×

জাতীয়

নগরে ভোটের হাওয়া

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০১৯, ১০:৪৬ এএম

নগরে ভোটের হাওয়া
নগরে ভোটের হাওয়া
নগরে ভোটের হাওয়া
নগরে ভোটের হাওয়া

জানুয়ারিতে একই দিনে ঢাকার দুই সিটিতে ভোটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ১৮ নভেম্বরের পর যে কোনো দিন ঘোষণা করা হবে তফসিল। এরই মধ্যে ভোটের হাওয়া বইতে শুরু করেছে রাজধানীতে। প্রস্তুত প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এরই মধ্যে মাঠে নেমেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরাও।

দুই সিটিতেই নতুন মুখ!

ঝর্ণা মনি : রাজধানীর দুই সিটিতেই নতুন প্রার্থী দেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ডেঙ্গু মোকাবেলায় ব্যর্থ দুই মেয়রের পরিবর্তে প্রার্থী মনোনয়নে চমক দিতে চায় দলটি। সাংগঠনিকভাবে দক্ষ, কৌশলী, ক্লিন ইমেজের প্রার্থীকে আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়ন দেবে তারা। ভোরের কাগজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র।

সূত্রমতে, ঢাকাকে বিশ্বের অন্যতম তিলোত্তমা নগরীতে পরিণত করার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে সরকার। উন্নয়ন বাস্তবায়নে ঢাকার কর্তৃত্ব হাতছাড়া করতে চান না ক্ষমতাসীনরা। অন্যদিকে আগামী ২০২০-২১ সালকে মুজিববর্ষ ঘোষণা করা হয়েছে। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। এর পরের বছর উদযাপিত হবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। এই দুটি বড় জাতীয় উৎসবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সক্রিয় ভূমিকা চান দলের নীতিনির্ধারকরা।

এদিকে দুই সিটিতেই দলের প্রার্থীর ছড়াছড়ি। নির্বাচনের ডামাঢোল শুরুর আগেই অনেকে অনানুষ্ঠানিক জনসংযোগ হিসেবে দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি, সামাজিকতায় অংশ নিচ্ছেন। আলোচনায় রয়েছেন অর্ধডজন রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়িক নেতা। উত্তরে বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম ছাড়াও আলোচনায় রয়েছেন প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের স্ত্রী বিজিএমইয়ের সভাপতি রুবানা হক, ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, হক গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদম তমিজী হক প্রমুখ। দক্ষিণে বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন ছাড়াও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি এডভোকেট নজীবুল্লাহ হিরু, অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এম এ আজিজের ছেলে ও মহানগর দক্ষিণের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ওমর বিন আবদুল আজিজ, সাবেক এমপি ও বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দীন, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শফিউল আলম মহিউদ্দিনের নাম আলোচনায় রয়েছে।

তবে দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, অনেক দিন ধরেই রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ডে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে জরিপ করা হয়েছে। মেয়র পদে সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী দেয়ার কাজ চলছে। দুই সিটিতেই প্রার্থী পরিবর্তনের আভাস পাওয়া গেছে। জানতে চাইলে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান ভোরের কাগজকে বলেন, প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। মনোনয়ন বোর্ডের সভায় গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট এবং আমাদের নিজস্ব রিপোর্ট খতিয়ে দেখা হবে। অবশ্যই যোগ্য, দক্ষ, স্বচ্ছ ইমেজের অধিকারীকে মনোনয়ন দেয়া হবে। নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, ইসির নিয়ম অনুযায়ী, জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ জন্য আমাদের প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। ইতোমধ্যেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছি আমরা।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর ঢাকা সিটি করপোরেশনকে উত্তর-দক্ষিণ দুই ভাগে ভাগ করা হয়। এর প্রায় চার বছর পর ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল দুই সিটিতে নির্বাচন হয়। ৬ মে শপথ নেন দুই মেয়র আনিসুল হক ও মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। লন্ডনের ওয়েলিংটন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর মারা যান ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আনিসুল হক। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটির উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে বিজয়ী হন ব্যবসায়ী নেতা মো. আতিকুল ইসলাম। ৭ মার্চ শপথ নেন তিনি। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন অনুযায়ী, পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার ১৮০ দিন আগে ভোট করতে হবে। এদিকে আগামী জানুয়ারিতে একই দিনে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ভোট হবে বলে গতকাল রবিবার জানিয়েছে ইসি।

