×

আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক মহলের চাপে পড়ছে মিয়ানমার

Icon

nakib

প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০১৯, ০৪:৫৮ পিএম

আন্তর্জাতিক মহলের চাপে পড়ছে মিয়ানমার

রোহিঙ্গা গণহত্যার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ভিন্ন ভিন্ন আদালতে তিনটি মামলার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিসে (আইসিজে) দায়ের করা মামলার শুনানি শুরু হচ্ছে আগামী ডিসেম্বরে। এছাড়া গণহত্যার তদন্ত শুরু করেছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টও (আইসিসি)। এতে চাপে পড়েছে মিয়ানমার সরকার। এই প্রথম গণহত্যার দায়ে বিচারের মুখে পড়তে হচ্ছে বৌদ্ধ অধ্যুষিত দেশটিকে।

গত ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর অভিযানে হাজার হাজার রোহিঙ্গা সংখ্যালঘু মুসলিমকে হত্যা করা হয়। গণহত্যার এ ঘটনায় প্রাণভয়ে ৭ লাখ ৪০ হাজার রাখাইনবাসী পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। মানবিক কারণেই বাংলাদেশের সরকার শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়। তবে গত দুই বছরে নানা অজুহাত দেখালেও রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে কার্যকর কোনো উদ্যোগই নেয়নি মিয়ানমার সরকার।

মিয়ানমারে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ তদন্তের জন্য গত ২০১৮ সালে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি রাখাইন রাজ্যে গণহত্যার তথ্য-উপাত্ত ও প্রমাণ সংগ্রহের কাজ শুরু করে। জাতিসংঘের এই তদন্ত কার্যক্রম শেষে গণহত্যার বিচার পাওয়া ও নিরাপদে দেশে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে রোহিঙ্গারা।

গত প্রায় দুই বছর ধরে নানা কূটনৈতিক উদ্যোগেও রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়নি মিয়ানমার। বাংলাদেশও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বার বার অভিযোগ দিয়ে আসছে। রোহিঙ্গাদের নিরাপদে দেশে ফেরা নিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনেও বিভিন্ন দেশ দাবি তুলেছে।

সর্বশেষ গত ১১ নভেম্বর আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া প্রথম মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে আইসিজেতে মামলা দায়ের করেছে। মামলায় রোহিঙ্গাদের অধিকার রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার আবেদন জানানো হয়েছে।

অন্যদিকে, রোহিঙ্গাদের ওপর পরিচালিত গণহত্যার বিচার চেয়ে মানবাধিকারকর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবি ও আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গেত ১৪ নভেম্বর আইসিসি তদন্ত শুরু করেছে। প্রায় একই সঙ্গে মিয়ানমার নেত্রী ও সেদেশের কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনার দুটি আদালতেও গণহত্যার দায়ে মামলা হয়েছে।

আইসিজের মামলা: বিশ্বের ৫৭টি মুসলিম দেশের পক্ষ থেকে ওআইসির সমর্থনে জাতিসংঘের ১৯৪৮ সালের কনভেনশন লঙ্ঘনের দায়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে মামলা করেছে গাম্বিয়া। গাম্বিয়া বলছে, মিয়ানমার জাতি হিসেবে রোহিঙ্গাদের আংশিক বা পুরোপুরি ধ্বংস করতে চেয়েছিল। যেটি বৈশিষ্ট্যগত দিক দিয়ে গণহত্যা।

১৯৪৬ সালে আন্তঃদেশীয় অভিযোগ মিমাংসার জন্যই নেদারল্যান্ডস সরকারের প্রশাসনিক রাজধানী হেগ ভিত্তিক আইসিজে গঠন করা হয়েছে। যেটা বিশ্ব আদালত (ওয়াল্ড কোর্ট) নামেও পরিচিত। কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে সমন জারির এখতিয়ার না থাকলেও আইসিজে গণহত্যা কনভেনশন রক্ষার অভিভাবক হিসেবে কাজ করছে। বলা হচ্ছে, গাম্বিয়ার মামলা শেষ হতে বেশ সময় লাগতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোহিঙ্গাদের অধিকার রক্ষায় আইসিজে পদক্ষেপ নিলে তা বেশি কার্যকর হবে। আগামী ডিসেম্বরেই এ মামলার শুনানির মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।

আইসিসি মামলা: ২০১৭ সাল থেকেই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে আইসিসির মাধ্যমে মিয়ানমারের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন মানবাধিকারকর্মীরা। তবে রোহিঙ্গাদের অধিকার রক্ষায় সে উদ্যোগে প্রতিবারই বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল পরাশক্তির দেশ রাশিয়া ও চীন। এতে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয় জাতিসংঘকে। এর মধ্যেই ১৪ নভেম্বর রাখাইন জনগোষ্ঠির ওপর পরিচালিত গণহত্যার তদন্তের অনুমোদন দেয় জাতিসংঘের নিরাপদ পরিষদ।

তবে প্রশ্ন উঠেছে, যেহেতু মিয়ানমার আইসিসির সদস্য নয়, তাহলে কীভাবে এ আদালতে দেশটির বিচার হবে? এ ব্যাপারে আইসিসির ব্যাখ্যা হচ্ছে, তাদের অপরাধে প্রতিবেশী বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর যেহেতু বাংলদেশ আইসিসির সদস্য সে কারণেই মিয়ানমারের অপরাধের বিচার করার এখতিয়ার আইসিসির রয়েছে।

আর্জিন্টিনায় মামলা: বিশ্বের যেকোনো দেশে সংগঠিত অপরাধের জন্য আর্জেন্টিনার আদালতে মামলা করার সুযোগ রয়েছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনেই সেদেশের দুটি আদালতে মিয়ানমারের গণহত্যার অভিযোগে সম্প্রতি মামলা করা হয়েছে। মামলায় নোবেলজয়ী নেত্রী অং সাং সুচির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, জাতিগতভাবে রোহিঙ্গাদের নিধনে সুচি বাধা না দিয়ে বরং সহায়তা করেছেন।

এর আগেও আর্জেন্টিনার আদালতে স্পেনের সাবেক স্বৈরশাসক ফ্রান্সিককো ফ্রানকো এবং চীনের ফ্যালন গংয়ের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। একই অভিযোগে আন্তর্জাতিক ভিন্ন ভিন্ন আদালতে মামলা হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এরকমটা হয়েছিল যুগস্লোভিয়া ও রুয়ান্ডা গণহত্যার বিচারের ক্ষেত্রেও।

গণহত্যার দায়ে আইসিজে ও আইসিসির বিচারের মুখোমুখি হলে মিয়ানমারকে সমর্থন করা থেকে তার আন্তর্জাতিক মিত্ররা বিরত থাকতে বাধ্য হবে। এতে একা হয়ে পড়বে মিয়ানমার। তখন আন্তর্জাতিক বিচারের রায় মেনে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবে।

নকি/

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App