×

জাতীয়

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিরুদ্ধে টাস্কফোর্স করছে চউক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০১৯, ০১:৪৫ পিএম

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিরুদ্ধে টাস্কফোর্স করছে চউক

দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ ও নকশাবহির্ভূত ভবন চিহ্নিত করা এবং এসব ভবন মালিককে নোটিস প্রদান করার মধ্য দিয়েই সীমাবদ্ধ ছিল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)। তবে পাথরঘাটায় ইমারত বিধিমালা লঙ্ঘন করে নির্মিত একটি ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ৭ জনের প্রাণহানি ও ১০ জন আহত হওয়ার পর নড়েচড়ে উঠেছে চউক। সাধারণ মানুষের ক্ষতির কারণ হতে পারে এমন ভবন চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে টাস্কফোর্স গঠন করতে যাচ্ছে সংস্থাটি। পাশাপাশি এই গ্যাস বিস্ফোরণের পর কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি: (কেজিডিসিএল) কর্মকর্তাদের দাবি পাথরঘাটায় বড়ুয়া ভবনে তাদের গ্যাসলাইনে কোনো লিকেজ নেই এবং রাইজারও সঠিক। কিন্তু এই মানবিক বিপর্যয়ের পর প্রথমবারের মতো কেজিডিসিএল নগরীর বাসা-বাড়ির গ্যাস-সংযোগের রাইজার পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে। পাথরঘাটায় বিস্ফোরণে গ্যাসলাইনের কোনো ত্রু টি নেই দাবি করা হলেও এত বড় মানবিক বিপর্যয়ের পর এই উদ্যোগ গ্রহণ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কেননা, এর আগে কখনো পরিকল্পনা করে রাইজার পরীক্ষার নজির সংস্থাটির নেই। এদিকে চউক সূত্র জানায়, নগরীতে ছোট-বড় অসংখ্য ভবন নকশাবহির্ভূতভাবে নির্মিত হয়েছে। সিডিএর পক্ষ থেকে ৪টি টিম বিভিন্ন এলাকায় নিরাপত্তা ঝুঁকি, নকশাবহির্ভূত এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা তৈরি করছে। এর মধ্যে নগরীর ৫৭টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে ভবন মালিকদের নোটিস দিয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ৩৫০০ নকশাবহির্ভূত ভবন চিহ্নিত এবং এসব ভবন মালিকদের নোটিস দিয়েছে সিডিএ। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে প্রতি মাসে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে ৮০ থেকে ১০০টি নকশাবহির্ভূত ভবন নির্মাণের তালিকা পাঠানো হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তালিকা পাঠানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে তাদের দায়িত্ব। কয়েকটিকে জরিমানা ও নোটিস প্রদান পর্যন্তই তাদের দায়িত্ব শেষ। কোনো নকশাবহির্ভূত ভবন ভাঙার বা সরিয়ে ফেলার নজির সাধারণত দেখা যায় না। অথোরাইজড বিভাগের সঠিক তদারকি না থাকায় নগরীতে নির্মাণ করা হচ্ছে অসংখ্যা নকশাবহিভর্‚ত ভবন। পরিদর্শক এবং অথোরাইজড বিভাগের কর্মকর্তাদের সঠিক তদারকির অভাবে এবং ভবন মালিকরা ওই সব কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করেই এসব নকশাবহির্ভূত ভবন নির্মাণের সুযোগ পাচ্ছেন। ইমারত বিধিমালা-২০০৮ অনুযায়ী একটি ভবন নির্মাণের পূর্ব থেকে ভবন নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে সিডিএর সংশ্লিষ্ট বিভাগের তদারকি থাকার কথা। আইন অনুযায়ী, ভবন নির্মাণের পূর্বে চউক থেকে নেয়া ভবনের নকশায় অগ্নিনিরাপত্তা, ভবন উচ্চতাসহ সার্বিক বিষয়গুলো দেখা হবে। কিন্তু সংস্থাটিকে তার ন্যূনতম দায়িত্বও পালন করতে দেখা যায় না। গত ১৭ নভেম্বর নগরীর পাথরঘাটার ব্রিকফিল্ড রোডে ইমারত বিধিমালা লঙ্ঘন করে নির্মিত একটি ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ৭ জনের প্রাণহানি ঘটে। ঘটনার পর ভবনটি পরিদর্শন