ভোটে নেতা নির্বাচন করতে চায় বিএনপি দল পুনর্গঠনে নতুন চ্যালেঞ্জ
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০১৯, ১১:০২ এএম
দলের ভেতরে গণতন্ত্র চর্চা ও যোগ্য নেতৃত্ব বেছে নিতে দীর্ঘদিনের রেওয়াজ ভেঙে এবার গঠনতন্ত্র অনুসারে নেতৃত্ব নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। আগামী কাউন্সিলে চেয়ারপারসন ছাড়া বাকি সবগুলো পদে সরাসরি ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। নতুন এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে দলটির তৃণমূল। তবে সিন্ডিকেট ভেঙে এ প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব নির্বাচনে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে দলটি। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, আগামী ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি নাগাদ কাউন্সিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে হাইকমান্ডসহ জেলা ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন। কাউন্সিলের মাধ্যমে সরাসরি ভোটে এসব ইউনিট কমিটির নেতা নির্বাচনের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। প্রয়োজনে গোপনে ব্যালটের মাধ্যমেও কমিটি গঠন হতে পারে।
১ যুগেরও বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে চায়। কিন্তু পকেট কমিটির কারণে অধিকাংশ নেতাকর্মী সাংগঠনিক কাজে মনোযোগী নন। ফলে সরকারবিরোধী অনেক শক্তিশালী। ইস্যুও কাজে লাগাতে পারেনি দলটি। উল্টো সরকারের কৌশলের কাছে বরাবরই পিছু হটেছে। ভবিষ্যতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে আর পিছু হটতে চায় না বিএনপি। এ জন্য মাঠের আন্দোলনে জয়ী হতে সৎ ও ত্যাগী নেতাদের হাতে নেতৃত্ব দেয়ার চিন্তা করছে বিএনপির হাইকমান্ড।
বিএনপির হাইকমান্ডের মতে, স্বচ্ছতা বজায় রেখে সৎ ও ত্যাগী নেতারা নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্বে এলে দলের ভেতর জবাবদিহিতা তৈরি হবে। যে কোনো আন্দোলন সফল করাও সহজ হবে। এ ক্ষেত্রে সম্প্রতি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত ছাত্রদলের নেতৃত্বকে উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কাউন্সিলের মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় কেটে গেছে ছাত্রদলের সব সংকট। তারা স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে।
এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভোরের কাগজকে বলেন, সংগঠন ও আন্দোলন দুটোই পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। শক্তিশালী সংগঠন ছাড়া কখনোই আন্দোলন সফল হয় না। এ জন্য তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সংগঠন শক্তিশালীকরণের কাজ চলছে। তৃণমূলের যে সব জায়গায় কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে সে সব জায়গায় পুনর্গঠন শুরু হয়েছে। আংশিক কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করার কাজ চলছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে।
জানা গেছে, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি আর প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সুপার ফাইভ বা সুপার সেভেন নামে হবে না। ইতোমধ্যে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ছাত্রদল ও কেরানীগঞ্জের কয়েকটি ইউনিয়নের নেতৃত্বও ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছে। যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কাউন্সিল হবে নভেম্বরের মধ্যেই।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে যে কোনো ধরনের রাজনীতি করাই বেশ কঠিন। তাই আগামীতে কাউন্সিলে ভোটের মাধ্যমে যোগ্য নেতৃত্ব তুলে আনা হবে। এটাই সিদ্ধান্ত। দলের গঠনতন্ত্রে যেখানেই নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কথা বলা হয়েছে সেখানেই এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
এ বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, কাউন্সিলে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়া ড্যাব থেকে শুরু হয়েছে। এর আগে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যখন দেশে ছিলেন তিনিই বগুড়া থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। আমরা একে বগুড়া মডেল বলতাম। এতে করে মূল শক্তি যে মাঠ পর্যায়ের তৃণমূল তারা মতামত দিতে পারেন। এটি করা হলে তৃণমূলের প্রতি নেতৃত্বের টান থাকে। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় নেতাদেরও দায়িত্ব বেড়ে যায়।
সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, সিন্ডিকেট ভেঙে যোগ্য নেতৃত্ব আনতে এটা একটা ভালো উদ্যোগ। তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে কমিটি হলে সেটা সঠিক হবে এবং ভবিষ্যতে আমাদের আন্দোলন সংগ্রামে সেটা কাজে লাগবে।