×

খেলা

আঠারো পেরিয়ে উনিশে নড়াইল এক্সপ্রেস

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০১৯, ১২:০১ পিএম

বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অনন্য এক উচ্চতায় পৌঁছে দেয়ার নেপথ্যে নায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার ক্রিকেটে অভিষেক ঘটেছিল ২০০১ সালের ৮ নভেম্বর। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৮ বছর পার করে ১৯-এ পর্দাপণ করলেন ম্যাশ। ১৯৮৩ সালের ৫ অক্টোবর নড়াইলের চিত্রা নদীর পাড়ে মহিষখোলা গ্রামে জন্মেছিলেন এই কিংবদন্তি ক্রিকেটার মাশরাফি। তিনি নড়াইলে কৌশিক নামেই সমধিক পরিচিত।

ছোটবেলা থেকেই দুরন্ত টাইগার সেনাপতি মাশরাফি। শৈশব কেটেছে চিত্রা নদীর পাড়ে। ছোটবেলায় বন্ধুদের সরদার (দলনেতা) ছিল কৌশিক। তার সঙ্গে চিত্রা নদীর এক ধরনের মিতালি ছিল। এই নদী তাকে খুব টানত। সময় পেলেই ঢাকা থেকে নড়াইল ছুটে যেত মাশরাফি। চিত্রা নদী তোলপাড় করায় সম্ভবত নড়াইলের কিশোরদের সর্বকালের সেরা ছিল এই কৌশিক।

২০০১ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেকেই নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। একই বছর ২৩ নভেম্বর ওয়ানডে ক্রিকেটে মাশরাফির অভিষেক হয়। অভিষেক ম্যাচে মোহাম্মদ শরীফের সঙ্গে বোলিং ওপেন করে তিনি ৮.২ ওভারে ২৬ রান দিয়ে নেন ২টি উইকেট। সেই থেকে যে শুরু পথচলা। টি-টোয়েন্টিতে মাশরাফির অভিষেক ঘটে ২০০৬ সালের ২৮ নভেম্বর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়কের তিন ফরমেটের ক্রিকেটে অভিষেক ঘটেছে নভেম্বর মাসে। ৮, ২৩ এবং ২৮ নভেম্বর। আর প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবুয়ে।

ক্যারিয়ারের শুরুতে ছিলেন পুরোপুরি ফাস্ট বোলার। সমসাময়িক অন্যান্য বোলাররা যখন ১৩৫ কিলোমিটার গতিতে বল করেই সন্তুষ্ট থাকতেন, তখন মাশরাফি নিয়মিতই ছুড়তেন ১৪০ প্লাস কিলোমিটার গতিতে বল করতে। যে কারণে তার নামই হয়ে যায় নড়াইল এক্সপ্রেস। কিন্তু দফায় দফায় ইনজুরির কারণে আপস করতে হয়েছে গতির সঙ্গে। এখন আর তেড়েফুঁড়ে করতে পারেন না প্রথম স্পেল। তবে মাথা খাটিয়ে ব্যাটসম্যানদের বোকা বানানোর ক্ষেত্রে জুরি নেই মাশরাফির।

গত বছর ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নড়াইল-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। ক্রিকেটের ২২ গজে তুখোড় অধিনায়ক রাজনীতির ময়দানে নবীন হলেও সমান জনপ্রিয়। মাশরাফির বাবা গোলাম মুর্তজা ও মাতা হামিদা মুর্তজা। ডাকনাম স্বপন ও বলাকা। মাশরাফির বাবা স্বপন ছিলেন ফুটবলার ও অ্যাথলেট। যদিও তিনি চাইতেন না ছেলে ক্রিকেট খেলুক। তবে মাশরাফির মা স্কুল-শিক্ষিকা হামিদা মুর্তজা চাইতেন মাশরাফির সব ইচ্ছা পূরণ করতে। তিনিই ক্রিকেট খেলার সব সামগ্রী কেনার টাকা দিতেন মাশরাফিকে।

১৮ বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে মাশরাফি খেলেছেন ৪টি বিশ্বকাপ, নেতৃত্ব দিয়েছেন ২টিতে। তার অধীনেই প্রথমবারের মতো বিশ^কাপের (২০১৫ আসরে) কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ, উঠেছিল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালেও। পরিসংখ্যানের হিসাবে মাশরাফিই বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়ক। শুধু অধিনায়ক হিসাবেই কেন? বোলার হিসাবেও কম যাননি মাশরাফি। ১৮ বছর আগে শুরু করেছিলেন যেই দৌড়, তাতে ২২ গজে যেমন কাঁপন ধরিয়েছেন প্রতিপক্ষের বুকে, তেমনি লাখো বাংলাদেশি তরুণকে শিখিয়েছেন কঠিন মুহূর্তে হাল না ছেড়ে এগিয়ে যাওয়ার মন্ত্র।

২০০৪ সালের ভারত বধ, একই বছর রাহুল দ্রাবিড়কে বোকা বানিয়ে বোল্ড করা, ২০০৫ সালে কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো, ২০০৬ সালে বছরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি, ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানো থেকে শুরু করে এখনো পর্যন্ত মাশরাফির হাত থেকে বেরিয়েছে কোটি বাঙালিকে খুশি করার মতো অসংখ্য সব স্পেল। ১৮ বছরের পথ চলায় ২ পায়ে ৭টি অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে মাশরাফিকে। তার পায়ে সর্বশেষ বড় অস্ত্রোপচার হয়েছিল ২০১১ সালে।

ক্যারিয়ারের ১৮ বছরে দেশের জার্সি গায়ে খেলেছেন ৩৬ টেস্ট, ৫৪টি টি-টোয়েন্টি ও ২১৭টি ওয়ানডে ম্যাচ। ইনজুরির কারণে টেস্ট থেকে সরে দাঁড়ানোর আগে খেলা ৩৬ টেস্টে শিকার করেছেন ৭৮টি উইকেট। যা কিনা এখনো বাংলাদেশের পেসারদের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ ছাড়া ব্যাট হাতেও ৩ ফিফটিতে করেছেন ৭৯৭ রান।সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ওয়ানডে ফরম্যাট খেলে যাচ্ছেন এখনো।

এই ফরম্যাটে তার চেয়ে বেশি উইকেট নেই আর কোনো বাংলাদেশি বোলারের। দেশের ইতিহাসের সেরা বোলিং ফিগার ৬/২৬সহ ওয়ানডেতে মাশরাফির শিকার ২৬৬টি উইকেট। ব্যাট হাতে করেছেন ১৭৮৬ রান।টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ৫৪ ম্যাচে নিয়েছেন ৪২টি উইকেট, ব্যাট হাতে করেছেন ৩৭৭ রান। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ছেড়েছেন আড়াই বছর আগে। হাঁটুর সমর্থন পান না বলে টেস্টও খেলা হয় না ১০ বছর ধরে। নিকট ভবিষ্যতেও সম্ভাবনা নেই সাদা পোশাকটি গায়ে জড়ানোর। তবে আপন মহিমায় খেলে যাচ্ছেন পঞ্চাশ ওভারের ওয়ানডে ফরম্যাটে।

এই ফরম্যাটেও খুব বেশি দিন হয়তো আর দেখা যাবে না বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ও তারকা পেসার মাশরাফি বিন মুর্তুজাকে। ঊনিশেই হয়তো ক্যারিয়ারের ইতি টানতে পারেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App