×

সাময়িকী

উত্তরা এক্সপ্রেস

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০১৯, ০৭:৫৭ পিএম

উত্তরা এক্সপ্রেস

কোন কবি কোন মতাদর্শে বিশ্বাসী, বড় কাগজে লেখেন না ছোট কাগজে লেখেন বা কবির ব্যক্তিজীবন এসবের বিন্দুমাত্র গুরুত্ব নেই। গুরুত্ব কেবল সেই লেখাটির, যে লেখাটি প্রকাশিত হবে।

উত্তরা এক্সপ্রেস (উত্তরের কবিতার স্বর) যাত্রা শুরু করে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। তবে তার বহু আগে থেকেই আমাদের ভেতরে কবিতা বিষয়ক একটি তীক্ষ্ন কাগজ করার সুপ্ত বাসনা ধীরে ধীরে প্রকট হয়ে উঠছিল। এই সময়টাকে গর্ভকালীন সময়ের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। একইসঙ্গে আনন্দদায়ক, যন্ত্রণাদায়ক এবং বিপজ্জনক। আনন্দ, যন্ত্রণা ও বিপদের বিষয়টা পরে খোলাসা হবে। তথাকথিত প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা বা প্রতিষ্ঠানমুখিতা কোনোটারই ধার ধারে না উত্তরা এক্সপ্রেস। উত্তরা এক্সপ্রেস কবির নাম নয়, কবিতা ছাপে। কোন কবি কোন মতাদর্শে বিশ্বাসী, বড় কাগজে লেখেন না ছোট কাগজে লেখেন বা কবির ব্যক্তিজীবন এসবের বিন্দুমাত্র গুরুত্ব নেই। গুরুত্ব কেবল সেই লেখাটির, যে লেখাটি প্রকাশিত হবে। অন্য বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলার পূর্বে উত্তরা এক্সপ্রেস জন্মলগ্ন থেকে যে বৈশিষ্ট্যগুলো ধারণ করতে চেয়েছে এবং আজীবন ধারণ করে যেতে চায় সেগুলো উল্লেখ করা যাক : ১. ‘উত্তরের কবিতার স্বর’ অর্থাৎ উত্তরবঙ্গের কবিতার স্বর। আমরা লক্ষ্য করেছি, সমগ্র উত্তরবঙ্গের কবিতার একটি আলাদা স্বর, একটি বিশেষ স্বকীয়তা আছে। এই বিশিষ্টতা তুলে ধরতেই উত্তরা এক্সপ্রেস উত্তরবঙ্গের কবিতা, কেবল উত্তরবঙ্গের কবিতাকেই ধারণ করে এগিয়ে যেতে চায়। ২. প্রতিষ্ঠান বা মিডিয়ার হাত পৌঁছায় না বা পৌঁছতে চায় না অথবা যেসব মহৎ কবি প্রতিষ্ঠান বা মিডিয়াকে সযত্নে এড়িয়ে চলেন তাদের পাঠকসম্মুখে উপস্থাপন করা। উদাহরণ : সিরাজুদ্দৌলাহ বাহার। ৩. সম্পূর্ণ নতুন স্বর তুলে ধরতে উত্তরবঙ্গের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা নতুন কিন্তু প্রতিভাবান কবিদের তুলে নিয়ে আসা। উদাহরণ : আল আমিন মোহাম্মদ। ৪. সাক্ষাৎকার ও পুনর্পাঠের মাধ্যমে তুলনামূলক কম পঠিত মহত্তর কবি ও কবিতার সঙ্গে তরুণ কবি ও পাঠকের পরিচয় করিয়ে দেয়া। এক্ষেত্রে শুধু উত্তরবঙ্গ নয় বরং সমগ্র বাংলা কবিতা জগতের সেসব মহৎ কবি ও তাদের কবিতা অগ্রগণ্য, যাদের কবিতার ওপর প্রচার মাধ্যমের একচোখা আলো না পড়ায় তারা কম পঠিত। অথচ তাদের কবিতা বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে পাঠ হওয়া প্রয়োজন বলে উত্তরা এক্সপ্রেস বিশ্বাস করে। উদাহরণ : ফালগুনী রায়। আমাদের বিগত সংখ্যাগুলো কীভাবে সজ্জিত হয়েছে তা দেখে নেয়া যাক। এতে পাঠক উত্তরা এক্সপ্রেস সম্বন্ধে একটি সম্যক ধারণা পাবেন। আমাদের প্রথম সংখ্যায় আছে আশির দশকের নিভৃতচারী কবি সিরাজুদ্দৌলাহ বাহার এর সাক্ষাৎকার। আছে শামীম হোসেন, আনিফ রুবেদ, শাহনাওয়াজ প্রামানিক সুমন, সমতোষ রায়, রফিকুল কাদির ও কাজী শোয়েব শাবাবের গুচ্ছ কবিতা। দ্বিতীয় সংখ্যায় মরণোত্তর একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি ওমর আলীর একগুচ্ছ কবিতার পুনর্পাঠ। এ ছাড়াও মাসুদার রহমান, রিঙকু অনিমিখ, সুজান সাম্পান ও আল আমিন মোহাম্মদের এর গুচ্ছ কবিতা। তৃতীয় সংখ্যায় কবিতা বিষয়ক গদ্য লিখেছেন সমতোষ রায়, মীর রবি ও মাহবুব অনিন্দ্য এবং কবিতাভাবনা ও গুচ্ছ কবিতা আছে যথাক্রমে শফিক লিটন, নুসরাত নুসিন, রনি বর্মন, ফারজানা ফারিন ও কাজী শোয়েব শাবাবের। চতুর্থ তথা এখন অবধি শেষ সংখ্যায় আছে হাংরি জেনারেশনের চিরতরুণ কবি ফালগুনী রায়ের একগুচ্ছ কবিতার পুনর্পাঠ সঙ্গে এ সময়ের দুই তরুণ কবি কাজী শোয়েব শাবাব ও যাহিদ সুবহানের পাঠ প্রতিক্রিয়া গদ্য এবং সমতোষ রায় ও আল আমিন মোহাম্মদের গুচ্ছ কবিতা। উত্তরা এক্সপ্রেস এর প্রতিটি সংখ্যারই প্রচ্ছদ করেছেন নিভৃতচারী শিল্পী শেখ আব্দুস সাত্তার। কৌতূহলী কবিতাপ্রেমীদের অনেকেই আমাদের প্রশ্ন করেন, উত্তরা এক্সপ্রেস এর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? তাদের সেই কৌতূহল নিবৃত্ত করতে নয় বরং আরো একটু উসকে দিতে বলছি, আমাদের বৈশিষ্ট্যই আমাদের লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য পূরণই আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। ‘উত্তরা এক্সপ্রেস’ এর প্রথম সংখ্যা প্রকাশের আগে আমাদের ভেতর এক অদ্ভুত আনন্দ কাজ করছিল, যাক অবশেষে আমরা আমাদের মতো করে কবিতা নিয়ে একটি কাজ করতে যাচ্ছি। তবে যতটা আনন্দ ছিল তার অধিক শঙ্কা বা দ্বিধা ছিল। কাগজটা শেষ অবধি কেমন হবে? সিরিয়াস পাঠক কীভাবে গ্রহণ করবেন? এই শঙ্কা বা দ্বিধাটাই হলো বিপদ। পাছে লোকে কিছু বলে আর কি। এই দ্বিধা আমাদের কাজটাকে ক্রমশ পিছিয়ে দিচ্ছিল। অবশেষে আমাদের ভেতরে এক বেপরোয়া মনোভাব জন্ম নিল। এখন নয় তো কখনো নয়। যেখানে ঝুঁকি নেই, সেখানে সফলতাও নেই। আমাদের এই ঝুঁকি নেয়াটা সফল হয়েছে। সচেতন পাঠকগণ আমাদের কাজ বেশ ভালোভাবেই গ্রহণ করেছেন। এই আনন্দ, এই বিপদ প্রতি সংখ্যা প্রকাশের পূর্বেই কাজ করে। শেষ অবধি অবশ্য আমাদের স্পর্ধা ও সাহসই জয়ী হয়। যে স্পর্ধা ও সাহস আমরা পাই মুক্তমনা ও প্রগতিশীল পাঠকদের কাছ থেকে। একটি সংখ্যার পরিকল্পনা করার পরে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অর্থাৎ কাগজ প্রকাশের আগ পর্যন্ত যে কী অদ্ভুত অস্বস্তি, ছটফটানি, উদ্বেলতা তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। একে প্রসবযন্ত্রণার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। এটি হলো যন্ত্রণা। একটা কথা না বলে পারছি না; প্রথা-বাক্সে বন্দি, প্রতিষ্ঠানমুখী, প্রতিক্রিয়াশীল একটি গোষ্ঠী আর কিছু অকবি আমাদের বিরুদ্ধে প্রথম সংখ্যা প্রকাশের পর থেকেই ক্রিয়াশীল। সবশেষে একজন অগ্রজ কবি সিরাজুদ্দৌলাহ বাহার, তাঁর কথা আর কী বলবো! নতুন করে নতুন কিছু বলতে পারছি না বিধায় প্রথাগত বাক্যেই বলি, তাঁকে ধন্যবাদ বা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের কোনো ভাষা আমাদের জানা নেই। উত্তরা এক্সপ্রেস নামটি তাঁর দেয়া, নামলিপিটিও তাঁরই হাতের। তাঁর কাছে আমাদের যে ঋণ সে ঋণ স্বীকার করেই উত্তরা এক্সপ্রেস সচেতন পাঠককুলকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App