×

সাহিত্য

পর্দা নামল লিট ফেস্টের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০১৯, ০৮:৫৭ পিএম

পর্দা নামল লিট ফেস্টের
সকাল থেকেই ছিল গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি আর ঝড়ো হাওয়া। চারিদিকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল নিয়ে আতংক। রাজধানীতেও তাই। এরই মধ্যে ভজনের সুরে শুরু হলো ঢাকা লিট ফেস্টের সমাপনী দিনের সকাল। শনিবার (৯ নভেম্বর) সকালে বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসের সামনে লন চত্বরে ভজন ও কীর্তন করেন ইসকনের সংগীত দল। এরপর শুরু হয় বিভিন্ন সেশন চলে বিকেল পর্যন্ত। শেষ দিকে ঝড়ের ঝাঁপটায় কিছু সেশন বাদ দেয়া হয়। তারপরও আগামী বছর আরও বৃহৎ পরিসরে আয়োজনে প্রত্যয়ে শেষ হলো ঢাকা লিট ফেস্টের নবম আসর। আয়োজন শেষ হয় দক্ষিণ ভারতীয় সাংবাদিক তিশানি দোশির আবৃত্তি ও নৃত্যনাট্য দিয়ে। এরপর বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহা পরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী, সিটি ব্যাংকের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মাশরুর আরেফিন, ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান, সাদাফ সায্ ও ব্রাজিলিয়ান লেখক মারিয়া ফিলোমেনা বৈসো লেপেস্কি। সমাপনী আয়োজনে ঢাকা লিট ফেস্টের পরিচালক সাদাফ সায্ আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এ ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে এই আয়োজন আরও আকর্ষণীয় ও জনমানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারবেন। ঢাকা লিট ফেস্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বাংলা সাহিত্যকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি জানান তিনি। এর আগে সকালে নজরুল মঞ্চে একটি শিশুতোষ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বইটির নাম ‘সাগর তীরে’। উন্মোচনের পর লেখক নাজিয়া জেবীন বই থেকে শিশুদের গল্প পড়ে শোনান। উন্মোচনের সময় বইটির প্রকাশক মিথিয়া ওসমান এবং মুদ্রণকারী মৌমিতা শিকদার উপস্থিত ছিলেন। একই মঞ্চে পরবর্তীতে ‘দ্য এলিফ্যান্ট ইন দ্য রুম’ বইয়ের লেখক নন্দিতা খান বইটি থেকে শিশুদের গল্প পড়ে শোনান। এসময় বইটির মুদ্রণকারী শাফরিন ইসলামও উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে আবারও একই মঞ্চে ওঠেন কার্টিস জবলিং। তিনি শিশুদের বিভিন্ন শব্দজট ও ছবির মাধ্যমে নানা জিনিস শেখান। কয়েকটি গল্পের সঙ্গে অভিনয় করেও দেখান। এসময় লনে রিভাইভিং দ্য আর্ট অব স্টোরিটেলিং’ শীর্ষক শিশুতোষ আলোচনায় মাদিহা মোরশেদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ চিত্রকর ও অ্যানিমেটর কার্টিস জবলিং, চাইল্ড স্পেশালিস্ট ফ্রান হুরলি, নিউরোসায়েন্টিস্ট নাইলা জামান খান এবং সাজিয়া জামান। ‘চাইল্ড কেয়ারিং অ্যান্ড চাইল্ড ল্যাংগুয়েজ ডেভেলপমেন্ট’ ছিল আলোচনার মূল বিষয়। শিশুদের শিক্ষা দিন দিন প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ছে। শিশুদের বিকাশ ঠিক মতো ঘটছে না। এ প্রসঙ্গে, কার্টিস জবলিং বলেন, একমাত্র পরিবারই শিশুকে গল্প শুনিয়ে আনন্দময় শিক্ষা দিতে পারে যা তার সঠিক মানসিক বুদ্ধিবৃত্তিতে সাহায্য করবে। শিশুদেরকে গৎবাঁধা বই হাতে ধরিয়ে না দিয়ে, খেলাচ্ছলে কল্পনানির্ভর শিক্ষা দেওয়া উচিৎ বলে তিনি মনে করেন। একমত হয়ে, ফ্রান হুরলি বলেন, ‘প্রযুক্তি নয়, পরিবার শিশুশিক্ষার প্রধান মাধ্যম।’ পাশাপাশি বাংলা একাডেমির কসমিক টেন্টে ‘পাওয়ার অব পিকচার’ সেশনে উপস্থিত ছিলেন গ্রাফিক নভেলিস্ট ও কার্টুনিস্ট ফাহিম আঞ্জুম এবং চলচ্চিত্র ও বিজ্ঞাপন নির্মাতা আবরার আখতার। সঞ্চালক ছিলেন কার্টুনিস্ট সৈয়দ রাশাদ ইমাম তন্ময়। কমিকস থেকে সমাজের যে বড় পরিবর্তন এসেছিল, তা নিয়ে আলোচনার মাধ্যমেই ‘পাওয়ার অব পিকচার’ সেশনটি শেষ হয়। আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ অডিটোরিয়ামে পুলিৎজার পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক জেফরি গেটেলম্যান তার বই ‘লাভ, আফ্রিকা: আ মেমোয়ার অব রোমান্স, ওয়ার অ্যান্ড সারভাইভাল’ নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন। ‘লাভ, আফ্রিকা’ শীর্ষক সেশনটি সঞ্চালনা করেন জাফর সোবহান। জেফরি গেটেলম্যান জানান, আফ্রিকা থাকাকালীন তার দশ বছরের অভিজ্ঞতার নির্যাস এই বই। তিনি নিউইয়র্ক টাইমসের পূর্ব আফ্রিকা বিষয়ক ব্যুরো-প্রধান ছিলেন। কলেজে থাকার সময়ও তিনি কখনও সাংবাদিক হবেন- এমনটা ভাবেননি। হঠাৎ করে আফ্রিকায় চলে যাবেন। চাকরির জন্য তার কলেজজীবনের প্রেমিকার সঙ্গে বার বার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তবে পরে সেই প্রেমিকাকেই বিয়ে করে তিনি আফ্রিকায় পাড়ি জমান। জেফরি গেটেলম্যান বলেন, আফ্রিকায় পরিবারসহ থাকাটা সবসময় নিরাপদ ছিল না। সোমালিয়ায় যেকোনও মুহূর্তে অপহরণ হওয়ার ভয় ছিল। কিন্তু আমার স্ত্রী এবং আমি আমাদের পুরো সময়টাতে নিউইয়র্কের নাগরিক জীবনের বাইরে প্রাকৃতিক জীবন উপভোগ করেছি, মানুষের সঙ্গে মিশে তাদের জীবন বোঝার চেষ্টা করেছি।’ সকালে সবচেয়ে জমজমাট আলোচনা ছিল ভারতীয় রাজনীতিক শশী থারুর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সি আর আবরারের আলাপ। লেখক শশী থারুরের বই নিয়ে আলাপ করার পরিকল্পনা থাকলেও সেটি গড়ায় কাশ্মির, মোদি, ও রামমন্দির ইস্যুতে। এ সময় বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রহমান সেমিনার কক্ষে আয়ে়াজিত ‘সাহিত্য ও সাংবাদিকতা: দ্বৈতসত্তার মিল-অমিল’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের কবি ও সাংবাদিক মৃদুল দাশগুপ্ত, প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও কবি সাজ্জাদ শরীফ এবং কবি ও দৈনিক সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নিউজটোয়েন্টিফোর এর প্রধান বার্তা সম্পাদক শাহনাজ মুন্নী। এ সময় বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তনে ‘অন দ্য রোড: ট্রাভেল রাইটিং উইথ উইলিয়াম ড্যালরিম্পল’ শীর্ষক সেশনে ইতিহাসবিদ উইলিয়াম ডালরিম্পল বলেন, গত শতকের নব্বইয়ের দশক এবং একুশ শতকের গোড়ার দিকে প্রায় ২৫ বছর ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণের পর এখাকার মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের বৈচিত্র্য তাকে জীবন নিয়ে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। এদিকে বেলা ৩টায় মঞ্চের জুটি ও ব্যাক্তি জীবনের জুটি ফেরদৌসী মজুমদার ও রামেন্দু মজুমদার আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মঞ্চে বসেন জীবন ও পেশার গল্প নিয়ে। এই সাহিত্য উৎসবের নবম আসরের তৃতীয় দিন শনিবার বাংলা একাডেমির আবুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে ‘মঞ্চের জুটি, জীবনের জুটি’ শীর্ষক সেশনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের থিয়েটার জগতের এই দুই দিকপাল। সেশনটি সঞ্চালনা করেন নাট্যকার ও শিক্ষক আব্দুস সেলিম। সেশনের শুরুতেই ফেরদৌসী মজুমদারের কাছে সঞ্চালক তাদের বিয়ের আগের জীবনের কথা জানতে চান। ফেরদৌসী বলেন, আমরা অনেক যুদ্ধ করে এতদূর আসতে পেরেছি। আমার বাবা ছিলেন খুবই রক্ষণশীল। ওই সময়ে আমাদের ভালোবাসার কথা জানানোর কোনও পরিস্থিতি ছিল না। কিন্তু আমি তার মতোই জেদি ছিলাম। আমার বাবা একসময় রাজি হয়ে যান আমাদের বিয়েতে। কিন্তু ’৭০ সালে এই বিয়ে প্রকাশ্যে হওয়া সম্ভব ছিল না। আমার দুই ভাই কবীর চৌধুরী ও মুনীর চৌধুরীর সাহায্যে এই বিয়ে সম্ভব হয়। রামেন্দু মজুমদার বলেন, আমরা দুজনই মুনীর চৌধুরী ও আবদুল্লাহ আল মামুনের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। তারা না থাকলে আমরা থিয়েটারে এতদূর আসতে পারতাম না। একসঙ্গে এত লম্বা জীবন অতিবাহিত করার রহস্য কী? এমন প্রশ্নের জবাবে রামেন্দু মজুমদার বলেন, এখানে কোনও রহস্য নেই। আমাদের পারস্পরিক বিশ্বাস, শ্রদ্ধাবোধ ও বন্ধুত্বের কারণেই আমরা এতদূর আসতে পেরেছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App