মোদির কাশ্মির ‘প্রেসক্রিপশনে’ শশী থারুরের কটাক্ষ
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০১৯, ০৭:১২ পিএম
ঢাকা লিট ফেস্টে লোকসভার সদস্য শশী থারুর
ঢাকা লিট ফেস্টে লোকসভার সদস্য শশী থারুর
‘গুলি না করে, গালি না দিয়ে, বুকে টেনে নিয়ে কাশ্মিরিদের সমস্যার সমাধান হবে’- একসময় কাশ্মির ইস্যুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার নিজের দেয়া এই ‘প্রেসক্রিপশন’ হয়তো ভুলে গেছেন বলে মন্তব্য করেছেন ভারতীয় রাজনীতিবিদ ও লোকসভার সদস্য শশী থারুর।
ঢাকা লিট ফেস্টের সমাপনী দিন শনিবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে ‘ইন্ডিয়া এগেইনস্ট ইটসেলফ’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় শশী থারুর এমন মন্তব্য করেন।
এ রাজনীতিবিদ বলেন, কাশ্মীর সঙ্কট নিরসনে মোদীর ওই পদ্ধতিই কার্যকর উপায় ছিলো। কিন্তু তিনি নিজের দেওয়া সেই প্রতিশ্রুতি এখন ভুলে গেছেন।আশা করি আগামী সপ্তাহে সংসদে তাকে সেটা আমি মনে করিয়ে দেবো।
কাশ্মির প্রসঙ্গে দর্শক সারি থেকে ওঠা এক প্রশ্নের জবাবে কংগ্রেসের এই নেতা বলেন, যেভাবে কাশ্মীর ইস্যুর সমাধান করা হচ্ছে, সেটা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উপায় হতে পারে না। বর্তমানে সেখানে রাজনৈতিক নেতাদের গৃহবন্দি করা হয়েছে। গণতন্ত্রে এটা অগ্রহণযোগ্য পন্থা। কাশ্মির ইস্যুতে এখন অনেক বিষয় আছে- সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কাশ্মিরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয় গভর্নরকে। এর মানে তিনি যেমনটা চাইছেন তেমনটাই সিদ্ধান্ত দেয়া হচ্ছে, যা কিনা সংসদে আলোচনা করে নেয়া উচিত। আমি জানি না এই বিষয়ে কেউ সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হবেন কিনা, যদিও প্রচুর মামলা ঝুলে আছে, এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে তারা সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করেছেন। এভাবে গণতন্ত্র চলতে পারে না।
কাশ্মির সমস্যার সমাধান একটি চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে ভারতের কংগ্রেস নেতা ও সাবেক মন্ত্রী শশী থারুর বলেন, কাশ্মিরের বিষয় অনেক পুরনো, অপ্রচলিত পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে, যা মানবতা ও গণতন্ত্রের বিরোধী।
[caption id="attachment_175465" align="alignnone" width="700"] ঢাকা লিট ফেস্টে লোকসভার সদস্য শশী থারুর[/caption]
ভারতের অন্যান্য প্রদেশের মতো সমস্যা এখানে হলে তার একটা রাজনৈতিক সমাধান বের করা যেতো। কিন্তু কাশ্মিরে পাকিস্তান অস্ত্র সরবরাহ দিচ্ছে অভিযোগ করে শশী থারুর বলেন, আমাদের প্রায় একই ধরনের সমস্যা পাঞ্জাবে শিখ সম্প্রদায় নিয়ে আছে। কিন্তু এ নিয়ে কেউ প্রশ্ন করে না, পাকিস্তানও সেখানে ইন্ধন দিচ্ছে। কিছু সংখ্যক শিখ সেখানে অর্থ ঢালছে। সেখানকার আন্দোলন হয়তো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা গেছে, কিন্তু কাশ্মিরে সেটা সহজ নয়। সুতরাং চ্যালেঞ্জ হলো- আমরা কীভাবে এগিয়ে যাবো?
ভারতের রাজনীতির ন্যারেটিভ পাল্টে গেছে- এমন মন্তব্য করে ভারতীয় এই রাজনীতিক আরও বলেন, ড. মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় বলে গেছেন, ‘আশা করি ইতিহাস আমার প্রতি সদয় আচরণ করবে।’ এটি ব্যাপকভাবে তখন মিডিয়ায় এসেছিল, এখন তার কথাই সত্য প্রমাণিত হয়েছে।
শশী থারুর বলেন, শুধু মনমোহন সিংয়ের সাম্প্রতিক লেখাটি পড়লেই বিষয়টি বোঝা যাবে। মানুষ যখন তাকে বিভিন্নভাবে হেয় করেছিল, তখন বোঝা যাচ্ছে যে ন্যারেটিভ পাল্টে গেছে।
বাবরি মসজিদের রায়ের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চান না জানিয়ে শশী থারুর বলেন, আমি আশা করি মানুষ এ নিয়ে আর প্রশ্ন না তুলে এটিকে একটি সমাপ্তি হিসেবেই দেখবে এবং উত্তরণের পথে হাঁটবে। কারণ, আমার কাছে মনে হয় আমরা সামাজিকভাবে অনেক ভুগেছি এ নিয়ে। আমাদের জন্য এর চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।
সেশনের শুরুতেই শশী থারুরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন ঢাকা লিট ফেস্টের পরিচালক আহসান আকবর। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. সি আর আবরার।