×

সাময়িকী

দোহারের ছদ্মবেশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০১৯, ০৮:২০ পিএম

ওদিকে কেষ্ট মল্লিক সুনীলকে শত্রু ঠাওড়ায়। এই এক পার্বতীর জন্যে কেষ্ট মল্লিক তাকে প্রায় শত্রু ভাবলে তার খারাপই লাগে। অথচ সুনীল নিজেকে কখনও নিরুপায় অবস্থায় আবিষ্কার করে। সে কি করতে পারে। তাদের পারিবারিক বিরোধ এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে যে সেখান থেকে কেউ উদ্ধার করতে পারবে না।

পর্ব: শেষ

কিন্তু যা-ই ছিল, তাই তাকে দেখিয়ে বলেছিল, ‘এই যে, এই সমস্ত আমার জিনিসপত্তর। যদি কোনোদিন এইসমস্ত নিয়ে চইলে যাই, তা’লি ভাববা আমি একবার চইলে গেইচি।’ আজ খুব সকালে হরিসভা মন্দির থেকে ফিরে এসে রসিক দেখে, ভাঁজ করে রাখা একখানা ধুতি ট্রাঙ্কের বাইরে, আর ভিতরে খুদির শাড়িখানা আর পুঁটলিটা নেই। খুদি তাহলে এক কাপড়ে চলে গেছে। সঙ্গে রসিকের কিনে দেওয়া ওই একমাত্র শাড়িখানা নিয়েছে। কিন্তু, এই যে খুদি শাড়ি আর পুঁটলি নেই, তাতেই কেন মনে হবে সে চলে গেছে? আসলে, খুদি তো তাকে মাঝেমধ্যেই বলত, চলে যাবে। যে কোনো দিন চলে যাবে। যেদিকে দুচোখ যায় চলে যাবে। কিন্তু সেই দুই চোখের গন্তব্য তো খুদির ছোটবোনের কাছে ইন্ডিয়ায় যাওয়া। তালেশ্বরে খুদির যে মাসিবাড়ি, সেখানে বিধবা এক মেসোতো বোন তারও তো যাওয়ার কথা, হয়তো তার সঙ্গে গেছে। এ সবই এখন তার কল্পনা। তবে খুদি যে গেছে তা নিশ্চিত। এ কথা জানিয়ে চোখের জলে ভেসে যেতে যেতে রসিক প্রায় মূর্ছা যায়। হয়তো এমন মূর্ছা যাওয়াই তার ভাগ্যের লিখন। এই করতে করতে এক সকালে রসিক তার ভবলীলা সাঙ্গ করে তার রাধামাধবের কাছে অনন্তের পথে চলে যায়। কিন্তু, রসিক বুঝি জানত সে আর বেশি দিন নেই। হয়তো তাই একদিন দুপুরের দিকে সবাইকে সে বলেছে, তার ইচ্ছা, বৈষ্ণব মন্দিরটা যেন হয়। জায়গা সে দিয়েছে, তারা যেন কাজটা করে। নয়তো পরপারে সে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে কী জবাব দেবে?

