×

খেলা

ভুটানে আনুশকা-বিরাট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০১৯, ১০:৪৮ এএম

ভুটানে আনুশকা-বিরাট
ভুটানে আনুশকা-বিরাট

খুব ছোট বয়স থেকেই ক্রিকেটের প্রতি প্রচণ্ড নেশা ছিল কোহলির। সেই নেশা এতটাই বেশি ছিল যে, অন্য কোনো দিকে তার হুঁশ ছিল না। ছোটবেলায় নাকি তার মাত্র দুটি পোশাক ছিল। একটি ক্রিকেটের জার্সি, আরেকটি স্কুলের ইউনিফর্ম। ৩ বছর বয়স থেকেই বিরাট ক্রিকেট খেলা শুরু করেন। ছেলের এমন ক্রিকেটের টান দেখে মাত্র ৯ বছর বয়সেই বাবা প্রেম কোহলি ছেলেকে দিল্লি ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি করে দিয়েছিলেন। সেখানে কোচ রাজকুমার শর্মার তত্ত্বাবধানে ক্রিকেট শেখা শুরু করেন কোহলি। প্রতিদিন বাড়িতে অনুশীলন, একাডেমিতে অনুশীলনে নিয়ে যাওয়া সব কিছুতেই তার বাবার হাত ছিল। কোহলির জার্সি নম্বরটা ১৮। জাতীয় দলে হোক, কিংবা আইপিএলে রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু সব জায়গাতেই সেরা এই ব্যাটসম্যানের জার্সির পেছনে শোভা পায় ‘১৮’ সংখ্যাটা। কোহলির জার্সি তো শচিনের মতো ১০-ও হতে পারত! নেহাত শখের বশে নয় কিংবা সংখ্যাটা কোহলির প্রিয় বলেও নয়। ‘১৮’-এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে তার জীবনের, ক্রিকেটে আসার অনুপ্রেরণার একটা গল্প। তারিখটা ছিল ১৮ ডিসেম্বর, ২০০৬। যেদিন পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন তার বাবা প্রেম কোহলি, তখনো জাতীয় দলে খেলার সুযোগ হয়নি কোহলির। বাবা মারা যাওয়ার পর দিল্লির হয়ে রঞ্জি ট্রফি খেলে এসে বাবার সৎকার করেছিলেন ১৮ বছরের সাহসী কোহলি। ক্রিকেটের মাঠে তাকে ছেড়ে দেয়াটা শিখিয়েছিলেন বাবা প্রেম কোহলি। বাবাই ছিলেন তার ক্রিকেটার হয়ে ওঠার পেছনের কারিগর। বাবার মৃত্যুতে মানসিকভাবে বেশ বড় ধাক্কা লাগে কোহলির জীবনে। বাবার স্বপ্ন পূরণে কোহলি সেই দিনটির তারিখ বেছে নেন নিজের জার্সিতে। তখন তার বয়সটাও ছিল ১৮।

১৯৮৮ সালের ৫ নভেম্বর ভারতের রাজধানী দিল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন বিরাট কোহলি। দেখতে দেখতে ৩১তম জন্মদিন পালনে তার মনে পড়ে যায় ১৫ বছরের কোহলির কথা। যখন তার ডাকনাম ছিল ‘চিকু’। গতকাল ৫ নভেম্বর নিজের জন্মদিনে পেয়েছেন হাজারো মানুষের শুভেচ্ছা। ২০০৬ সালের জুলাইয়ে ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেলার জন্য ডাক পান কোহলি। ভারতের নীল জার্সিতে তার প্রথম সফর ছিল ইংল্যান্ডে। ২০০৮ সালে দলের অধিনায়কের ভার বহন করেন কোহলি। সে বছর মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ^কাপের শিরোপা জেতেন অধিনায়ক কোহলি। সে বছরই ২০ লাখ ভারতীয় রুপিতে আইপিএলের দল রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুতে ডাক পান। ২০০৮ সালের আগস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ডাম্বুলায় কোহলির ওয়ানডে অভিষেক হয়। নিজের প্রথম ওয়ানডেতে মাত্র ১২ রান করেন। এখন ওয়ানডেতে তার রান সাড়ে ১১ হাজারের ওপরে। সেঞ্চুরি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৩টি। ২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কিংসটনে টেস্টে অভিষেক হয় তার। সাদা পোশাকে তার সেঞ্চুরি ২৬টি।

২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর দীর্ঘদিনের প্রেমিকা বলিউড অভিনেত্রী আনুশকা শর্মাকে বিয়ে করেন তিনি। চার বছর চুটিয়ে প্রেম করার পর ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। ক্যারিয়ারে অসংখ্য সাফল্য পাওয়া এ ক্রিকেটারের ললাটে জুটেছে অনেক পুরস্কার। ২০১১ থেকে ২০১৩ সালের সিয়েট ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার, ২০১২ সালে আইসিসি ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার, ২০১৩ সালে অর্জুন পুরস্কার, ২০১৭ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কার, ২০১৬ সালে উইজডেন লিডিং ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার, ২০১৭ সালে আইসিসি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার, আইসিসি ওয়ার্ল্ড টেস্ট একাদশের অধিনায়ক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন কোহলি। ধ্যান-জ্ঞান যার সব ক্রিকেটে,

