×

মুক্তচিন্তা

অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদ কি ললাট লিখন?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০১৯, ১০:৩০ পিএম

বাস্তবে বলা হলেও রাজনীতি থেকে জাতি হিসেবে আমরা কখনো ধর্মকে বাদ দিতে পারিনি। তবে মুখে যে যাই বলি না কেন, খাতায়-পত্রে যা-ই লেখা থাকুক না কেন, প্রশ্নটা হচ্ছে পরিবর্তিত জাতীয় ও বিশ্বপরিস্থিতিতে জাতি হিসেবে ‘ধর্ম-কর্ম অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদ’ কি আমাদের ললাট লিখন? হেফাজতে ইসলাম মন্দির পাহারা দিচ্ছে এটা কি তারই লক্ষণ? হেফাজতে ইসলাম হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের বৈঠক ও মতৈক্য কি তার ইঙ্গিত দিচ্ছে?

অনেক সময়েই কম প্রচারিত বা কম আলোচিত ঘটনার তাৎপর্য হয় অনেক বড় ও সুদূরপ্রসারী। এমনি এক ঘটনা ঘটেছে বিগত ২৮ অক্টোবর সোমবার সন্ধ্যায় হাটহাজারীতে। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্তসহ ৪ সদস্যের প্রতিনিধিদল ধর্মভিত্তিক কওমি মাদ্রাসার অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় আমির আল্লামা শফির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। দেশের চলমান ইতিহাসে এই ধরনের সাক্ষাৎকার প্রথম ব্যতিক্রমী ও আগ্রহোদ্দীপক হলেও আকস্মিক নয়। এর একটা পটভূমি রয়েছে। বিগত ১৮ অক্টোবর হিন্দু সম্প্রদায়ের এক ছেলের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে মহানবীর (সা.) অবমাননার অভিযোগে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার জের ধরে ২০ অক্টোবর হাটহাজারী দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার ছাত্ররা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি থানা ঘেরাও ও হামলা চালিয়ে ভাঙচুর এবং চট্টগ্রাম-হাটহাজারী সড়ক অবরোধ করে। মাদ্রাসার পাশে সীতাকালী কেন্দ্রীয় মন্দিরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। কিন্তু আমির মাওলানা শফির নির্দেশে এবং তার ছেলে হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক আনাস মাদানির প্রচেষ্টায় সেখানে পরিস্থিতি শান্ত হয়। তার অনুসারীরা মন্দির পাহারা দেয়। তাতে অনাকাক্সিক্ষত সাম্প্রদায়িক হানাহানি ও আক্রমণ বন্ধ হয়। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের একটি উগ্র অংশ উত্তেজনা সৃষ্টির ঘটনা সংঘটিত করার বিষয়টি অস্বীকার করলেও সেখানকার ঘটনা পর্যবেক্ষণে এটা সুস্পষ্ট যে, একটি অংশ যেমন বিক্ষোভ মিছিল বের করে উত্তেজনা-সংঘর্ষ করতে চেয়েছে, ঠিক তেমনি অন্য একটি অংশ বাধা দিয়েছে বিধায় পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে। অনেকটা একই ধরনের অর্থাৎ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার যেমন বিনষ্ট করার অংশও তেমনি ভোলার বোরহানউদ্দিনের ঘটনায় মধ্যেও পরিদৃষ্ট হয়েছে। জানা যায়, সেখানে ১৯ অক্টোবর শনিবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক ইউএনও থানার ওসি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ আলেম সমাজের মধ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা যাতে না ছড়ায় তা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। ঘটনার বিচার হবে এই নিশ্চয়তা পেয়ে পূর্ব ঘোষিত প্রতিবাদ কর্মসূচি বাতিল করা হয়। কিন্তু পরদিন রবিবার অন্য একটি গ্রুপ ঈদগাহ ময়দানে উত্তেজনা সৃষ্টি করে এবং হামলার ঘটনা ঘটে। তাতেই লুটপাট, গোলাগুলি, হতাহতসহ ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। যতদূর