×

মুক্তচিন্তা

বায়ুদূষণ রোধে করণীয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০১৯, ১০:০৮ পিএম

বায়ুদূষণ ঐতিহাসিকভাবে সব সময় বেশি ছিল, বর্তমানে এটি একটি ‘চঁনষরপ ঐবধষঃয ঊসবৎমবহপু’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৯৯৫-এর পর বায়ুদূষণ ক্রমবর্ধমানভাবে শুরু হয়ে পরবর্তীতে এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ২০০২ সালের দিকে এটি নগরবাসীর জন্য অন্যতম প্রধান পরিবেশগত হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিল এবং এটি যখন জনগণের পক্ষে অসহনীয় হয়ে ওঠে, তখন সরকার শহরের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নেয়। ২০০২-এর শেষদিকে সরকার বেবিট্যাক্সি নিষিদ্ধ করে। এরপর ২০০৩ সালের শুরুর দিকে নগরবাসী শহরের উন্নত বায়ু সেবন করা শুরু করেছিল, তাই এ সময় দেশের বায়ুদূষণ এক অভাবনীয় মাত্রায় কমে আসে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বায়ুদূষণ আবার বাড়তে শুরু করে। একই সঙ্গে রাস্তাঘাট, ভবন নির্মাণ ও যানবাহন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে দূষণ আবার বাড়তে শুরু করেছে এবং এখন এটি আবার নগরবাসীর জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট ও ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স এন্ড ইভ্যালুয়েশন যৌথ উদ্যোগে সম্প্রতি পরিচালিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের দশটি দেশের মধ্যে বায়ু দূষণে মৃত্যুর সংখ্যায় পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে আমাদের দেশ। ২০১৭ সালে বায়ুদূষণের কারণে ১ লাখ ২৩ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। রিপোর্টে বিশ্বব্যাপী মৃত্যুহারের জন্য পঞ্চম ঝুঁকির কারণ হিসেবে বায়ুদূষণকে দায়ী করা হয়েছে। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী বায়ুদূষণ বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যুর কারণ। প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়াকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করা হয় এবং আরো বলা হয় উন্নত দেশের তুলনায় উন্নয়নশীল দেশগুলো চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি দূষণের শিকার। বায়ুদূষণ বিশ্বব্যাপী গড় আয়ু ১ বছর ৮ মাস কমিয়ে ফেলে, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার গড় আয়ু আরো কমে গিয়ে ১ বছর ৭ মাসে দাঁড়িয়েছে। স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ ২০১৮ সালে বায়ুতে মিশে থাকা মাইক্রোফ্লোরা শনাক্তকরণের একটি গবেষণা করে। গবেষণার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪টি স্থানের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। নমুনাগুলোতে মোট ২,৬৮১ সংখ্যক ফাঙ্গাস কলোনির উপস্থিতি পাওয়া যায়। এই গবেষণায় ৮ ধরনের প্যাথোজেন পাওয়া যায়। যার মধ্যে কিছু প্যাথোজেন মানুষের জন্য এবং উদ্ভিদের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। গবেষণা অনুযায়ী বায়ুদূষণের জন্য দায়ী উৎসসমূহের পরিমাণ যথাক্রমে ইটের ভাটা ৫৮ শতাংশ, যানবাহনের ১০ শতাংশ, অন্যান্য ৩২ শতাংশ। এসব উৎস থেকে নির্গত হচ্ছে পার্টিকুলেট ম্যাটার, কার্বন ডাই-অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড যা দূষিত করছে বায়ুকে। যানবাহন, শিল্পকারখানা থেকে বিভিন্ন জায়গায় অপরিকল্পিতভাবে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির লাইন দেয়ার জন্য ও রাস্তাঘাট খোঁড়াখুঁড়ির ফলে বায়ু দূষিত হচ্ছে। বায়ুদূষণ রোধে আমাদের কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে, সবার আগে দূষণের উৎসগুলো চিহ্নিত করে দূষণ কমিয়ে আনতে হবে। ঢাকার আশপাশের ইটের ভাটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আগুনে পোড়ানো লাল ইটের বিকল্প সিমেন্ট বালুর ব্লক ইটের ব্যবহার বাড়াতে হবে। ইটের ভাটাগুলোতে উন্নত ও দূষণমুক্ত প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি চালানো বন্ধ করতে হবে। সপ্তাহের ভিন্ন দিনে জোড়-বিজোড় পদ্ধতিতে গাড়ি চলার ব্যবস্থা করতে হবে। ফিটনেসবিহীন যানবাহন ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। সমন্বয়হীনভাবে রাস্তার খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করতে হবে। সেবাদানকারী সংস্থার সংস্কার কাজে সমন্বয় এনে স্বল্প সময়ে সংস্কার শেষ করতে হব। নির্মাণসামগ্রী উন্মুক্তভাবে ফেলে রাখা যাবে না। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে, যাতে করে যেখানে সেখানে নগর বর্জ্য বা কৃষি বর্জ্য উন্মুক্তভাবে পোড়ানো না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। অন্যদিকে প্রচলিত আইনকে যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে শিক্ষামূলক প্রচারণা চালাতে হবে। একইসঙ্গে প্রশাসনিক ব্যবস্থার সফল প্রয়োগ একান্তভাবে প্রয়োজন। সর্বোপরি জনগণকে বায়ুদূষণের সামগ্রিক বিষয়ে তথ্যপ্রদান, শিক্ষিতকরণ ও উদ্বুদ্ধকরণ অত্যন্ত জরুরি।

আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার : অধ্যাপক, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App