×

জাতীয়

হতাশায় বিএনপি ছাড়ছেন পোড় খাওয়া নেতারা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০১৯, ১১:৩৯ এএম

দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির ইস্যুতে রাজপথে দৃশ্যমান আন্দোলন কর্মসূচি না দেয়া, তাকে কারাগারে রেখে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া, অকারণে মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়া ও বিএনপি পুনর্গঠনসহ দলীয় সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সিনিয়রদের মতামত অবজ্ঞাসহ নানা ইস্যুতে ক্ষোভ-হতাশা নিয়ে ঘর ছাড়ছেন বিএনপির এক সময়কার পোড় খাওয়া নেতারা। অবশ্য বিএনপির পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হচ্ছে, সরকারের প্ররোচনা ও চাপের মুখে কয়েকজন নেতা দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আরো কয়েকজন হাঁটছেন একই পথে। দলীয় সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পরই রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় পড়ে বিএনপি। বিশেষ করে তারেক রহমান দলের দায়িত্ব নেয়ার পর যে সব সিনিয়র নেতা জিয়ারউর রহমানের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন তারা অস্বস্তিতে পড়েন। কারণ, ব্যক্তিগতভাবে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের হাতেগোনা দুয়েকজন নেতা ছাড়া কোনো নেতার সঙ্গে কথা বলেন না তারেক রহমান। দলীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে তাদের মতামতও অগ্রাহ্য করা হয়। এসব কারণে তারেকের নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্তে খুশি নন সিনিয়রা। এ খবর তারেকের কানে পৌঁছালে দলীয় ফোরামের বৈঠকে ওই সব নেতার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অনেকবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারেক। এ ছাড়াও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়াকে ঘিরে তারেক রহমানের সঙ্গে সিনিয়র নেতাদের দূরত্ব বাড়ে। নির্বাচনের পর দলের পাঁচ এমপির শপথ নিয়েও বিএনপির স্থায়ী কমিটিসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে টানাপড়েন শুরু হয়। জানা গেছে, সিনিয়র নেতাদের না জানিয়েই দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠক করেন তারেক। এমনকি সিনিয়রদের গোপন করে বিএনপির সাংগঠনিক জেলা ও দলের অঙ্গসংগঠন পুনর্গঠন করতে গিয়ে কোন্দল আর দলাদলি উসকে দেয়া হয়েছে। এ কারণ আটকে আছে বিএনপির সাংগঠনিক জেলা পর্যায়ের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া। সম্প্রতি দলের ওপর দায় চাপিয়ে পদত্যাগ করেছেন সিনিয়র নেতা মোর্শেদ খান। অসুস্থতা ও বার্ধক্যজনিত কারণে রাজনীতি থেকে অবসরে যেতে বলা হয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমানকে। সে পরিপ্রেক্ষিতে তিনি পদত্যাগ করেছেন বলেও জানা যায়। হঠাৎ তাদের এই পদত্যাগের ঘোষণায় ফের আলোচনায় এসেছে বিএনপির পোড় খাওয়া নেতাদের ঘর ছাড়ার প্রসঙ্গ। কেন তারা পদত্যাগ করছেন এ নিয়ে রয়েছে নানা জল্পনা কল্পনা। জানা গেছে, এই দুই নেতার পর বিএনপির আরো ৫ থেকে ৭ নেতা দল ছাড়ছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর, আলতাফ হোসেন চৌধূরীরও। দলের ওপর ক্ষুব্ধ আরো দুই ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান এবং হাফিজ উদ্দিন আহমেদও আছেন এ তালিকায়। গত ৭ নভেম্বর এ নিয়ে গুলশানে এক সিনিয়র নেতার বাসায় তারা বৈঠক করেছেন বলেও জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে তাদের কেউই কথা বলতে চাননি। বিগত কয়েক বছরে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন ভাইস চেয়ারম্যান শমসেন মবিন চৌধুরী, মোসাদ্দেক আলী ফালু ও ড. এনাম আহমেদ চৌধুরী। তাদের সবার পদত্যাগের কারণও ভিন্ন। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা জানান, রাজনীতি থেকে নানা করণে কেউ অবসরে যেতেই পারেন। তবে বিপদের সময় দলের ওপর দায় চাপিয়ে সরে পড়া কারো কাছে কাম্য নয়। এমনকি যারা দল ছাড়ছেন তাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কোনো কোনো নেতা বলেন, রাজনীতি করতে হলে নানা চড়াই উৎরাইয়ের মাঝে কাজ করার মানসিকতা থাকা উচিত। পাশাপাশি অনেকেই মনে করছেন, পদ যেটাই হোক, দলের জন্য কাজ করার অনেক কিছুই থাকে। যারা একটা সময়ে দলকে আগলে রেখেছেন; দুঃসময়ে তাদের চলে যাওয়া দলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দুই সিনিয়র নেতার পদত্যাগে দলে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। কারণ, শারীরিক অসুস্থতার কারণে তারা দীর্ঘদিন ধরেই রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দুয়েকজন নেতাকর্মী দল ছাড়লে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ, দলে অনেকেরই ইচ্ছা এমপি-মন্ত্রী হওয়া। দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যখন সরকার গঠন করেছিলেন তখন অনেক নামিদামি নাদুসনুদুস নেতারা দলে এসেছেন। এখন হয়তো তাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। সেই কারণে তারা প্রস্থান করতে চায়। এগুলো গুরুত্ব দেয়ার দরকার নেই। দলত্যাগী তাদের উদ্দেশে দলের যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল বলেন, চলে যাওয়ার আগে সরকারকে খুশি করার জন্য বিএনপিকে নিয়ে আজেবাজে মন্তব্য করে যাবেন তা মেনে নেয়া যাবে না। মনে রাখবেন, ভবিষ্যতে আপনাদের নিরাপত্তা বিএনপি দিতে পারবে না। আপনারা চলে যাবেন, নিরবে চলে যান। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলছেন, যারা চলে যাচ্ছেন এটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। তবে যাদের বয়স হয়েছে এবং অসুস্থ তারা অবসরে যেতেই পারেন। তবে দলের এই দুঃসময়ে তাদের পাশে থাকা উচিত ছিল। বিএনপির সিনিয়র নেতৃত্বের ওপর ক্ষুব্ধ দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। স¤প্রতি তিনি কারাগার থেকে বেরিয়ে বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, তিনবার জেলে গিয়েছি। প্রত্যেকবার রাজপথ থেকে গিয়েছি। আমাকে বাসা থেকে ধরেনি কখনো। একটা লোক ফোন করে খবরও নেয়নি। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, জিয়ার সঙ্গে যারা বিএনপির রাজনীতি করেছেন তারা তারেক রহমানের সঙ্গে রাজনীতি করতে গিয়ে মতপার্থক্যের সৃষ্টি হবে এটা স্বাভাবিক। কারণ লন্ডনে বসে তারেক রহমান অনেক কিছুই বুঝবেন না। এই মূহর্তে বিএনপির উচিত দ্রুত কাউন্সিল করা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App