×

জাতীয়

মন্দভাগে ট্রেন দুর্ঘটনা তূর্ণার চালক-গার্ডের দোষে: রেলমন্ত্রী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০১৯, ০৬:৪৫ পিএম

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার মন্দভাগ স্টেশনে গত ১২ নভেম্বর গভীর রাতে দুই ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষে ১৭ জনের মৃত্যুর ঘটনা তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেস ট্রেনের চালক, সহকারী চালক ও গার্ডের অসতর্কতায় ঘটেছে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।

বুধবার (২০ নভেম্বর) রেলভবনে বাংলাদেশ রেলওয়ে, রেলপথমন্ত্রণালয় দ্বারা গঠিত ৩ টি তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেশকালে তিনি এ তথ্য জানান। তদন্ত কমিটিগুলোর প্রতিবেদন তুলে ধরতে আজ রেলভবনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে রেলওয়ে।

এ সময় রেলমন্ত্রী সুজন জানান, কসবার মন্দভাগ স্টেশনে ঘটা দূর্ঘটনায় আমরা ৫টি তদন্ত কমিটি গঠন করি। এর মধ্যে ৩টি তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন সাক্ষ্য-প্রমাণ পর্যালোচনা এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, আন্তঃনগর ৭৪১ নম্বর তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেস ট্রেনের চালক, সহকারী চালক ও গার্ড সিগন্যালগুলো যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ না করে ট্রেন পরিচালনা করার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে। সে কারণে তুর্ণা নিশীথা ট্রেনটি সিলেট থেকে চট্টগ্রামমুখি ৭২৪ নং উদয়ন এক্সপ্রেস টেনের পিছনের ৩টি বগিতে সজোরে ধাক্কা দেয়। যার ফলে ১৫ জন যাত্রী ঘটনাস্থলে মারা যান এবং পরে হাসপাতালে ২ জন মারা যান। এর ফলে রেলের প্রায় ৩০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।

এ সময় রেল সচিব মোফাজ্জেল হোসেন, মহাপরিচালক মো. শামছুজ্জামান, এডিজি অপারেশন মিয়া জাহান, এডিজি মুজিবুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। রেলের ডিজি মো. শামসুজ্জামান জানান, তুর্ণা-নিশীথার চালক আউটার সিগন্যাল এবং হোম সিগন্যাল অমান্য করে, পরে সে ডেঞ্জার (চুড়ান্ত) সিগন্যাল ভেঙে উদয়নে ধাক্কা দেয়। এটি মারাত্বক অপরাধ। সামনে বড় দূর্ঘটনা জেনেও সে সুপার ব্রেক চাপেনি, গার্ডও তার হাতে থাকা এয়ার ব্রেক চাপলে এতো বড় দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। সে কারণে ট্রেনটির চালক তাছের উদ্দিন, সহকারী চালক অপু দে এবং গার্ড আব্দুর রহমানকে দায়ী করে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

সুপারিশ:

ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে মোট পাঁচটি সুপারিশ করেছে তিন তদন্ত কমিটি। এগুলো হলো- লোকো মাস্টার, সহকারী লোকো মাস্টারের কার্যক্রম তদারকি করার জন্য ইঞ্জিনে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া, ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত কর্মচারীদের শূন্যপদ পূরণে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া, চলাচলকরা ট্রেনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় ‘ক্লোজড ইউজার গ্রুপের’ মোবাইল ফোন বা আধুনিক অন্যান্য যোগাযোগ যন্ত্রপাতি প্রবর্তন করা এবং বাংলাদেশ রেলওয়েতে এটিএস (অটোমেটিক ট্রেন স্টপ) সিস্টেম প্রবর্তন করা। এসব সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব বলে মন্তব্য করেন রেলমন্ত্রী।

পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের পাহাড়তলী নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথা রাত ২টা ৪৮ মিনিটে শশীদল রেলওয়ে স্টেশন পার হয়ে মন্দবাগ স্টেশনের কাছাকাছি গেলে ট্রেনটিকে আউটার সিগন্যালে থামার সংকেত দেওয়া হয়। আর সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস কসবা রেলওয়ে স্টেশন পার হয়ে মন্দবাগ স্টেশনে প্রবেশ করার পথে ট্রেনটিকে মেন লাইন ছেড়ে ১ নম্বর লুপ লাইনে যাওয়ার সংকেত দেওয়া হয়। রাত ২টা ৫৫ মিনিটে তূর্ণা নিশীথার চালক আউটার ও হোম সিগন্যাল অমান্য করে মন্দবাগ স্টেশনের মেন লাইনে ঢোকার সময় মেন লাইন থেকে লুপ লাইনে ঢুকতে থাকা উদয়নের পিছনের ৩টি বগিতে আঘাত করে। তাতে উদয়নের তিনটি বগি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। তূর্ণা নিশীথার চালক তাহের উদ্দিনসহ তার সহকারীরা সিগন্যাল না মানায় এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে তিনটি তদন্ত রিপোর্টে উঠে আসে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App