×

শিক্ষা

এসএসসির ফরম পুরণে ‘গলাকাটা’ ফি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০১৯, ০৮:৫৭ পিএম

এসএসসির ফরম পুরণে ‘গলাকাটা’ ফি

দাদপুর সাহেবগঞ্জ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার দাদপুর সাহেবগঞ্জ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পুরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। আর টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্যদের অর্থের বিনিময়ে সুযোগ দিয়ে চার থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। অভিভাবকদের অতিরিক্ত ফি আদায়ের প্রতিবাদেও কোন কাজ হয়নি। বরং প্রতিবাদকারী শিক্ষার্র্থীদের ফরম পূরণে করা হবে না এমন হুমকিও দেয়া হয়েছে। বুধবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে পরীক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ বছর বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষার জন্য ১০৯ জন শিক্ষার্থী টেস্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে সকল বিষয়ে কৃতকার্য হয় বিজ্ঞান বিভাগের ২১ জন ও মানবিক বিভাগের এক জন, মোট ২২ জন শিক্ষার্থী। এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয় ১৬ জন, দুই বিষয়ে ৮ জন এবং তিন বিষয়ে অকৃতকার্য হয় ১০ জন। অবশিষ্ট আরো অধিক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়।

এদিকে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক ২০২০ সালে এসএসসি পরীক্ষার ফি বিজ্ঞান বিভাগে ১৯৭০ টাকা, বাণিজ্য ও মানবিক বিভাগে ১৮৫০ টাকা নির্ধারিত থাকলেও তা মানছে না বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বুধবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বিজ্ঞান বিভাগে বোর্ড ফি হিসেবে নেয়া হচ্ছে ২ হাজার ৩৫৫ টাকা। এর সাথে অতিরিক্ত ক্লাসের নামে কোচিং ফি আদায় করা হচ্ছে আরো এক হাজার টাকা। বাণিজ্য ও মানবিক বিভাগে নেয়া হচ্ছে বোর্ড ফি বাবদ ২ হাজার ২৩৫ টাকা। আর এর সাথে যোগ হচ্ছে কোচিং ফি বাবদ আরো এক হাজার টাকা। সব মিলিয়ে বিঞ্জান বিভাগে ৩ হাজার ৩৫৫ টাকা, মানবিক বিভাগে ৩ হাজার ২৩৫ টাকা।

যেসমস্ত শিক্ষার্থী এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে তাদের জন্য ৪ হাজার টাকা, দুই বিষয়ে অকৃৃতকার্যদের জন্য ৫ হাজার টাকা এবং তার অধিক বিষয়ে অকৃতকার্যদের জন্য আদায় করা হচ্ছে ৬ হাজার টাকা। এর সাথে অতিরিক্ত ক্লাসের জন্য বাড়তি আরো ১ হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে।

বিদ্যালয়ের ২০২০ সনের এসএসসি পরীক্ষার্থী খায়রুল ইসলাম জানায়, সে দুই বিষয়ে অকৃতকার্য রয়েছে। এজন্য তাকে দিতে হয়েছে পরীক্ষার ফি বাবদ ৩ হাজার টাকা এবং অতিরিক্ত ক্লাসের জন্য আরো এক হাজার টাকা। সাজু নামের এক শিক্ষার্থী জানায়, সে তিনটি বিষয়ে অকৃতকার্য রয়েছে। এজন্য তাকে দিতে হচ্ছে ৫ হাজার টাকা। তবে সে এখনো টাকা পরিশোধ করেনি বলে জানায়। মারুফ হোসেন নামের এক শিক্ষাথী জানায়, সে বেশ কয়েকটি বিষয়ে সমস্যা রয়েছে। এজন্য তার ফি ধরা হয়েছে ৬ হাজার টাকা। আর অতিরিক্ত ক্লাসের জন্য আরো এক হাজার টাকা সহ মোট ৭ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে।

বিদ্যালয়ের ফরম পূরণের নোটিশের সাথে অতিরিক্ত ক্লাস বাধ্যতামুলক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা আরো অভিযোগ করে বলে প্রধান শিক্ষকের পা ধরেও কোন কাজ হচ্ছে না। আর প্রতিবাদ করলে ফরম পূরণ করতে দেয়া হবে না এমন হুমকী দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে বাধ্য হয়েই অনেকে ফরম পূরণ করেছে। এর মধ্যে টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্যরাও রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফ জানান, নির্বাচনী পরীক্ষায় ৯৮ জন পরীক্ষার্থী কৃতকার্য হয়েছে। তবে তিনি এর কোন প্রমাণ দেখাতে পারেননি। নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত টাকা নেয়া হচ্ছে না বলেও দাবি করেন তিনি। অতিরিক্ত ক্লাসের বিষয়ে তিনি জানান, এটা নিয়ম মেনেই নেয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে রায়গঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহাদত হোসেন জানান, যেসমস্ত শিক্ষার্থী নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে তাদের ফরম পূরনের কোন সুযোগ নেই। যদি সুযোগ দিয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই এটা অবৈধভাবে সুযোগ দেয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত ক্লাসের নামে কোচিং ফি নেয়ার কোন সুযোগ নেই। যদি নিয়ে থাকে সেটাও অবৈধ। বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন কর্মকর্তা।

এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীমুর রহমান বলেন, বিষয়টি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে এখনই তদন্তের জন্য নির্দেশ দেয়া হচ্ছে এবং তার প্রতিবেদন পাওয়ার পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শিক্ষা বোর্ডকে পত্রের মাধ্যমে অবহিত করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App