৮. রসিক মারা যাওয়ায় সবার একটা প্রতিক্রিয়া হয়। অন্তত যে লোকটা মরার আগেও বলে গেছে তার জায়গায় যেন মন্দির তোলা হয়, সে কথা তাদের যেভাবেই হোক রাখতেই হবে। ফলে এবার মন্দিরের ব্যাপারে যেহেতু এখনই সিদ্ধান্ত হচ্ছে না, তাই এবার অন্তত হরিসভায় খুব জাঁকজমকে দুর্গাপূজার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। এতে প্রত্যেকেরই সায় আছে। কিন্তু রসিকের দেওয়া জায়গার বদলে হরিসভা সামনে আবার ব্যাপারে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও, তারা সবাই এই সিদ্ধান্ত নেয় যে, আর যাই হোক হরিসভা এ পাড়াতেই হবে। তাতে যদি সৈয়দ হিরু ভাইর কাছে যাওয়া লাগে তা যাবে। যদিও সুনীল ইতিমধ্যে কথা বলেছে। এ গ্রামের দুই-একজন ইতিমধ্যে বাগেরহাটে থাকতে শুরু করছে, তারাও যেন দরকার যোগাযোগ করে, সে কথাও তোলা হয়েছে। শত হলেও একেবারে একলা একজন মানুষ, নিজের সম্পত্তি দিয়েছে গ্রামে হরিসভা প্রতিষ্ঠা করার জন্যে, এটা কোনোভাবেই বেহাত হতে দেওয়া যাবে না। পূজার আয়োজনের সময়েই অমল জানায়, এবার এই পূজার সময় থেকেই তার দোকান নিয়ে যাবে হরিসভার রাস্তার গায়ে। সেখানে রাস্তা থেকে মন্দিরের দিকে একটু নেমে আরও বড়ো করে দোকান দিতে পারবে সে। এদিকে অমলের এই প্রস্তাবে কারও আপত্তি করার কিছু নেই। বরং অমল এমন সিদ্ধান্ত নেয়ায় সবাই সাধুবাদই জানায়। অমলের এই সিদ্ধান্তের পক্ষে সবাই এও জানায়, এখন আর রসিকের দোকান নেই, অমল যেন ভালো করে শুরু করে। সামনে জায়গা রাখে বেশি, সবাই যাতে বসতে পারে। রসিক মল্লিকের মারা যাওয়ার ভিতর দিয়েই এখন সবার সিদ্ধান্তে আসা সোজা হলো। আর পূজার আয়োজন তাদের সাধ্যের ভিতরে একটু জাঁকজমকের সঙ্গেই করার উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। আগের চেয়ে প্রতিমা বড়ো। অন্তত সাধ্যে যা কুলায়। তাদের তো ইচ্ছা ক্যাম্পের মাঠে গোড়াখালে যে দুর্গা প্রতিমা হয়, তার চেয়ে এটা যেন বড়ো হয়। যদি প্রবীণদের কেউ কেউ এই কথাও বলে, এদিকের সবাই বৈষ্ণব ভাবসম্পন্ন, সেখানে শাক্তপূজা এত জাঁকজমকে দেওয়ার কী হলো? কিন্তু বৈষ্ণবপন্থা তো আজ আর দেখানোর বিষয় নয়। এই হরিসভায় নামকীর্তন কি পদাবলি গান হয় না কত কাল। কবিগানের আসর শেষ কবে এখানে বসেছে তাও তো প্রায় সবাই ভুলে গেছে। সেই চিতলমারী মোল্লাহাট থেকে কবিয়ালরা আসত, আজকাল তাদের আর আনার উদ্যোগ নেই। অথচ, গোড়াখালের পরে বড়ো আন্ধারমানিকের খালের গোড়ার মাখনলাল হালদার ডাক্তারের ভিটায় আর বড়ো আঙ্গারমানিক বারোয়ারি খোলায় এক বছর অন্তর এক বছর কীর্তন তো লেগেই আছে। যদিও এমন বছর বছর কীর্তনের ব্যবস্থা করা তাদের সাধ্যের বাইরে। তা যদি পারে তো পারত পারে গোড়াখালের লোকজন। এক দীনেশেরই পয়সার অভাব নেই। ওই কাঁচা