির, আলী ইমাম, মুনতাসীর মামুন, মুহম্মদ জাফর ইকবালের হাত দিয়ে মৌলিক-প্রতিম যেসব গ্রন্থ রচিত হয়েছে সেই মৌলিক পথই হবে আমাদের লক্ষ্য। গুবাতাস বহমান নিয়ত। আমাদের সাহিত্যে আমরা বাংলাদেশকে চাই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App