×

জাতীয়

বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লেও সরবরাহ ব্যবস্থা নাজুক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০১৯, ১২:০৫ পিএম

বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লেও সরবরাহ ব্যবস্থা নাজুক
দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়লেও সরবরাহ ব্যবস্থা এখনো নিশ্চিত হয়নি। সঞ্চালন বা সরবরাহ লাইনের ত্রুটির কারণে বিভিন্ন এলাকায় প্রায়ই লোডশেডিং হচ্ছে। রেকর্ড পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরও লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় সাধারণ মানুষ অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। দুর্বল সরবরাহ লাইন এবং মানসম্মত বিদ্যুৎ উৎপাদন না হওয়ায় সরকারের শতভাগ বিদ্যুতায়নের পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। এই বাস্তবতায় সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নে এখনই জোরালো ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ থেকে ২০২১ এই ৩ বছরে বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ হবে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার। ‘ভিশন-২০২১’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে ২০১৯ সালেই রেকর্ড পরিমাণ ৪ হাজার ৩৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়। সরকারি-বেসরকারি ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসার মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই উদ্যোগটি বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে দেশের প্রায় ৯৩ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় চলে এসেছে। তিন বছর মেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে ‘ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ পৌঁছে দেয়ার সরকারের অঙ্গীকার শতভাগ বাস্তবায়িত হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের অতীতের রেকর্ড সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে ৫৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ছিল, কিন্তু মাত্র ২২৪ মেগাওয়ার্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হতো। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময় ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ছিল। ক্ষমতা গ্রহণের পর সরকার বিদ্যুৎ খাতের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করে। বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতা রয়েছে। চলতি বছরের ৫ আগস্ট সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৭৩৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। অন্যদিকে পল্লী বিদ্যুতের আওতায় ২ কোটির বেশি গ্রাহক রয়েছে। উৎপাদন বাড়াতে সৌর বিদ্যুৎ ও বায়ু বিদ্যুতের ওপরেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এদিকে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরও নিরবচ্ছিন্নভাবে সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত হচ্ছে না। সরবরাহ লাইনের দুর্বলতাই এর প্রধান কারণ। বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় সাধারণ মানুষ এখনো বেশ নাখোশ। বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাপনা নিয়ে ২০১৬-১৭ সালে এক জরিপ পরিচালিত হয়। জরিপে দেখা গেছে, সামগ্রিকভাবে ১১ দশমিক ২ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যাপারে ‘খুবই সন্তোষ’ প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া ৪৫ দশমিক ৮ ভাগ মানুষ ‘সন্তুষ্ট’, ২৯ দশমিক ৯ ভাগ মানুষ ‘মোটামুটি সন্তুষ্ট’ এবং ১৩ দশমিক ১ ভাগ মানুষ ‘মোটেও সন্তুষ্ট নয়’ বলে মতপ্রকাশ করেছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এই জরিপ চালানোর জন্য প্রথমে ১ লাখ ২১ হাজার ৪২৭টি মোবাইল নম্বর তালিকাভুক্ত করা হয়। এরপর দৈবচয়ন ভিত্তিতে ১৪ হাজার ৯৯৬ জন বিদ্যুৎ গ্রাহককে বেছে নিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন করে উত্তর নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকার যখন বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর জোর দেয় তখন সরবরাহ লাইনের ওপর গুরুত্ব দেয়নি। তাই উৎপাদন বাড়লেও সরবরাহ লাইনের দুর্বলতার কারণে সুষ্ঠুভাবে বিদ্যুৎ বিতরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। সঞ্চালন লাইন শক্তিশালী না করলে লোডশেডিং থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা কম। এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন বেড়েছে এটা স্বীকার করতে হবে। কিন্তু উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে যে চাহিদা বেড়েছে তা সংশ্লিষ্টরা মাঝে মাঝে ভুলে যায়। যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। তারপর আবার বিতরণ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। সারাদেশেই অধিকাংশ স্থানে সরবরাহ লাইনে ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে। এ কারণে লোডশেডিং এড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, উৎপাদন বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিতরণ বা সরবরাহ লাইনের উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সরকার সেদিকে নজর দেয়নি। এখন তারা সঞ্চালন লাইন ঠিক করার কাজ করছে। অন্যদিকে সারাদেশে বিদ্যুতের প্রকৃত চাহিদা সঠিকভাবে নিরূপণ করা হচ্ছে না। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোডের্র (পিডিবি) চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ জানান, বিদ্যুতের উৎপাদন আগের চেয়ে অনেক বাড়লেও কিছু কিছু জায়গায় আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এই সীমাবদ্ধতার কারণে গ্রাহকদের মানসম্মত বিদ্যুৎসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। অনেক জায়গায়ই বিতরণ ও সঞ্চালন লাইনে সমস্যা রয়েছে। এই সমস্যা কাটানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পের কাজ চলছে। সঞ্চালন লাইন ঠিক হলেই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App