পয়সার জোরেই তো দীনেশ এখান থেকে হরিসভা তুলে নিয়ে যেতে চায়! প্রতি বছর হ্যাজাক আসে। এবার বাগেরহাট থেকে ডেলাইট আনতে হবে। হ্যাজাক এই গ্রামে আছে হরিষত আর পুলকের। যে দুটো দুদিকে টাঙানো যাবে, তবে মন্দির সামনের শামিয়ানার ঠিক মাঝখানে একট ডেলাইট না দিলে হবে না। মা দুর্গার কৃপায় যদি এবার ধান ভালো হয় তাহলে তার চিন্তা কী। চাঁদা না হয় একটু বেশিই দিতে হবে। বাকি কাজ ভাগ করে দিলে সবাই গায়ে খেটে তুলে নিতে পারবে। তালেশ্বরের পালরা প্রতিমা বানায় ভালো। যদিও বায়নার টাকা বেশি চায়। যদি সবাই উদ্যোগী হয়, সেখানেই যাওয়া যেতে পারে। আর পূজার আগেই সুনীল যদি একটু সৈয়দ হিরুর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাহলে সরকারি ফান্ড থেকে টাকা-পয়সা কিছু পাওয়া যাবে হয়তো। এ ব্যাপারে সুনীল যদি সঞ্জয়কে বলে, ওর অনেক বন্ধুবান্ধব! এই সুযোগটাই চাইছিল পরিতোষ আর অজিয়র। আজগর আগে যা করেছে, তাতে বাতাস দিয়েছে পরিতোষ। সেই দাগ মুছতে এখন অজিয়রকেই উদ্যোগ নিতে হবে। অন্তত এমপি সৈয়দ হিরুর চাচাতোভাইর সঙ্গে তার জানাশোনা ভালো তাকে বলে যদি এখানকার পূজায় কোনো ডোনেশন আনা যায়। সে কাজের উদ্যোগ নিয়ে যদি অজিয়র আর পরিতোষের দায় মোচনে এই সুযোগÑ পরিতোষের নিজের আর অজিয়রের আজগরের। তাহলে রণজয় কিংবা অমল আর বলতে পারবে না, ‘সেই যে আজগর পরিতোষের বুদ্ধির ফরকাইল, সেই ফরকানিতে আগামে গেরামের পূজার দিক কেউ চাইয়েও দেখল না।’ আর এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রমেনের সঙ্গেও এমপিরও সম্পর্ক ভালো। রমেন যে স্বাধীনতার পর পর জাসদে যোগ দিয়েছিল, মশাল মার্কা যে দাঁড়াত তার পক্ষে ভোট চাইত আসত, সেই রমেন এখন নৌকা। ফলে চেয়ারম্যান হিসেবে রমেনও তাদের জানিয়ে গেছে কাউন্সিল থেকে কোনো সাহায্য করার থাকলে সে করবে। রসিক ছিলেন তার দূরসম্পর্কে পিসেমশাই। তার দেওয়া জায়গায় আর তার ইচ্ছায় যদি হরিসভা বানানোয় সে কোনো সাহায্য করতে পারে তাহলে খুশিই হবে। যদিও রমেনের একসময়ের সহপাঠী রণজয় অমলকে বলে, ‘ও অমল, আমার কমিউনিস্ট বন্ধু এহোন হরিসভা বানায়!’ অমল ওইসব বোঝে কম। তবু রণজয়ের ওই তার উত্তরে সে বলেছিল, বেলা আর একটু পশ্চিমে হেলুক দেইখানে খুড়া আরও কতজন ওই মন্দিরের তলায় মাথা দেবে।’ সুনীলের তৎপরতায় সঞ্জয় যখন গ্রামে আসতে পারে, তখন রচনার সঙ্গে তার পুরনো সম্পর্ক আবার জোড়া লাগাতে দোষ কী? কিংবা, সুনীল যে এতদিন একটু বিব্রত ছিল, গ্রামে পারতপক্ষে আসত কম, সুনীলও তো এখন আসতে পারে। যদিও রচনার সঙ্গে সঞ্জয়ের সম্পর্ক সুনীলের সায় নেই। সায় নেই স্বপনেরও। সে কারণ এই নয় যে রচনা দেখতে খারাপ! দেখতে রচনা যথেষ্ট সুন্দরী, শুধু এই বয়সেই যা একটু ভারী! অথবা, পড়াশোনায় একেবারেই