ইফাদ, ইয়াসিন ও আজিজুল এরা সবাই একটি মাদ্র্রাসার হেফজখানার ছাত্র। এদের প্রত্যেকের বয়স তেরোর কোঠায়। তাদের প্রতিদিনের জীবন রুটিন মাফিক চললেও দিনের ২৪ ঘন্টাই কাটছে লোহার শিকলে তালা বন্দি। প্রতিদিনের খাওয়া-দাওয়া, টয়লেট-গোসল, লেখাপড়া, ঘুম সবই হচ্ছে লোহার শিকলে বাধা অবস্থায়। এমনই হৃদয় বিদারক ভাবে কৈশোর হরণের ঘটনা ঘটেছে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার তুমিলিয়া ইউনিয়নের ভাইয়াসূতি হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায়। লোহার শিকলে তালা দেয়া ১৪ পাড়া মুখস্থ মো. ইফাদ মিয়া (১৩) নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের ইসলামপাড়া গ্রামের প্রবাসী কাওছার মিয়ার ছেলে। ১৩ পাড়া মুখস্থ মো. আজিজুল ইসলাম (১৩) একই এলাকার কৃষক নাছির উদ্দিনের ছেলে। ইফাদ ও আজিজুল সম্পর্কে মামা-ভাগনে। ৩ পাড়া মুখস্থ মো. ইয়াসিন (১৩) কালীগঞ্জ উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের টেক মানিকপুর গ্রামের মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহর ছেলে। সরেজমিনে দেখা যায়, ইফাদ, ইয়াসিন ও আজিজুল বসে কোরআন শরীফ পড়ছে। কিন্তু ওদের প্রত্যেকের পায়ে লোহার বিশাল শিকলে তালা দেয়া রয়েছে। ওই শিকল নিয়েই তারা খেতে যাচ্ছে রান্না ঘরে, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যাচ্ছে টয়লেটে। এ ব্যাপারে ওই তিনজন ছাত্রের সাথে কথা বললে তারা জানায়, না বলে চলে যাওয়ায় তাদের বাবা-মা পায়ে লোহার শিকল দিয়ে তালা দিয়ে একটি চাবি নিয়ে গেছে এবং অন্য একটি চাবি মাদ্রাসা সুপারের কাছে রেখে গেছে। এ ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে মাদ্রাসার শিক্ষক মো. এমদাদুল হক ক্যামেরার সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। তবে আরেক শিক্ষক হাফেজ মো. সিফাত হোসেন জানালেন, তারা মাদ্রাসা থেকে চলে যায়। এ কারণে তাদের বাবা-মা শিকল দিয়ে তালা মেরে রেখে গেছেন। ২০০৬ সালে ভাইয়াসূতি হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য রয়েছে পরিচালনা কমিটি। শুরু থেকেই মাদ্রাসাটিতে সুপারের দায়িত্ব পালন করছেন মো. আরিফুল্লাহ। বর্তমানে ওই মাদ্রাসায় ৭৫ জন ছাত্র রয়েছে। এদের মধ্যে ১৮ জন এতিম ছাত্র। । ছাত্রদের মধ্যে কেউ কেউ কিছু কিছু টাকা পয়সা দিলেও মূলত যাকাত, ফিতরা ও লিল্লাহ ফান্ডের অর্থে চলে এখানকার খরচাপাতি। সম্প্রতি ছাত্রদের পায়ে তালা দেয়ায় মাদ্রাসার সুপার মো. আরিফুল্লাহ’র বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি রেজাউল করিম রানু মাস্টার বলেন, মাদ্রাসার ওই তিন ছাত্রের পায়ে শিকল ও তালা দেওয়ার বিষয়টি তার জানা নেই। মাদ্রাসার সেক্রেটারী বদরুজ্জামান ভূঁইয়া রতন বলেন, এর আগে মাদ্রাসার এক শিক্ষার্থীকে শারীরিক প্রহার করেছে ওই সুপার। তখন তার নামে মাদ্রাসায় সালিশও বসেছিল। ওই সময় তাকে বলে দেয়া হয়েছিল কোন শিক্ষার্থীকে যেন মারধর না করা হয়। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের পায়ের শিকল খুলে দিতেও বলা হয়েছিল। কিন্তু সুপার বলেন, ছাত্ররা চলে যায় এজন্য তাদের বাবা-মা শিকল দিয়েছে। তারপরও বলা হয়েছিল, যারা চলে যায় যাক, কিন্তু কারো পায়ে শিকল বা তালা দেয়া যাবে না। কিন্তু তারপরও মাদ্রাসা সুপার কথা শোনেনি। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মাদ্রাসা সুপার মো. আরিফুল্লাহ’র বক্তব্য হচ্ছে, এতে তার কিছু করার নেই। ওই ছাত্রদের অভিভাবকরাই শিকল দিয়ে পায়ে তালা দিয়েছেন। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শিবলী সাদিক বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। তবে আপনাদের কথা দিচ্ছি- দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।