প্রার্থীরা আগেভাগে মাঠে

রুমানা জামান : ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়েই মাঠে নামছে বিএনপি। উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে ৬ সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে জোরেশোরে। এরই মধ্যে অনেকেই মাঠে কাজ শুরু করেছেন। বগুড়া উপনির্বাচনের ধারাবাহিকতায় এখন জয়ের ব্যাপারে আরো বেশি আশাবাদী দলটি। হাইকমান্ড মনে করছে, নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হলে দুই সিটিতেই জয়লাভ করবে তারা। এবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নাম শোনা যাচ্ছে সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেলের। অন্যদিকে উত্তরে আলোচনায় রয়েছে তিন প্রাথীর নাম। এরা হলেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব ও বিএনপির শরিক এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম।

দক্ষিণ সিটিতে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে নিয়ে আশাবাদী বিএনপি। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন তিনি। কিন্তু ঐক্যফ্রন্টের স্বার্থে ছাড় দেন ইশরাক। এ ছাড়া মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাসের ব্যাপারেও দল আগ্রহী। কারণ বিগত নির্বাচনে আব্বাসকে মনোনয়ন দেয়া হলেও তার অনুপস্থিতিতে মাঠপর্যায়ে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখেন আফরোজা। নেতাকর্মী ছাড়া সাধারণ ভোটারদের মন জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেন তিনি। হাবিব-উন নবী খান সোহেল রয়েছেন দলীয় হাইকমান্ডের গুডবুকে। তবে তিনি নিজে তেমন আগ্রহী নন। দল চাইলে লড়তে রাজি হবেন বলে সোহেলের ঘনিষ্ঠ নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন।

অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটিতে আলোচনায় রয়েছেন তাবিথ আউয়াল। দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তিনি। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এখানে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ছিলেন তাবিথ। ওই নির্বাচন বিএনপি শেষ মুহূর্তে ‘বর্জন’ করলেও তাবিথ আউয়াল কয়েক লাখ ভোট পান। নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রসঙ্গে তাবিধ আউয়াল বলেন, সিটি নির্বাচনে দল অংশ নিয়ে আমাকে মনোনয়ন দিলে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। অতীতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নির্বাচনে ভালো ফল করতে পারব বলে আশা করি। এ ছাড়া যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব ও বিএনপির শরিক এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে এ বিষয়ে মতবিনিময়ও করছেন তারা। এ বিষয়ে শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, সিটিতে প্রার্থী হিসেবে প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছি। দলের সমর্থন রয়েছে আমার পক্ষে। আশা করছি দল সমর্থন দিলে আমি নির্বাচিত হব। এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্জন নয়, আমরা নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক। তবে বর্তমান বাস্তবতায় নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু হবে সেটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা গত জুন থেকেই মাঠ গোছানো শুরু করে দিয়েছেন। হাইকমান্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী, নিজ এলাকায় নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডসহ যে কোনো পরিস্থিতিতে ভোটারদের পাশে থেকে কাজ করেছেন তারা। সম্প্রতি ডেঙ্গুর প্রকোপ চলাকালে তিন সিটিতেই ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টিতে বিভিন্ন বাসাবাড়ি, দোকানপাট ও বিপণিবিতানে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে লিফলেট বিতরণ করেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এ ছাড়া ডেঙ্গুজ্বরে মৃতদের পরিবারের বাড়িতে গিয়ে সান্ত¡নাও দিয়েছেন। পুরান ঢাকা ও মিরপুরের ঝিলপার বস্তিতে আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তাসহ সব ধরনের সহায়তা করেছেন। ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত বাড্ডার তাসলিমা বেগম রেনুর বাসায় যান তাবিথ আউয়ালসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।

একই সঙ্গে দলীয় মনোনয়ন পেতে অন্তত এক ডজন নেতা জোরালো তদবির শুরু করেছেন। সরাসরি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন কেউ কেউ। তবে অনেকে লবিং-তদবির শুরু না করলেও প্রস্তুতিটা সেরে রাখছেন। দল মনোনয়ন দিলে আটঘাট বেঁধে নেমে পড়বেন। বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা জানান, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ না নিয়ে উল্টো দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করে দলের অনেক ক্ষতি হয়েছে। সেই ক্ষতিটা কাটিয়ে নেয়ার সুযোগ এসেছে। আগামী ৩ সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে নগরের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে প্রস্তুতি নেয়ার মোক্ষম সময় এখন। নির্বাচনের প্রস্তুতির ধাপে ধাপে যোগ্য নেতৃত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে এবং নগরে বিএনপির দুর্বল দিকগুলোও বেরিয়ে আসবে। এ ছাড়া বিএনপির প্রার্থীরা জয়লাভ করলে সরকার নানামুখী চাপে পড়বে। আর কারচুপি হলে সেটাকেও মোক্ষম ইস্যু বানিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন নতুন মাত্রা পাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App