×

জাতীয়

বিভিন্ন স্থানে পরিবহন ধর্মঘট : যাত্রী দুর্ভোগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০১৯, ১০:৫৪ এএম

বিভিন্ন স্থানে পরিবহন ধর্মঘট : যাত্রী দুর্ভোগ

নতুন সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ পরিবর্তনের দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাস ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীসাধারণ। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই মালিক-শ্রমিকরা বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় যাত্রীরা বিপাকে পড়েছেন। বিকল্প উপায়ে ঝুঁকি নিয়ে এবং বাড়তি ভাড়ায় গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন অনেকেই। মালিক পক্ষ বলছে, ‘নতুন আইনে দুর্ঘটনার কারণে একজন ড্রাইভারকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে। আর সেই শঙ্কায় চালক ও শ্রমিকরা গাড়ি চালাতে আগ্রহ বোধ করছেন না। যাদের বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে তারাই গাড়ি চালাচ্ছেন।

তবে সেটা অত্যন্ত স্বল্প পরিসরে। যাত্রীসাধারণ হঠাৎ করে ডাকা এই পরিবহন ধর্মঘটের জন্য সরাসরি মালিক-শ্রমিকদের দায়ী করলেও মালিক-শ্রমিক নেতারা তা অস্বীকার করছেন। মালিকরা এর দায় শ্রমিকদের ওপর চাপিয়ে দিলেও তারা নেপথ্যে থেকে পরিবহন ধর্মঘটে মদদ দিচ্ছেন বলে যাত্রীদের অভিযোগ। আমাদের বগুড়া প্রতিনিধি জানান : গতকাল শনিবার সকাল থেকে কোনো ঘোষণা ছাড়াই বগুড়া থেকে জয়পুরহাট, রংপুর, নওগাঁ, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, নাটোর, রাজশাহী, ময়মনসিংহসহ উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গের সড়কপথে সবধরনের বাস চলাচল বন্ধ রাখেন বাস মালিক ও চালকরা।

নওগাঁ অভিমুখে যাত্রা করা কামাল উদ্দিন বলেন, তিনি নওগাঁতে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন। রবিবার সকালে (আজ) তার অফিস ধরতে হবে। কিন্তু বাস চলাচল বন্ধ থাকায় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রাকে যাত্রা করার। বাসচালক আকবর জানান, নতুন সড়ক আইন তারা মানেন না। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে যে শাস্তির বা জরিমানার আইন পাস হয়েছে, সেটি চালকদের পক্ষে বহন করা সম্ভব না। তিনি আরো জানান, কোনো চালক ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্ঘটনা ঘটায় না। আর তাই, এ আইন বাতিলের দাবিতে মূলত পরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি কামরুল মোর্শেদ জানান, তারা গাড়ি বন্ধের কোনো ঘোষণা দেননি। প্রশাসনের অভিযানের ভয়ে মালিক ও চালকরা নিজে থেকেই ফিটনেসবিহীন গাড়ি বন্ধ রেখেছেন। বগুড়া ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক সালেকুজ্জামান সালেক জানান, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী নতুন সড়ক আইন এক সপ্তাহ শেষে বাস্তবায়নের যে কথা ছিল, সেটির ভয়ে সকাল থেকে মালিক-শ্রমিকদের অনেকেই বাস চলাচল বন্ধ রেখেছিলেন।

এদিকে আমাদের কুষ্টিয়া থেকে আমাদের প্রতিবেদক জানান, চলতি মাসের প্রথম দিন থেকে চালু হওয়া নতুন সড়ক আইন সংশোধনের দাবিতে কুষ্টিয়া থেকে মেহেরপুর, পাবনা, রাজশাহী ও রাজবাড়ী রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে রেখেছে স্থানীয় বাস চালকরা। শুক্রবার সকাল থেকে এসব রুটে কোনো ঘোষণা ছাড়াই বাস চলাচল বন্ধ করে দেন তারা। হঠাৎ করে বাস বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে গতকাল সকালে কুষ্টিয়া চৌড়হাস কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও মজমপুরগেটসহ বিভিন্ন জায়গায় যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে দেখা গেছে। তবে ঢাকাসহ দূরপাল্লার পরিবহন চলতে দেখা গেছে।

আবদুল মান্নান নামে একজন বাসযাত্রী জানান, ‘আমি পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাব, কিন্তু এসে দেখি কোনো যানবাহন চলছে না। বাধ্য হয়ে সিএনজিতে করে যেতে হচ্ছে। ‘মাসুদ রহমান নামের এক বাসচালক বলেন, ‘নতুন আইনে দুর্ঘটনার কারণে একজন ড্রাইভারের পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে। তাই সেই শঙ্কায় আর গাড়ি চালাচ্ছি না।’ যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন পরিবহন কাউন্টার, টার্মিনালে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

কুষ্টিয়া জেলা বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাহাবুবুল আলম বলেন, ‘বর্তমানে যে নতুন পরিবহন আইন করা হয়েছে, এতে ড্রাইভাররা গাড়ি চালাতে চাচ্ছেন না।’ তিনি বলেন, ‘যেসব চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ পাঁচ লাখ টাকার ব্যবস্থা আছে কেবল তারাই গাড়ি চালাচ্ছেন। নতুন আইনের প্রতিবাদে শ্রমিকরা সকাল থেকে কুষ্টিয়া-মেহেরপুর, কুষ্টিয়া-ভেড়ামারা ও কুষ্টিয়া-খুলনাসহ সব আন্তঃজেলা রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেন। অনির্দিষ্টকালের জন্য চালকরা ধর্মঘট পালন করছেন। তবে এতে ফেডারেশনের কোনো নির্দেশনা বা আমরা কোনো ঘোষণাও দেইনি। মেহেরপুর থেকে লোকাল বাস চলছে

এদিকে আমাদের গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি জানান : মেহেরপুর জেলা থেকে সব ধরনের লোকাল বাস গতকাল শনিবার বিকেল থেকে চলাচল শুরু হয়েছে। বিভিন্ন রুটে স্বল্প পরিমাণ বাস চলাচল শুরু হলেও আগামীকাল (আজ রবিবার) থেকে সব বাস চলবে। আকস্মিক বাস বন্ধের ফলে চরম বিপাকে পড়েন যাত্রীরা। নতুন পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইনের প্রতিবাদে চালকরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন নেতারা।

মেহেরপুর মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান বলেন, সড়ক পরিবহন আইন পাস হওয়ার পর থেকেই চালকরা বাস চালাতে ভয় পাচ্ছেন। বিষয়টি একেবারেই চালকদের সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ফিটনেস, লাইসেন্স ও রুট পারমিটের সমস্যা রয়েছে। বিআরটিএ’র জটিলতার কারণে সমস্যাগুলো দীর্ঘদিন ধরে জিইয়ে রয়েছে। এতে নতুন আইনে বড় ধরনের জেল ও জরিমানার ভয়ে চালকরা ভীত হয়ে পড়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App