জানা যায়, হেফাজত আমির মাওলানা শফির অনুসারীরা সেখানে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও হানাহানির বিপক্ষে অবস্থান নেন। এই প্রেক্ষাপটেই হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সংগঠনটি সিদ্ধান্ত নিয়ে হাটহাজারীতে গিয়ে হেফাজত আমির মাওলানা শফির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সাম্প্রতিক সময়ের ভূমিকার জন্য তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। এবার মাওলানা শফির শান্তিপূর্ণ অবস্থান গ্রহণের কারণে কোনো সমস্যা হলো না। মন্দির-মসজিদ-মাদ্রাসা একসঙ্গে থেকে শত বছরের ঐতিহ্যকে রক্ষা করল। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায়, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সংগঠনটি মাওলানা শফির সঙ্গে দেখা করে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মিলেমিশে বসবাসের সংস্কৃতি আমাদের ঐতিহ্য এবং এই জন্য আমরা হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই মিলে জীবন বাজি রেখে অস্ত্র হাতে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করেছি। নিঃসন্দেহে জাতি হিসেবে আমরা সম্প্রীতি চাই এবং সম্প্রীতির ভেতর দিয়েই গড়ে উঠেছে আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজ। তাই হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ যেমন হেফাজত আমির মাওলানা শফির সঙ্গে দেখা করে ও দোয়া চেয়ে সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করেছে, ঠিক তেমনি মাওলানা শফিও তার অফিসে দোয়া সাক্ষাৎকার দিয়ে দেশের অগণিত মানুষের ইচ্ছা, প্রত্যাশা ও আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। এই জন্য দেশবাসী এই দুই সংগঠনের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে। প্রকৃত বিচারে প্রয়োজনই সবকিছুর নির্ধারক এবং অভিজ্ঞতা যথাযথ কাজ করার দিকনির্দেশ দেয়। বিগত সময়ে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের জমায়েত নিয়ে অনভিপ্রেত ঘটনা স্মরণে এলে দেশ দরদি ও ধর্মপ্রাণ মানুষের আসলেই মাত্রাতিরিক্ত ভিত শঙ্কিত হয়ে পড়ার কথা। এই সাক্ষাৎকারের ভেতর দিয়ে ধারণা করা যায়, বিভীষিকার মতো ওই পর্ব পার হতে আমরা আরো একটি অগ্রপদক্ষেপ দিলাম। বাস্তবে এই পর্ব শুরু হয়েছে ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-মাওলানা শফি সাক্ষাৎকারের ভেতর দিয়ে। পরে হেফাজতের মধ্যে এ নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং দীর্ঘদিন মাওলানা শফির নীরব থাকার ঘটনা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। তবে বিগত নির্বাচনের আগে এক সময় মাওলানা শফি মুখ খোলেন। তিনি বলেন যে, ‘হেফাজতে ইসলামের কোনো রাজনৈতিক কিংবা নির্বাচন করার উদ্দেশ্য নেই। এ সংগঠন অরাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক সংগঠন। হেফাজত ইসলাম কোনো সময় রাজনীতি বা জোটের সঙ্গে ছিল না। ভবিষ্যতেও কোনো রাজনৈতিক জোটের সঙ্গে সম্পৃক্ত বা একাত্ম হওয়ার ইচ্ছা নেই। কেউ যদি সম্পৃক্ত বা একাত্ম হওয়ার কথা বলে তা হবে একেবারে মিথ্যা। হেফাজতে ইসলাম রাজনীতির মাঠে নেমে কিংবা বক্তব্য দিয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চায় না।’ বলাই বাহুল্য, এবারে যে দেশের ইতিহাসে নির্বাচনের আগে-পরে প্রথমবারের মতো সাম্প্রদায়িক প্রচারণা হয়নি, পবিত্র ধর্মকে কেউ রাজনৈতিক ফায়দার জন্য ব্যবহার করতে পারেনি; এর আরো আরো কারণ থাকলেও হেফাজত আমির মাওলানা শফির উল্লিখিত বক্তব্য ও অবস্থান তার প্রধানতম কারণ। রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তি, সম্প্রীতি, উন্নতি সমৃদ্ধির নিয়ামক। অবস্থা অনুযায়ী পারস্পরিক ছাড় না দেয়া ভিন্ন ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা পায় না। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, রাজনীতিতে যখনই পবিত্র ধর্মকে অপব্যবহার করা হয়, তখনই এসবের চরম বিঘ্ন ঘটে। পলিটিক্যাল ধর্ম কেবল আমাদের দেশেই নয়, বিশ্বব্যাপী মানবতার শত্রু। সব ধর্ম ও মতামত কোনো রাষ্ট্র ও সমাজে থাকাটাই স্বাভাবিক। ধর্ম ও মতামত নিশ্চয়ই দাঙ্গা, ফ্যাসাদ, হানাহানি, রক্তারক্তি সৃষ্টি করে না। যদি করত তবে শত বছরে হাটহাজারীসহ বহু বহু জায়গায় মন্দির-মসজিদ-মাদ্রাসা একসঙ্গে এক দেয়ালের এদিক-ওদিক থাকতে পারত না। বাস্তবে পাশাপাশি বসবাস করার সংস্কৃতি শেখা বা অনুশীলন করা ছাড়া জাতি হিসেবে আমাদের কোনো বিকল্প নেই। দ্বিজাতিতত্ত্বের মধ্য দিয়ে ভাগ হয়েছে ভারত আর অসাম্প্রদায়িকতা দিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্র দ্বিখণ্ডিত হলেও এই সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। জাতীয় কবির মনমতো ‘একই বৃন্তে দুটি ফুল হিন্দু-মুসলিম’ চেতনা বাস্তবে রূপ পায়নি। আজ সুদীর্ঘ বছর পর এসে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে, এক দেশ তিন ভাগে বিভক্ত হলেও তিন দেশেই রাজনৈতিক ধর্ম কেবলই হিংসা, দ্বেষ, হানাহানি, রক্তারক্তি বাড়িয়ে দিচ্ছে। পরিস্থিতি এমনই যে, পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি-ধমকি পর্যন্ত প্রকারান্তরে ধর্মের নামে দেয়া হচ্ছে। এর পরিণাম কী তা কেউ চিন্তাও করতে পারছেন না। প্রকৃত বিচারে রাজনীতিতে সফল হবে সেই দল বা সেই রাজনৈতিক নেতা, যে দল বা যিনি রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের ভারসাম্যের জায়গাটা খুঁজে বের করে সফলতার সঙ্গে তা প্রয়োগ করতে পারেন। এই অনুসন্ধান ও প্রয়োগ একদিকে যেমন আর্ট তেমনি বিজ্ঞানও। যে নেতার দেশ-জাতি-জনগণের কল্যাণ প্রতিষ্ঠার দূরদৃষ্টি অর্থাৎ যথার্থ মিশন-ভিশন আছে, তিনিই কেবল এই অনুসন্ধান ও প্রয়োগে সফল হতে পারেন। পাকিস্তানি আমলে শাসক ও শোষকগোষ্ঠী এই মানচিত্রের শিকড়ে প্রোথিত সাম্প্রদায়গত বিভক্তিতে ভারসাম্য রক্ষা তো করেইনি বরং তাকে ভয়াবহ অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এটা সবারই জানা যে, পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান সৃষ্টি করে ওই রাষ্ট্রের ক্ষমতায় বসে ‘আজ থেকে হিন্দুরা হিন্দু ও মুসলমানরা আর মুসলমান থাকবে না’ মন্তব্য করে বলেছিলেন ‘ধর্মবিশ্বাসের দিক থেকে নয়, রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে’ সবাই মর্যাদা পাবে, বসবাস করবে। কিন্তু কায়েমি স্বার্থবাদীরা ধর্মকে সামনে এনে ‘এক ধর্ম এক দেশ এক নেতা’ নীতি কার্যকর করেছিল। ফলে বিনষ্ট হয়েছিল ভারসাম্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর চার নীতি দেশবাসীকে উপহার দিয়ে রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। আইন বলে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন। প্রসঙ্গত বলি, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাশিয়া সফরের সময় চিঠিতে লিখেছিলেন, ওষুধ বন্ধ হলেই যেমন বোঝা যায় রোগী সুস্থ কিনা, তেমনি আইন বা বল প্রয়োগ তুলে নিলেই বোঝা যাবে নীতি-পদক্ষেপ সঠিক কিনা। সত্তর বছর পর গর্বাচেভ আইন ও বল তুলে নিয়ে গ্লাসনন্ত পেরেস্থইকা চালু করার পর