প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা ও সামগ্রিক প্রস্তুতি
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০১৯, ১০:৪২ পিএম
ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে পৃথিবীর অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ ভয়াবহ রূপ নিয়ে ধেয়ে আসতে থাকে। এতে আবহাওয়া অধিদপ্তর ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করে দুই বন্দরসহ কয়েকটি উপকূলীয় জেলায়। তবে শনিবার রাতে অনেকটা দুর্বল হয়ে সুন্দরবন দিয়ে বাংলাদেশে আঘাত হানে। সুন্দরবনের কারণে বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পায়। এটাও ঠিক যে, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ এখন আগের চেয়ে সক্ষমতা অর্জন করেছে। জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে আট জেলায় ১৩ জন নিহত হয়েছে। একই সঙ্গে উপকূলীয় অঞ্চলে গাছপালা ভেঙে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎবিহীন ও বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে লক্ষাধিক পরিবার। এর মধ্যে শুধু সাতক্ষীরায় বুলবুলের তাণ্ডবে ৫০ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। বলা যায়, আগাম সতর্কতায় উপকূলীয় স্থানের বাসিন্দাদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেয়ার ফলে বুলবুলের আঘাত সেভাবে বিপাকে ফেলতে পারেনি। ৫০ থেকে ৮০ দশক পর্যন্ত এ দেশের শহর ব্যতীত সব বাড়িঘর বাঁশ, বেত, ছন ও মাটির ছিল। সাধারণত বৃষ্টি বা দমকা হাওয়ায় লণ্ডভণ্ড করে দিত বাড়িঘর। এখন সে অবস্থানের অনেক পরিবর্তন আসছে। জানা গেছে, গত দশ বছরে দেশে মোট ছয়টি বড় ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল ‘মোরা’। ২০১৭ সালের ৩০ মে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোরা আঘাত হেনেছিল। এর গতি ছিল ঘণ্টায় ১৪৬ কিলোমিটার। এর আগে ২০১৬ সালের ২১ মে ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ আঘাত হানে। এর গতিবেগ ছিল ১২৮ কিলোমিটার। ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই আসে ‘কামেন’। এর গতি ছিল ৬৫ কিলোমিটার। ২০১৩ সালের ১৬ মে আসে ‘মহাসেন’, যার গতি ছিল ১০০ কিলোমিটার। আর ২০০৯ সালের ২৫ মে আঘাত হানে ‘আইলা’। কয়েক মাস আগে ফণী এবং সর্বশেষ বুলবুল। এর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার। ভূখণ্ডে আঘাত হানার সময় এর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৪০ কিলোমিটার, কিন্তু সুন্দরবনের গাছপালার কারণে সেটির প্রভাব ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারের মতো অনুভূত হয়। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের ছোবল থেকে উপকূলীয় এলাকা রক্ষায় সুন্দরবন ঢাল হিসেবে কাজ করেছে। এই বন না থাকলে উপকূলে বড় ধরনের তাণ্ডব হতে পারত। আইলা, সিডরের সময় বাংলাদেশের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। সে সময় ক্ষয়ক্ষতি বেশি ছিল কারণ আমাদের প্রস্তুতি ছিল না। কিন্তু এখন বাংলাদেশ অনেক বেশি সক্ষমতা অর্জন করেছে। এ কথা অনস্বীকার্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কমবেশি আসবেই। প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে দুর্যোগের ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি মানুষের চেষ্টায় যে কমিয়ে আনা সম্ভব তাতে সন্দেহ নেই।