×

সাময়িকী

এক স্নেহপরায়ণ অভিভাবিকাকে হারালাম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০১৯, ০৯:১১ পিএম

এক স্নেহপরায়ণ অভিভাবিকাকে হারালাম

নবনীতাদি চলে যাওয়ায় আমিও আমার ব্যক্তিগত জীবনের এক স্নেহপরায়ণ অভিভাবিকাকে হারালাম। একটা লেখা ভালো লাগলে ফোন করে উৎসাহ দিতেন। বাংলা সাহিত্যের কথা যদি বলি তাহলে এ এক বিরাট ক্ষতি সন্দেহ নেই। তিনি বিভিন্ন ধরনের লেখা লিখতে পারলেও আমার কাছে তিনি প্রথমেই একজন কবি। সহজভাবে খুব গভীর কথা তিনি বলেছেন তার কবিতাতে। তার শেষ প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থটির নাম ‘যদি মনস্থির করো’। বইটি নিয়ে আমি দীর্ঘ আলোচনা লিখেছিলাম। অসম্ভব শক্তিশালী শব্দচয়ণ। তাঁর পড়াশুনার পরিধি কত বিশাল এবং বিশ্লেষণ ক্ষমতা কত প্রখর তা বোঝা যায় তাঁর ‘ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী ও অন্যান্য’ নামে প্রবন্ধগ্রন্থ পড়লে। তাঁর লেখা ‘আমি অনুপম’ নামে একটি উপন্যাস আমার কাছে খুবই উল্লেখযোগ্য বলে মনে হয়। করুণা তোমার কোন পথ দিয়ে, ট্র্যাকবাহনে ম্যাকমোহনে ইত্যাদি লেখার মধ্যে তাঁর ভ্রমণ সাহিত্যের রচনার বিশেষ বৈশিষ্ট্যের পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর গদ্যের ভাষা ছিল অত্যন্ত প্রাঞ্জল এবং রসসমৃদ্ধ। তার লেখা গল্পের মধ্যে ‘প্রাণবিন্দুবাবুর খরগোশ’ এবং ‘মাতৃয়ার্কি’ রচনা দুটির কথা এই মুহূর্তে মনে পড়ছে, যা বারবার পড়তে হয়। ‘নটী নবনীতা’? কী অসাধারণ আত্মকাহিনী! ‘ভালো-বাসার বারান্দা’ নামে নবনীতাদি বারো-তেরো বছর ধরে একটি ধারাবাহিক কলাম লিখে এসেছেন এক সাময়িকপত্রে। চার খণ্ড বইও বেরিয়েছে তাঁর। এই ভালো-বাসার বারান্দা রচনাটির জনপ্রিয়তা কত বিপুল ছিল তার প্রমাণ আমি বারেবারে পেয়েছি। কারণ বহু মানুষ আমাকে ভালো-বাসার বারান্দা পড়তে কত ভালো লাগে সে কথা নবনীতাদির বদলে আমাকে জানাতেন। এই ভালো-বাসার বারান্দার শেষ যে কিস্তি প্রকাশিত হয়েছে তা অত্যন্ত মর্মস্পর্শী। পড়ে চোখের জল ধরে রাখা যায় না। কয়েক মাস আগে যখন আমি, কাবেরী আর বুকুন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম, তখন একটা সবুজ শাড়ি পরে তিনি আমাদের আপ্যায়ন করলেন এবং বললেন, ‘তোরা কি আমার ক্যান্সার হয়েছে শুনে দেখা করতে এসেছিস? ধুস, এতে ভাবার কী আছে? এতে কেউ ভয় পায়?’ আমরা এটা জানি তাঁর খুব হাঁপানির কষ্ট ছিল। সারা জীবনই তিনি ওই কষ্ট নিয়ে প্রচুর বিদেশ ভ্রমণ, ছাত্রছাত্রী সামলানো এবং এই পরিমাণ লেখালেখি করে গিয়েছেন। চোখের সমস্যা যখন দেখা দিল, তখন তিনি মুখে বলে বলে তাঁর ধারাবাহিক কলাম ভালো-বাসার বারান্দা জারি রেখেছিলেন। নবনীতাদি ‘সই’ বলে একটি সংস্থা তৈরি করেছিলেন কেবল নারী লেখকদের নিয়ে। তাঁর অনুজপ্রতিম লেখিকারা সেই সংস্থার মধ্যে এসে যোগ দিয়েছিলেন। সব মিলে বাংলা সাহিত্যের এক বর্ণময় যুগের অবসান হলো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App