গতকাল ৩১ বছরে পা রেখেছেন ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি। জন্মদিনটা স্মরণীয় করে রাখতে জীবনসঙ্গী বলিউড অভিনেত্রী শর্মার সঙ্গে সময়টা তিনি কাটাচ্ছেন নীল পপি আর বজ্র ড্রাগনের দেশ ভুটানে। মঙ্গলবার সকালে নিজের ভেরিফাইড অ্যাকাউন্ট থেকে একটি টুইট করেন কোহলি। একটি চিঠির দুটি ছবি যুক্ত করা সে টুইটে। চিঠিটি কোহলি নিজেকেই লিখেছেন। যখন তিনি ১৫ বছরের কিশোর, সবাই ডাকত ‘চিকু’ নামে। সেই কিশোরের কাছেই কোহলি লিখেছেন তার খোলা চিঠি। আর টুইটের ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘১৫ বছর বয়সী আমাকে নিজের জীবনযাত্রা এবং জীবন থেকে পাওয়া শিক্ষার ব্যাখ্যা। লিখতে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টাই করেছি। পড়ে দেখতে পারেন।

হাই চিকু, প্রথমেই শুভ জন্মদিন। আমি জানি নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে তোমার অনেক প্রশ্ন জমা আছে আমার কাছে। আমি দুঃখিত, খুব বেশি প্রশ্নের উত্তর তুমি পাবে না। কারণ সামনে কী জমা আছে তা জানা না থাকলেই সারপ্রাইজটা আরো মিষ্টি করে, প্রত্যেকটা চ্যালেঞ্জ আরো উপভোগ্য করে এবং প্রতিটি হতাশাকে শেখার নতুন একটি উপায় বানায়। তুমি আজকে হয়তো এটা বুঝবে না। তবে মনে রাখো, গন্তব্যের চেয়ে যাত্রাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং এই যাত্রাটা অসাধারণ।

আমি তোমাকে বলতে চাই যে, জীবন তোমার জন্য অনেক বড় কিছু জমিয়ে রেখেছে। তবে তোমাকে সর্বদা প্রস্তুত থাকতে, কাছে আসা সব সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য। যখনই সুযোগ পাবে দুই হাত ভরে নাও এবং যেটা পেয়েছ সেটাকে কখনোই হেলায় হারিও না। তুমি পিছিয়ে যাবে, সকলের ক্ষেত্রে তাই হয়। তুমি নিজেকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করো ওপরে ওঠার। প্রথমেই হয়তো তুমি পারবে না, আবার চেষ্টা করো। তোমাকে অনেক মানুষ ভালোবাসবে। আবার ঘৃণাও করবে অনেকেই। এমনকি যারা তোমাকে চেনেই না তারাও হয়তো মন্দ কথা বলবে। তাদের ব্যাপারে একদম ভেবো না। নিজের প্রতি বিশ্বাসটা রেখো।

আমি জানি, তুমি এখন ভাবছো সেই জুতা জোড়ার কথা, যেগুলো আজ বাবা কিনে দেয়নি। কিন্তু আজ সকালেই তোমাকে ভালোবাসার যে আলিঙ্গন দিয়েছে অথবা তোমার উচ্চতা নিয়ে যে মজাটা করেছে তার সামনে এই জুতা জোড়া কিছুই নয়। এগুলো উপভোগ করো। আমি জানি, কখনো কখনো সে তোমার কাছে বদরাগী মনে হবে। কিন্তু এটা শুধু তোমার ভেতর থেকে সেরাটা বের করে আনার জন্যই। তুমি ভাবো, আমাদের বাবা-মা হয়তো আমাদের বুঝতে পারে না। কিন্তু মনে রেখো, শুধু পরিবারই আমাদের নিঃশর্ত ভালোবাসে। তাদেরও সমান ভালোবেসো, শ্রদ্ধা করো এবং যত বেশি সম্ভব সময় কাটাও। বাবাকে বলো যে, তুমি তাকে ভালোবাসো। আজকেই বলো, আগামীকালকেও বলবে, প্রায়ই বলবে।

সবশেষে একটা কথাই বলব, মনের কথা শোনো, স্বপ্নগুলোকে তাড়া করো। দয়ালু হও, নিজের মতো হও আর পৃথিবীকে দেখিয়ে দাও গগনচুম্বী স্বপ্ন দেখতে শিখলে তা জীবনে পার্থক্য গড়ে দেয়। আর হ্যাঁ, চুরি করা পরোটাগুলোকে যত পার খেয়ে নাও। আগামীতে এই পরোটাই তোমার কাছে বিলাসিতা হয়ে উঠবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App