×

আন্তর্জাতিক

পাশ কাটানোর সুযোগ পাবে না মিয়ানমার

Icon

nakib

প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০১৯, ১২:৩৭ পিএম

পাশ কাটানোর সুযোগ পাবে না মিয়ানমার

রোহিঙ্গা জনপদে গণহত্যা ও তাদের জাতিগত নিধনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) পশ্চিম আফ্রিকার ছোট্ট দেশ গাম্বিয়ার মামলায় বড় বেকায়দায় পড়েছে মিয়ানমার। দীর্ঘকাল যাবৎ রোহিঙ্গাদের ওপর নানামুখী নিপীড়ন ও অত্যাচার চালিয়ে এলেও এর আগে কোনো ধরনের শক্ত জবাবদিহিতার মুখে পড়তে হয়নি সামরিক জান্তা নিয়ন্ত্রিত দেশটিকে। গোটা বিশ্ব সব কিছু দেখেও ভূরাজনৈতিক স্বার্থের প্রশ্নে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি না দেখার ভান করায় তার ফায়দা লুটেছে মিয়ানমার, আর গভীরতর হয়েছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংকট। কিন্তু এবার নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা আইসিজেতে গত সপ্তাহে করা গাম্বিয়ার মামলার কারণে নতুন প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে; এর কারণে চলমান ঘটনাবলি এক নতুন মোড় নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এর আগেও একবার রোহিঙ্গা-গণহত্যার দায়ে মিয়ানমার বিরুদ্ধে মামলায় উদ্যোগী হয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) কৌঁসুলি গাম্বিয়ার আইনজীবী ফাতু বেনসুদা। কিন্তু মিয়ানমার ওই আদালতের অনুস্বাক্ষরকারী না হওয়ার কারণে সেবার অভিযোগ এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল তাদের। কিন্তু এবারকার মামলাটি হয়েছে আইসিজেতে, যেটি জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা এবং মিয়ানমার নিজেও ১৯৪৮ সালের জেনেভা কনভেনশনের অনুস্বাক্ষরকারী। ফলে আইসিজের কার্যক্রমের দায়বদ্ধতা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই তাদের সামনে। এবারকার এ মামলা রুজুর নেতৃত্বে রয়েছেন গাম্বিয়ার বিচারমন্ত্রী আবু বকর আমবাদু।

এর আগে রুয়ান্ডায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। তাছাড়া, আইসিসিতে ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করা গেলেও আইসিজেতে কেবল একটি রাষ্ট্র অন্য একটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। এ উদ্যোগের শুরু হয় মূলত ২০১৮ সালে। ওই বছর বিশ্বের ইসলামি জোট ওআইসির সম্মেলন হয় বাংলাদেশে। সেখানে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের অংশগ্রহণের কথা থাকলেও অনিবার্য এক পরিস্থিতিতে গাম্বিয়ার পক্ষ থেকে সম্মেলনে অংশ নেন সেদেশের বিচারমন্ত্রী আবু বকর আমবাদু। বাংলাদেশে অবস্থানকালে তিনি রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি সরেজমিন দেখার সুযোগ পান এবং তখনই এর প্রতিকারে উদ্যোগী হওয়ার সিদ্ধান্ত হন। পরবর্তীতে ওআইসির ৫৭ সদস্য রাষ্ট্রের সমর্থনে তাদের পক্ষ থেকে এই মামলা রুজু করে গাম্বিয়া।

এবারের মামলায় কোন বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে, কেন অন্য কোনো দেশ না হয়ে গাম্বিয়াই মামলাটি রুজু করল এবং এর মধ্য দিয়ে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের প্রতিকারের কাজটি কতটুকু উপকৃত হবে- এসব বিষয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পরিচালক পরম প্রীত সিং বলেন, গণহত্যা প্রতিরোধে গৃহীত জাতিসংঘের কনভেনশনে অনুস্বাক্ষরকারী হওয়ার কারণে মিয়ানমার এবার দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ পাবে না। আর এ সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছে গাম্বিয়া।

এর আগে আইসিজে বসনিয়া এবং ক্রোয়েশিয়া গণহত্যার ঘটনায় বিচার নিশ্চিত করেছে। প্রক্রিয়াটি যদিও ছিল বেশ সময়ক্ষেপী। ১৯৯৫ সালে সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হয়। ১৯৯৭ সালে মামলা হয় আদালতে। ত্বরিত পদক্ষেপ নিয়ে ১৯ দিনের মধ্যে যে কোনো ধরনের নিপীড়নমূলক তৎপরতার ওপর ইনজাংশান জারি করে আদালত। এবারও সে ধরনেরই কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে আদালত। আশা করা হচ্ছে, চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই এ বিষয়ক নির্দেশনা দেবে আদালত। মিয়ানমারকে তারা বলতে পারে, গণহত্যা ও রোহিঙ্গা উচ্ছেদ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য। নির্যাতনের সাক্ষ্যপ্রমাণ ধ্বংস না করার নির্দেশও দিতে পারে তাদের। তাছাড়া গাম্বিয়ার এই মামলা সক্রিয় হওয়ায় আন্তর্জাতিক নজরদারির আওতায় থাকবে মিয়ানমার।

ফলত মাঠপর্যায়ে আরো সতর্ক এবং সংযত আচরণের বাধ্যবাধকতার মধ্যে থাকবে মিয়ানমার ও তার নেতৃত্ব। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষেও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ ও পরিবেশ তৈরি হবে। রাষ্ট্র কোনো নামহীন অস্তিত্ব নয়। সেক্ষেত্রে একটি স্বাধীন আঞ্চলিক আদালত গঠন হতে পারে। আইসিসির ব্যাপারে ‘হাত ধুয়ে’ ফেলার অবকাশ থাকলেও এবার ফসকে যাওয়ার কোনো সুযোগ পাবে না মিয়ানমার। ফলত আইসিজের আদালতে নতুন এ মামলা নিয়ে আশায় বুক বাঁধছে রোহিঙ্গারাও। গত সপ্তাহে হেগ আদালতে মামলা করার সময় উপস্থিত একজন রোহিঙ্গা নিজেদের কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করতে গিয়ে তাই বলছিলেন, মিয়ানামরের কৃত অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হলে হয়তো আরো একবার মানুষের মর্যাদা নিয়ে উঠে দাঁড়ানোর সুযোগ পাব আমরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App