×

জাতীয়

রেললাইনে পাথর কম, বাড়ছে লাইনচ্যুতি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০১৯, ১০:২৩ এএম

বেড়েই চলেছে রেলের দুর্ঘটনা। রেলওয়ের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৪ থেকে চলতি বছরের ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে রেলে ৯শটির বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে লাইনচ্যুত হয়ে দুর্ঘটনার সংখ্যা ৬৭২। আর গত এক মাসেই লাইচ্যুত হয়ে রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৩টি। রেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন রেললাইনে পাথর কম থাকায় লাইনের অ্যালাইনমেন্ট (একই সমান) ঠিক থাকছে না তাই লাইনচ্যুত হয়ে রেল দুর্ঘটনা বাড়ছে। রেলসূত্রে জানা গেছে, সারাদেশের রেলপথগুলোতে নিয়মিত পাথর দিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ৮৪ কোটি টাকার পাথর ক্রয় করা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে কাগজেকলমে যে পরিমাণ পাথর ক্রয় দেখানো হয়েছে বাস্তবে তা লাইনে দেখা যায়নি। জানা গেছে, বর্তমানে মিটারগেজের ৮০ কিলোমিটার ও ব্রডগেজ রেললাইনে ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার গতিতে চলা সম্ভব এমনভাবে লাইন নির্মাণ করা আছে। কিন্তু রেললাইনে পর্যাপ্ত পাথর না থাকায় মাটি সরে যাচ্ছে, রেল পার্টি দেবে গিয়ে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে রেল দুর্ঘটনা বাড়ছে। ২০১৬ সালে ১৩১টির মধ্যে ৮৮টি, ২০১৭ সালে ১৪০টির মধ্যে ৭৭টি লাইনচ্যুত হয়ে রেল দুর্ঘটনা ঘটছে। সেখানে ২০১৮ সালে ১৫০টি রেল দুর্ঘটনার মধ্যে ১২১টি লাইনচ্যুতির ঘটনা এবং এ বছর এখন পর্যন্ত লাইনচ্যুত হয়ে ৭৪টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এমনি কি চলতি অক্টোবর মাসের ২৩ তারিখ পর্যন্ত লাইনচ্যুত হয়ে ৮টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। আর দুর্ঘটনা এড়াতে রেলের ট্রাফিক বিভাগ রেলের গতি কমিয়ে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার গতিতে চলাচলের নির্দেশ দিয়েছে। তবে রেললাইনে পাথর না থাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে রেল ২০ কিলোমিটার গতিতে রেল চালানো হচ্ছে। আর গতি কম হওয়া ঢাকা-ময়মনসিংহ ১২৭ কিলোমিটর রেলপথ যেতে ৫ ঘণ্টা সময় লাগে বলে রেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বিশেষ করে গাইবান্ধা, রংপুর, চলনবিলসহ যেসব এলাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেখানে রেললাইনে কোনো পাথর না থাকায় রেলের গতি কমাতে বাধ্য হয়েছেন ড্রাইভাররা। যার ফলে সিডিউল ঠিক রাখা যাচ্ছে না রেলের। রেল পূর্ব ও পশ্চিম দুই বিভাগে বর্তমানে দেশে প্রায় তিন হাজার দুশ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। এর মধ্যে পশ্চিম জোনের অধিকাংশ রেললাইন বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু পূর্ব জোনের প্রায় সব রেললাইনই পুরাতন। আর সারাদেশের রেলপথগুলোতে নিয়মিত পাথর দিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য বিগত ৫ বছরে প্রায় ৮৪ কোটি টাকার পাথর ক্রয় করা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে কাগজেকলমে যে পরিমাণ পাথর ক্রয় দেখানো হয়েছে বাস্তবে তা মাঠে দেখা যায়নি। এমনকি আঠারোবাড়ী, কুলাউড়া, বরমচার, শাহবাজপুর, শমশেরনগরে রেললাইনের পাশে কোথাও খুব কম আবার কোথাও পাথর সরে গিয়ে মাটি বেরিয়ে যাওয়ায় রেললাইনের অ্যালাইনেমেন্ট ঠিক থাকছে না। আর রেললাইনের অ্যালাইনেমেন্ট ঠিক না থাকায় রেলের ইঞ্জিন ও কোচের চাকা লাইনচ্যুত হয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। অনেক স্থানে ঘাস মাটিতে লাইন দেবে আছে। এসব কারণে লাইচ্যুত হয়ে দুর্ঘটনা বিশ্বের সব দেশকে হার মানিয়েছে বাংলাদেশ। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের এক সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, যে পরিমাণ পাথর লাইনে দেয়ার জন্য কেনা বা আমদানির কথা বলা হচ্ছে, তা দেয়া হলে রেললাইন কমপক্ষে তিনফিট উচুঁ হয়ে যেত। কিন্তু এখনো লাইন আগের লেভেলেই আছে। তাহলে আমদানিকৃত পাথর গেল কোথায় ? এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, আমরা রেললাইন ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করছি। অনেক রেললাইন নতুন করে ডুয়েলগেজ করা হচ্ছে, সেখানে যথাযথভাবে ঠিক রাখা হচ্ছে। তবে বন্যার কারণে সে যেসব এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেখানে কিছু লাইনে পাথর একটু কম থাকতে পারে। তবে পাথর ক্রয়ে দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের কোনো ঘটনা নেই বলে তিনি জানান। মন্ত্রী বলেন, রেলের কোনো দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না। পাথর ক্রয় নিয়ে কোনো অনিয়ম হলে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App