দেখা গেল বালির বাঁধের মতো সোভিয়েত ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। প্রসঙ্গত, জাতীয় মূলধারা আন্দোলনে অবস্থান করার অভিজ্ঞতার থেকে বলি, বঙ্গবন্ধুর শাসনামলের শুরু থেকেই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ যখন নানা সমস্যায় জর্জরিত, তখন পরাজিত ও উগ্রবাদীরা টার্গেট করে ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদকে। সঙ্গে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রও হয় টার্গেট। তখন নানা সীমাবদ্ধতা ও দুর্বলতার মধ্যে সরকার রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে ভারসাম্য সৃষ্টি করতে পেরেছিল কিনা তা নিয়ে গবেষণা আজ একান্ত প্রয়োজন। তারপর জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়া শাসনও কি ভারসাম্য রক্ষা না করে বরং ক্রমাগত অসামঞ্জস্য সৃষ্টি করেছে। বলাই বাহুল্য জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে ২০০১-০৬ শাসনামলে খালেদা-নিজামীর শাসন সবদিক থেকে ভারসাম্যের জায়গাকে একেবারেই নস্যাৎ করে দিয়েছিল। তাই বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। জাতীয় রাজনীতির মূলধারার প্রধান দল বলা হয় আওয়ামী লীগকে। কেননা বাম-ডানের ভারসাম্যের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা পায় মূলধারা। প্রসঙ্গত বলি, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু জাতীয় চার নীতি ঘোষণার পর ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে প্রচারণা জোরদার হলে বঙ্গবন্ধুকে এক সময় বলতে হয়, আমি বাঙালি, আমি মুসলমান ইত্যাদি। সভার শুরুতে কুরআন, গীতা, ত্রিপিটক পাঠ চলতে থাকে। রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে এই ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে তিনি চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই সুযোগ পরাজিত শত্রুরা দেয়নি। দেশ ফিরে গিয়েছিল পঁচাত্তরের হত্যা-ক্যুয়ের পর দ্বিজাতিতত্ত্বের পাকিস্তানি ধারায়। পরে এক সময় মুক্তিযুদ্ধকালীন স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সদ্য প্রয়াত ন্যাপ নেতা অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ‘ধর্ম-কর্ম সমাজতন্ত্র’ স্লোগান উত্থাপন করেছিলেন। এই স্লোগান প্রথমে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়লেও পরে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সিপিবিও রণনীতি ও কর্মসূচিতে ধর্ম বিষয়টি যুক্ত করে। এদিকে আওয়ামী লীগ ঘোষণা ও কর্মসূচিতে পরিবর্তন না আনলেও রীতি অনুযায়ী রাজনীতিতে ধর্মকে ব্যবহার করতে থাকে। সিলেটের শাহজালাল মাজার থেকে নির্বাচনী প্রচার আমাদের রাজনীতি কালচারে পরিণত হয়েছে। বাস্তবে বলা হলেও রাজনীতি থেকে জাতি হিসেবে আমরা কখনো ধর্মকে বাদ দিতে পারিনি। তবে মুখে যে যাই বলি না কেন, খাতায়-পত্রে যা-ই লেখা থাকুক না কেন, প্রশ্নটা হচ্ছে পরিবর্তিত জাতীয় ও বিশ্বপরিস্থিতিতে জাতি হিসেবে ‘ধর্ম-কর্ম অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদ’ কি আমাদের ললাট লিখন? হেফাজতে ইসলাম মন্দির পাহারা দিচ্ছে এটা কি তারই লক্ষণ? হেফাজতে ইসলাম হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের বৈঠক ও মতৈক্য কি তার ইঙ্গিত দিচ্ছে? এসব প্রশ্ন সামনে রেখেই জাতি জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী উৎসব পালন করতে যাচ্ছে।

শেখর দত্ত : রাজনীতিক ও কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App