×

অর্থনীতি

সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযানে প্রশাসন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০১৯, ১০:১৩ এএম

বাজারে পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্ত্বেও কিছু অসাধু পেঁয়াজ আমদানিকারক, আড়তদারদের একটি সিন্ডিকেট সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে পেঁয়াজের বাজার অস্থির করে তুলেছে। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ও কক্সবাজারের টেকনাফভিত্তিক এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে প্রশাসন। পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল করার নেপথ্যে জড়িতদের তালিকায় চট্টগ্রামের তিন আমদানিকারকের নাম পাওয়ার পর অভিযানে নেমে দুই আমদানি-কারককে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে নগরীর স্টেশন রোডে নুপুর মার্কেট থেকে এই দুই আমদানিকারককে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিসি অফিসে নিয়ে নেয়া হয়। সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। পাশাপাশি একটি প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এদিকে আগামী দুই-তিনদিনের মধ্যে খুচরা পর্যায়ে ১০০ টাকার নিচে পেঁয়াজ বিক্রির আশ্বাস দিয়েছেন দেশের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা। পাশাপাশি কাগজ ছাড়া আমদানিকারকদের কাছ থেকে আর পেঁয়াজ না কেনার অঙ্গীকারও করেছেন তারা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক সভায় এ অঙ্গীকার করেন আড়তদাররা। পেঁয়াজের বাজার তদারকি করতে একটি মনিটরিং টিম গঠনেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয় সভায়।

সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সেলিম হোসেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের চট্টগ্রামের উপপরিচালক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি এবং জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সেলিম হোসেন বলেন, ‘আড়তদাররা বলেছেন, ক্রেতা যাতে ১০০ টাকার মধ্যে পেঁয়াজ কিনতে পারেন, সেই ব্যবস্থা তারা করবেন। এক সপ্তাহের মধ্যে এস আলম ও মেঘনা গ্রুপ পেঁয়াজ নিয়ে আসবে। সংকট আর থাকবে না। এসব পেঁয়াজ এলে ৬০-৭০ টাকায় হয়তো নেমে আসবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘দুই সপ্তাহের মধ্যে দেশি পেঁয়াজ উঠবে আর ভারতের পেঁয়াজও চলে আসবে। তখন দাম ৪০ টাকার নিচে নেমে যাবে। দেশে পেঁয়াজের কোনো মজুদ সংকট নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম আর বাড়বে না। কক্সবাজার, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, সাতক্ষীরা, ঢাকাসহ যেসব স্থানে পেঁয়াজ আমদানি হয় সেখানকার জেলা প্রশাসন কাজ করছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ মনিটরিং টিমও কাজ করছে। পাইকারি ও খুচরায় ডক্যুমেন্ট ছাড়া কোনো পেঁয়াজ বিক্রি করবে না বলে তারা অঙ্গীকার করেছেন।’ খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিচ বলেন, ‘২-৩ দিন পরই ক্রেতারা খুচরা পর্যায়ে ১০০ টাকার ভেতরে পেঁয়াজ কিনতে পারবে। আড়তদাররা যাতে ৮০-৮৫ টাকায় বিক্রি করতে পারে এবং কাগজের মাধ্যমে পেঁয়াজ কিনতে পারে সে জন্য আমরা আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে উদ্যোগ নেব।’ এর আগে সভায় পেঁয়াজের বাজারে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম বলেন, যতদূর জানতে পেরেছি, এখন পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে ৩০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। প্রতি কেজি ৪২ টাকায় কিনে বিক্রি করা হচ্ছে ৯৫ টাকায়। তাহলে কেজিতে বাড়তি বিক্রি হচ্ছে ৫৩ টাকা। শুধু আমদানিকারকরাই এভাবে ১৫৯ কোটি নিয়ে যাচ্ছে। এরপর খুচরায় আসতে আসতে এ অংক প্রায় ২১০ কোটি টাকা। কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘এই যে ২০০ কোটি টাকার বেশি, এ টাকা কার পকেটে গেল? এই টাকা তো সাধারণ ক্রেতার পকেট থেকে চলে গেল। এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’ সভায় পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা জানান, গত রবিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত খাতুনগঞ্জে ২০০ টনের মতো পেঁয়াজ এসেছে। আরো ২০০ টনের মতো পেঁয়াজ আসছে। এসব পেঁয়াজ বাজারে এলে দাম ৮০ থেকে ৮৫ টাকা হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, ‘কমিটি গঠন করে মনিটর করা হবে কত দামে কিনছেন আর কত দামে বিক্রি করছেন। আড়তে থাকা বেশি দামের যে পেঁয়াজ কালকের (বুধবার) মধ্যে বিক্রি শেষ করবেন। এর পরদিন থেকে দেখব কত দামে কিনছেন। ন্যায্য দামে বিক্রি করতে হবে। এডিসির নেতৃত্বে মনিটরি টিম করে দেয়া হবে। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে অভিযান চলবে।’ এদিকে পেঁয়াজের বাজার অস্থির করার নেপথ্যে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে প্রশাসন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে স্টেশন রোড এলাকায় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের নেতৃত্ব ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে দুই আমদানিকারককে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন। অভিযানে ছিলেন জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক। অভিযান শেষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম বলেন, পেঁয়াজের মূল্য সন্ত্রাস ঠেকাতে সোমবার (৪ নভেম্বর) খাতুনগঞ্জে ও রিয়াজুদ্দিন বাজারে অভিযান চালিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি টিম। অভিযানে পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল করার পেছনে ১২-১৫ জনের একটি সিন্ডিকেট চক্র জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। ওই সিন্ডিকেটে মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজের দামের কারসাজিতে কক্সবাজারের টেকনাফ ও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জভিত্তিক পেঁয়াজ আমদানিকারক জড়িত বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। সে মোতাবেক চট্টগ্রামের তিনটি আমদানিকারকের ঠিকানা পেয়েছিলাম। তার পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে আমদানিকারক এ হোসেন ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী আবুল হোসেনকে এবং জে এস ট্রেডার্সের মিনহাজুল আবেদিন বাপ্পিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ১৫ দিনের করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App