×

মুক্তচিন্তা

গভীর সংকটে জাবি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০১৯, ০৯:০৭ পিএম

গত কয়েক মাসের অচলাবস্থা কাটিয়ে ওঠার কোনো লক্ষণ নেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। উল্টো পরিস্থিতি আরো খারাপ দিকে মোড় নিয়েছে। জরুরি সিন্ডিকেট বৈঠকের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা হল ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু মূল সমস্যার সমাধান না করে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়াটা পরিস্থিতিকে আরো থমথমে করে তুলেছে। প্রথমত, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে যে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। কারণ উপাচার্য নিজেও নিজেকে নির্দোষ দাবি করে অভিযোগের তদন্ত দাবি করেছেন। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর থেকেই উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ। সব আলোচনা ব্যর্থ করে দিয়ে উভয়পক্ষই পরস্পরবিরোধী অবস্থানে অনড় রয়েছেন। পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটে যখন গত মঙ্গলবার অবরুদ্ধ উপাচার্যকে মুক্ত করতে গিয়ে ছাত্রলীগ আন্দোলনরত শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের ওপর হামলা চালায়। অবশ্য এ ধরনের পরিস্থিতি নতুন নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য শরীফ এনামুল কবিরের বিরুদ্ধেও একই ধরনের আন্দোলন হয়েছিল এবং দীর্ঘ সময় তার বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সে সময়েও ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা ঘটেছিল। আর ছাত্রলীগ সে হামলা চালিয়েছিল উপাচার্যের নির্দেশেই। বর্তমান উপাচার্য তাকে অবরোধ থেকে মুক্ত করার জন্য ছাত্রলীগকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এ থেকে ছাত্রলীগের হামলা এবং এতে উপাচার্যের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে আর কোনো প্রশ্নের অবকাশ নেই। গত কয়েক মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোরিয়াল টিম তাদের দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়, জ্ঞান ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার কেন্দ্র। সেখানে নানা মতের সহাবস্থান থাকবে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে। আলোচনায় সমাধান না হলে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। সেক্ষেত্রে সব পক্ষকেই সহিষ্ণুতা ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে। কিন্তু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষক এবং উপাচার্যপন্থিরা যেভাবে বাকবিতণ্ডা, হাতাহাতিতে জড়িয়েছেন তা দৃষ্টিকটু এবং লজ্জার। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ফলে বর্তমান অচলাবস্থার সম্পূর্ণ দায় তাদের। কিন্তু এর জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। নিয়মিত ক্লাস এবং পরীক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং হচ্ছে। নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা পিছিয়ে গেছে। ফলে সেশনজটের আশঙ্কা রয়েছে। সব মিলিয়ে এই পরিস্থিতি থেকে দ্রুত উত্তরণ জরুরি। যার জন্য কার্যকরী উদ্যোগ নিতে হবে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে উপাচার্যের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির তদন্ত করতে হবে। যদি তিনি দোষী সাব্যস্ত হন তাহলে তাকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে আর যদি তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন তাহলে তাকে সুষ্ঠুভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। ফিরিয়ে আনতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিস্থিতি।

ফাহিম ইবনে সারওয়ার : ঢাকা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App