ভালো না। এসএসসি পাসও করবে না। সেটাও কারণ নয়। কারণ প্রতিবেশী বাড়ি থেকে মেয়ে আনার ব্যাপারে তাদের কোনো সায় নেই। সায় নেই সুনীলের জেঠাতোভাই অবিনাশ কিংবা লালমোহনেরও। কিন্তু আপাতত সঞ্জয়কে এ নিয়ে কিছুই বলতে রাজি নয় সুনীল। সামনের পূজা যাক। ওদিকে সঞ্জয়ের ডিগ্রি পরীক্ষার রেজাল্ট বের হোক। একটা চাকরিতে ঢুকলে, যদি জেলার বাইরে কোথাও চাকরি হয়, তাহলে ধীরে ধীরে এই সম্পর্ক পাতলা হয়ে যাবে। এক সময়ে থাকবেই না। তবু সঞ্জয়ের ব্যাপারে ভিতরে ভিতরে সুনীল কি স্বপন দুজনের এক ধরনের ভীতি আছে। তারা কেউই বলতে গেলে লেখাপড়া সেভাবে করেনি। সুনীল যা হোক এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল, স্বপন ততদূরও এগোয়নি। তাদের পরের ভাইটা জীবন এসএসসি পাস করেই চলে গেল ভারতে, মামাতোভাইদের সঙ্গে। তারপর এই সঞ্জয় এবার বিএ পরীক্ষা দিয়েছে, ভালোভাবেই পাস করবে। এই ভাই যদি তাদের কথা না শুনে নিজের খেয়ালমতো একটা কিছু ঘটিয়ে ফেলে, তাহলে তখন তারা চাইলেও বাধা দিতে পারবে না। এ কথা সুনীল বুঝলেও। স্বপন বোঝে বলে মনে হয় না। শেষবার সুনীল বাড়ি এলে তাদের বাবা বীরেন্দ্রনাথ সুনীলকে ডেকে ওই কথা বলেছিল, সঙ্গে সুনীলকে এও বলেছিল, এই অবস্থা যেন সে স্বপনকে বুঝিয়ে বলে। সঞ্জয়ের কাছে বিষয়টা অবশ্য তা নয়। সে আবার দেবু হাত করেছে, যাতে রচনা রাতে দেবুর ঘরে আসতে পারে। দেবুকে বলেছে, সে যদি লোন চায় কোনো এনজিওর থেকে ব্যবস্থা করে দিতে পারবে। সঞ্জয় নিজেও চেষ্টা করছে আশায় ঢুকতে। যদি আশায় ঢুকতে পারে তাহলে দেবুর কোনো চিন্তা করতে হবে না। যদিও দেবু এ সময়ে এনজিও বলতে জানে শুধু ব্র্যাক আর গ্রামীণ ব্যাংকের নাম। আশা নামের এনজিও কথা এই প্রথম সে সঞ্জয়ের কাছে শুনেছে। তবে গ্রামের সবাই এখন যেভাবে দীনেশ মলঙ্গির বিরোধী তাতে তার কাছে থেকে সুদে টাকা আনার ব্যাপারে দেবু এখন দোটানায় আছে। সঞ্জয় তাকে কথা দেওয়ায় সেই দোটানা কেটেছে তার। কিন্তু সুনীল নিজে যে সমস্যায় পড়েছে, তা থেকে সে কীভাবে পরিত্রাণ পাবে তা সে কোনোভাবেই বুঝতে পারছে না। এখানে আসলেই বিভা গালমন্দ করে। হয়তো কারও কাছে শুনেছে, আজকাল পার্বতীর সঙ্গে সুনীলের রংঢং ভালোই। যদিও বিভা সুনীলের সঙ্গে আরও অনেক জড়িয়ে শুনে থাকে। কিন্তু পার্বতী বিভার গ্রাম সম্পর্কে পরিচিত বলেই তাকে চেনেন, আর কোনোদিনই সহ্য করতে পারে না। ফলে, বিভার বিষয়টা যেমন তার মাথায় থাকে। একই সঙ্গে এখানে এলেই পার্বতী তাকে বারবার একই কথা বলে, ওই সিনেমা হলের রাস্তার উলটো পাশের জমিটা কেনার ব্যাপারে সুনীল কিছু জানাচ্ছে না কেন? যার জমি সে নাকি ওটা বেচে দিয়ে ইন্ডিয়ায় যায়? যদি তাই যায়, তাহলে কারে না কারে কবে সস্তায় বেচে দেবে তখন তার জানতেও পারবে না। তারপর