করে সিডিএর প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ শাহিনুল ইসলাম খান বলেছিলেন, ভবনটি ইমারত বিধি অনুযায়ী নির্মিত হয়নি। ভবনের সেপটিক ট্যাঙ্ক করা হয়েছে সড়কের পাশে, বাইরে। সেপটিক ট্যাঙ্ক ও গ্যাস রাইজার পাশাপাশি স্থাপন করা হয়েছে, যা ভবনটির ঝুঁকির মাত্রা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ভবন নির্মাণের সময় চউক নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিলেও ভবন মালিকরা নকশা মানেন না। চটগ্রাম ফায়ার সার্ভিসে উপসহকারী পরিচালক পূর্ণ চন্দ্র মুৎসুদ্দিও একই ধরনের অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, যে ভবনে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে সেটি আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ছিল। নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি জেরিনা হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, ভবনগুলো চউকের নকশা অনুযায়ী হয়েছে কিনা তা তারা তদারকি করে না। তাদের অজুহাত হচ্ছে তাদের লোকবলের অভাব। কিন্তু বাস্তবে চউকের অনেক প্রকৌশলী নকশা-ডিজাইন ব্যবসায় জড়িত থাকার ফলে তারা এ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখেন না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, চউকের কয়েকজন অসাধু প্রকৌশলী চউকের অনুমোদিত নকশার বাইরে গিয়ে ভবন নির্মাণে সহযোগিতা করেন। অনেক ক্ষেত্রে পরিদর্শন করে কিন্তু ত্রু টি পেলেও ভবন মালিকের সঙ্গে সমঝোতা করে। ফলে অথোরাইজড বিভাগকে এ ব্যাপারে অবহিত করে না। সিডিএর অথোরাইজড কমিটির চেয়ারম্যান ও প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ শাহিনুল ইসলাম খান ভোরের কাগজকে বলেন, ঢাকার রাজউকের অথোরাইজড অফিসার রয়েছে ২৪ জন। ১১৫২ বর্গ কিলোমিটারের চট্টগ্রামে অথোরাইজড অফিসার রয়েছে মাত্র ২ জন। ঢাকায় টাউন প্ল্যানার রয়েছে ৩০ জন, আর আমাদের মাত্র ৯ জন। এত অল্পসংখ্যক জনবল দিয়ে কাজ করা আসলে অনেক কঠিন। তারপরও আমরা থেমে নেই। নকশাবহির্ভূত ভবনের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী নিয়মিত ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। নকশাবহির্ভূত ভবন নির্মাণের কারণে নকশা বাতিল করা, জরিমানা করা এবং কারাগারেও প্রেরণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, পাথরঘাটায় বিস্ফোরণে প্রাণহানির পর চউক একটি টাস্কফোর্স গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। জনগণের ক্ষতির কারণ হতে পারে এমন ভবন চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে এই টাস্কফোর্স। রাইজার পরীক্ষার উদ্যোগ কেজিডিসিএলের : কেজিডিসিএল কর্মকর্তারা জানান, এতদিন মূল লাইন পরীক্ষা করা হলেও বাসা-বাড়ির সংযোগ পরীক্ষা করা হতো না। কেজিডিসিএল সূত্রমতে চট্টগ্রামে ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৯৮৫টি আবাসিক সংযোগ রয়েছে। ২ হাজার ৮০০ কিলোমিটার সরবরাহ লাইন রয়েছে। গত তিন বছরে নগরীতে অন্তত পাঁচ দফা গ্যাসজনিত বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের বিস্ফোরণে মারা গেছেন ১২ জন। এতদিন পর এসে গ্যাস-সংযোগের রাইজার পরীক্ষার উদ্যোগ প্রসঙ্গে সংস্থার মহাব্যবস্থাপক সারোয়ার হোসেন বলেন, সংযোগের জন্য গ্যাস রাইজার আছে প্রায় দেড় লাখ। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের যে জনবল, তা দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব রাইজার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব নয়। তবে এ দুর্ঘটনার পর রাইজারগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App