×

জাতীয়

‘গ্রহজনিত জরুরি অবস্থা’ সংসদে পাস

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০১৯, ০৯:৫৪ পিএম

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহতা, সম্পদের অমিতচারী ব্যবহার আর অস্তিত্বের সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে ‘গ্রহণজনিত জরুরি অবস্থা’ ঘোষণার প্রস্তাব জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে।

বুধবার (১৩ নভেম্বর) রাতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির পক্ষে সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী প্রস্তাবটি সংসদে আনেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তা ভোটে দিলে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিতে পাস হয়।

উপর্যুপরি দুর্যোগের ভয়াবহ আঘাত, চরম ভাবাপন্ন আবহাওয়া বৃদ্ধি, জীব বৈচিত্রের অপূরণীয় ক্ষতি, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা, ক্রমবর্ধমান পানি সঙ্কট, মহাসাগরগুলোর ওপর অভাবনীয় চাপের প্রেক্ষাপটে এমন প্রস্তাব তোলা হয়। এটি পাস হওয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্বে প্রথমবারের মতো কোনো দেশের জলবায়ু আন্দোলন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার দৃষ্টান্ত তৈরি হলো।

প্রস্তাবে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, বিশ্বের ধনী দেশগুলোর কার্বণ নিঃসরণের ফলে আমাদের মতো দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কোটি কোটি মানুষ ক্লাইমেট রিভিউজি হতে বাধ্য হচ্ছে। দেশের সাড়ে ৪ কোটি মানুষ ক্লাইমেট উদ্বাস্তু হতে বাধ্য হচ্ছে।

সাবের হোসেন বলেন, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব নিয়ে উন্নত বিশ্ব যেসব অঙ্গীকার অতীতে করেছে তা তারা রাখেনি। তবে জলবায়ু নিয়ে বাংলাদেশ সাধ্যমত চেষ্টা করেছে। প্রস্তাবটি পাস হলে আগামীদিনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক কূটনীতির একটি ক্ষেত্র তৈরি হবে, যা হতে পারে রোল মডেল। পাশাপাশি জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্লাটফর্মে এটা উপস্থাপন করতে পারবো।

সাবের হোসেন বলেন, আগামী মাসে স্পেনে অনুষ্ঠিত কপ-২৫ সম্মেলনেও আমরা মডেল হতে পারি। এর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিশ্বব্যপী যে আন্দোলন চলছে তার নেতৃত্ব দিতে পারবে বাংলাদেশ। আমরা হবো পৃথিবীর প্রথম ও একমাত্র সংসদ যারা প্লানেটারি ইমার্জেন্সি ঘোষণা করছি।

প্রস্তাবটিতে সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দীন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, জাসদের শিরিন আখতার, বিএনপির হারুনূর রশীদ, রুমিন ফারহানা, জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজী, মুজিবুল হক চুন্নু প্রমুখ।

জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের মহাবিপদ সম্পর্কে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, জলবায়ু অভিঘাতে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ৬ ফুট বেড়ে গেলে ঢাকাসহ বিশ্বের বহু শহর পানিতে ডুবে যেতে পারে। বর্তমানে আমরা এক বছরের সম্পদ ৭ মাসেই শেষ করে ফেলছি। বিশ্বের ২৩টি উন্নত দেশের সংসদে তাদের দেশে জলবায়ু জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।

বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দীন বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের ১০টি ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যে ওঠা নামা করে। ক্লাইমেট চেঞ্জের অভিঘাতে বাংলাদেশ সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত। বাংলাদেশ বিশ্বে সব চেয়ে কম কার্বন নিঃসরণ দেশ হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু ধনীদেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুতি মতো ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে না।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, জলবায়ুব পরিবর্তনের ফলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ৫-৬ ফুট বেড়ে গিয়ে বাংলাদেশের উপকূলীয় ২৯টি জেলা ডুবে যাবে। শেখ ফজলুল করীম সেলিম বলেন, আয়লা, ফনী, বুলবুল সবই আমাদের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। এতে কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে, আমাদের অস্তিত্বের ওপর আঘাত আসছে। এসময় তিনি কপ-২৫ সম্মেলনে বিষয়টি জোরাল ভাবে তুলে ধরার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App