×

অর্থনীতি

বেহাত হচ্ছে যুবকের সম্পত্তি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০১৯, ১০:২৬ এএম

বেহাত হচ্ছে যুবকের সম্পত্তি
অতি গোপনে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে যুব কর্মসংস্থান সোসাইটির (যুবক) সম্পত্তি। তা ছাড়া গ্রাহকের টাকায় কেনা সংস্থাটির ৪০টি বড় ধরনের সম্পত্তির কোনো হদিসই নেই। যুবক বিষয়ে সরকার যে কমিশন গঠন করেছিল তার চ‚ড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী সারাদেশে বিভিন্ন নামে যুবকের ৯১ খণ্ড জমি, ১৮টি বাড়ি ও ১৮টি কোম্পানি রয়েছে। এসব সম্পত্তি নিয়ে নানা ধরনের জটিলতাও রয়েছে। কোনোটার বায়না হয়েছে রেজিস্ট্রেশন হয়নি। কোনোটার আবার রেজিস্ট্রেশন হলেও মালিকানা স্বত্ব দাখিল করা হয়নি। কিছু কিছু সম্পদ বেদখল হয়ে আছে। আবার কোথাও কোথাও গোপনে জমি বা বাড়ি বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, গোপন করা সম্পত্তি বিক্রির জন্য মাঠে নেমেছে যুবকের কতিপয় উদ্যোক্তা। সরকার গঠিত ‘যুবকসংক্রান্ত সর্বশেষ কমিশনের’ কাছে ওইসব সম্পত্তির অবস্থান ও পরিমাণের কোনো তথ্যই নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, পুরনো গ্রাহকদের জমি দেয়ার নতুন প্রলোভন দিয়ে টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে জমি দেয়ার কথা বলে নতুন করে গ্রাহকদের কাছ থেকে কিস্তি নিচ্ছে যুবকের লোকজন। নতুন পরিকল্পনায় জেলা পর্যায়ে আড়াই লাখ টাকা ও ঢাকার আশপাশে তিন লাখ টাকায় তিন কাঠার প্লট দেয়ার আশ্বাস দেয়া হচ্ছে। অনেকেই এ প্রলোভনের কবলে পড়ছেন। এর মধ্যে সংগঠনটির সবচেয়ে বেশি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে পটুয়াখালী, বরিশাল, খুলনা, কুমিল্লা, ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলায়। যুবক কমিশনের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রগ্রেসিভ হাউজিং লিমিটেড, ফ্যান্টাসি রিয়েল এস্টেট, নিউ ফ্যান্টাসি রিয়েল এস্টেট, নারায়ণগঞ্জ হাউজিং লিমিটেড, ভিক্টোরিয়া হাউজিং লিমিটেড, ময়মনসিংহ হাউজিং লিমিটেড, ইউনিক হাউজিং লিমিটেড, পটুয়াখালী হাউজিং লিমিটেড, রাজশাহী হাউজিং লিমিটেড, কিংডম হাউজিং লিমিটেড, টিউলিপ হাউজিং লিমিটেড, ইয়ুথ অ্যালায়েন্স প্রপার্টিজের (পাবলিক) তথ্য কমিশনের কাছে গোপন করা হয়। এ ছাড়া যশোর রিয়েল এস্টেট, খুলনা রিয়েল এস্টেট, প্লান্টে প্রপার্টিজ ও বরিশাল হাউজিং লিমিটেডের সম্পত্তির তথ্য দেয়া হয়নি। তথ্য গোপনের তালিকায় আছে জেনারেল হাউজিং লিমিটেড, জে এম হাউজিং লিমিটেড, গ্রিন বাংলা হাউজিং লিমিটেড ও পল্লবী হাউজিং লিমিটেড। এ ছাড়া সৈকত প্রকল্প-১, ২, খেজুরতলা প্রকল্প, দ্য চিটাগাং ইলেক্ট্রনিক্স, জেসমিনাস অ্যাপার্টমেন্ট, কর্ণফুলী রিভারভিউ প্রকল্প, এসটিটি প্রপার্টিজ লিমিটেড, সেতুবন্ধন সিটি প্রকল্প, বারৈয়ার হাট প্রকল্প, মীরসরাই প্রকল্প ১, ২, চটগ্রাম উত্তর সিটি প্রকল্প-২, সীতাকুণ্ডু প্রকল্প ১ ও ২, হাটহাজারী প্রকল্প-১, চটগ্রাম দক্ষিণ সিটি প্রকল্প-১, কুমিল্লা প্রকল্প, সীতা ভ্যালি প্রকল্প ও রোজ গার্ডেনের প্রকল্পের তথ্যও গোপন করা হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, উল্লিখিত সম্পত্তি এখন গোপনে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি সম্পত্তি দেয়ার নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে নতুন করে টাকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। সম্প্রতি খুলনা শামছুর রহমান রোডে অবস্থিত এক বিঘার একটি সম্পত্তি আড়াই কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। এ সম্পত্তির বর্তমান বাজারমূল্য ৪০ কোটি টাকা। স্থানীয় গ্রাহকরা