কী হবে? ওদিকে কেষ্ট মল্লিক সুনীলকে শত্রু ঠাওড়ায়। এই এক পার্বতীর জন্যে কেষ্ট মল্লিক তাকে প্রায় শত্রু ভাবলে তার খারাপই লাগে। অথচ সুনীল নিজেকে কখনও নিরুপায় অবস্থায় আবিষ্কার করে। সে কি করতে পারে। তাদের পারিবারিক বিরোধ এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে যে সেখান থেকে কেউ উদ্ধার করতে পারবে না। আজকাল প্রায়ই পার্বতী সবাইকে শোনায়, কেষ্ট মল্লিককে জেলের ভাত খাওয়াতে পারে সে। এই জোর সে কোথায় পায় তা কে জানে। যদিও এখনও উপজেলার নেতাদের সঙ্গে তার খায়খাতির ভালোই। মাঝখানে পরের ছেলেটা হওয়ায় একটু ভাটা পড়েছিল। এখনও কখনও উপজেলায় হঠাৎ পার্বতীর সঙ্গে দেখা হয় তার। তখন বেশ কাছে এসে দুটো কথা বলে, তারপর গলা নামিয়ে পার্বতী বলে, ‘তোমার দাদারে আমি ক’লাম জেলের ভাত খাওয়াব?’ সুনীল যদি তখন ধমকের সুরে বলে, ‘এ তুই কইস কী? বাড়ির বউ হইয়ে শ্বশুরের নামে এত বড়ো কথা কইস?’ তখন পার্বতী সেই নিচু গলাটা আরও নিচে রাখে দৃঢ়স্বরে বলে, ‘দিক তার ওই বউরে আবার জমি লিখে। এবার যদি কাউন্সিলের জমি আমার মামাতো ভাইরে না-দেয় তা’লি আমি বাধাব।’ ‘এ তার জমি। সে কারে দিয়ে করাবে তাতে তোর কী? ‘আমার কী? কেন তার ছওয়ালের আর আমার কতায় কোনো দাম নেই?’ ‘সেয়া থাকলিও। এহোনো সেই বাড়ির কর্তা। কৃপা তার ছ’ল। তোর অত কথায় কাজ কী?’ পার্বতী একটু যেন দম দেয়। আর সুনীল সেই সুযোগে বলে যেতে থাকে, আছো তো সুখে। টের পাও না সের কত। চাইটে খাইয়ে পইরে আছ ভালো, আর শ্বশুরের পিছনে লাগো?’ ‘লাগি না। লাগি না। তোমার ভাইপো আমারে এই জঙ্গলে নিয়ে ফেলাইচে। আর সেই হেনদে উঠতি দিতিচে না তোমার দাদা আমার শ্বশুর।’ ‘উইঠে তুই যাবি কোয়ানে?’ এইবার গলা নামিয়ে পার্বতী সুনীলকে বলে, ‘আসো না কী জন্যি বাড়ি? এই শালিরে তোমার দেকতি ইচ্ছে করে না?’ সুনীল এ কথার উত্তর জানে। উত্তর দিতেও পারে। কিন্তু সে উত্তর এখন দিতে গেলে, তাকে কাছে পেলে ফল তুলবে পার্বতী। সেই বাবদ পরে কেষ্ট মল্লিকের বিপক্ষে কাজ করতে হবে। এমনিতে কেষ্ট তাকে শত্রু ভেবে বসে আছে, তাতে আর শত্রুতা বাড়াতে চায় না সে। ফলে, ডেলাইটের আলোয় হরিসভা মন্দিরের চত্বরে দাঁড়িয়ে সুনীল ভাবে, এখন পার্বতী এসে তাকে দেখা করতে না-বললে হয়। অথবা, এখন এই ঢাকের বাদ্যের তালে তালে সুনীলকে তার সঙ্গে নাচতে হবে। এ সময় রণজয় সুনীলের পাশে এসে বলে, ‘সুনীল বাড়ি যাওয়ার আগে এট্টু শুনে যাইস। তোর সাথে কথা আছে।’ সুনীল জানে না, রণজয় তাকে কী বলবে। আচ্ছা, যদি সঞ্জয়ের সঙ্গে রচনার বিয়ের কথা তোলে তাহলে কী উত্তর দেবে? সুনীল রণজয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে অস্ফুট বলে, ‘আচ্চা!’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App