জানতে পেরে আদালতে মামলা করায় আদালত ৪৭৮১/১৭ কবলা দলিল বিক্রির কার্যক্রম স্থগিত করে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশ দেয়া হয়। এ ছাড়া চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডু উপজেলায় যুুবক ফোনের টাওয়ার স্থানীয় এক চেয়ারম্যানের কাছে বিক্রি করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীর পল্টনে বি কে টাওয়ার বিক্রির পাঁয়তারাও চলছে। ইতোমধ্যে কয়েকজন ক্রেতা এই টাওয়ার কেনার ব্যাপারে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। যুবকে ক্ষতিগ্রস্ত জনকল্যাণ সোসাইটির হিসাবে সারাদেশে ছয় হাজার ১২৪ কোটি ৮০ লাখ ৬৪ হাজার টাকার সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে জমির পরিমাণ তিন হাজার একর। এ ছাড়া আবাসন, বৃক্ষ, বনায়নসহ মোট প্রকল্প ১৮টি। ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশে অন্তত ১৮টি বহুতল বাড়িও রয়েছে। আর যুবকের কাছে গ্রাহকদের পাওনা মাত্র দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা। কিন্তু এর বাইরে যুবকে ক্ষতিগ্রস্ত জনকল্যাণ সোসাইটি মাঠপর্যায়ে তদন্ত করে আরো এক হাজার একর জমির সন্ধান পেয়েছে বলে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে সংগঠনটি। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিশনের দেয়া প্রতিবেদনের তথ্যমতে, সারাদেশে যুবকের জমি রয়েছে দুই হাজার ২০০ একর। ১৮টি বাড়ি ও ১৮টি প্রকল্প; যার আর্থিক মূল্য তিন হাজার কোটি টাকার মতো। কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুবকের অধিকাংশ সম্পত্তি নিয়ে নানা ধরনের জটিলতাও রয়েছে। কোনোটার বায়না হয়েছে রেজিস্ট্রেশন হয়নি। কোনোটা আবার রেজিস্ট্রেশন হলেও মালিকানাস্বত্ব দাখিল করা হয়নি। কিছু কিছু সম্পদ বেদখল হয়ে আছে। আবার কোথাও কোথাও গোপনে জমি বা বাড়ি বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। ফলে এসব সম্পত্তি বিক্রি করতে গেলেও ঝামেলায় পড়তে হবে সরকারকে। এ ছাড়া যুবকের নামে ব্যাংকের নগদ টাকা পাওয়া গেছে খুবই সামান্য। ৪৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংকে মাত্র ৭৮ লাখ টাকার সন্ধান পায় কমিশন। আর স্থাবর সম্পত্তির যে সন্ধান পাওয়া গেছে গ্রাহকের দায়ের তুলনায় তা সামান্য। এ বিষয়টি নিয়েও আদালতে একাধিক মামলা রয়েছে। মামলা মাথায় নিয়ে যুবকের বেশির ভাগ কর্মকর্তা পলাতক রয়েছেন। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে যুবকের ক্ষতিগ্রস্ত জনকল্যাণ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, গভর্নরসহ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে তারা নতুন করে চিঠি দিয়েছেন। সরকার আন্তরিক হলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। কেননা, গ্রাহকদের যে পাওনা তার কয়েক গুণ বেশি সম্পদ রয়েছে যুবকের নামে। এ ছাড়া এ-সংক্রান্ত একাধিক মামলাও চলছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকার চাইলে দোষীদের সাজা দিয়ে ভুক্তভোগী ক্ষতিগ্রস্তদের পাওনা ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমরা চাই আর্থিক খাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা সমস্যা থাকবে না। হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আর যুবক ইস্যুটিও বেশ পুরনো। গ্রাহকরা আমাদের কাছে আবেদন করেছেন। এর সঙ্গে জনস্বার্থের বিষয়টি জড়িত। তাই এ সম্পর্কে ভালোভাবে জানার চেষ্টা করছি। গ্রাহকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া যাবে। তবে এটি সময়সাপেক্ষ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App