×

জাতীয়

সৌদিতে দিশেহারা শ্রমিকরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০১৯, ১১:১২ এএম

সৌদিতে দিশেহারা শ্রমিকরা

সৌদি আরবে পুলিশের ব্যাপক ধরপাকড়ের মুখে সেখানে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরা দিশেহারা। শুধু দেশে ফেরত নয়, প্লেনে তুলে দেয়ার আগে তাদের নির্মমভাবে নির্যাতনও করা হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে যে, বৈধভাবে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা এখন পালিয়ে থেকেও রেহাই পাচ্ছে না। প্রায় প্রতিদিনই শত শত শ্রমিককে শূন্য হাতে দেশে ফিরতে হচ্ছে। গত তিন দিনে ৩৩২ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। গত এক সপ্তাহে প্রায় এক হাজার কর্মীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া শুধু চলতি বছরেই ২১ হাজারের বেশি এবং গত ১০ বছরে সোয়া দুই লাখ কর্মীকে সৌদি থেকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এদিকে সৌদিতে কর্মরত শ্রমিকদের ধরপাকড়ের ঘটনায় দেশে তাদের পরিবারের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে। সৌদিতে জনশক্তি রপ্তানি করে এমন রিক্রুটিং ও ট্র্যাভেল এজেন্সিগুলোর ব্যবসায় ধসের উপক্রম হয়েছে।

অন্যদিকে বেশ কিছুদিন ধরে চলে আসা ধরপাকড়ের ব্যাপারে সৌদিতে বাংলাদেশ দূতাবাস, বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলেও ফিরে আসা কর্মীরা অভিযোগ করেছেন।

সৌদি সরকার সে দেশে চলমান এই অভিযানের নাম দিয়েছে ‘নেশন উইদাউট ভায়োলেশন’। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক সূত্রে জানা গেছে, গত তিনদিনে সৌদি থেকে ৩৩২ জন বাংলাদেশি কর্মী দেশে ফিরেছে। এর মধ্যে গত বুধবার ১৫৩ জন, বৃহস্পতিবার ১০৪ এবং শুক্রবার রাতে ৭৬ জন দেশে ফিরেছে। গত তিন মাসে নয় হাজারের বেশি বাংলাদেশি সৌদি আরব থেকে ফিরে এসেছে।

ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের তথ্য অনুযায়ী গত আগস্টে এক হাজার ৫২৮ জন, সেপ্টেম্বরে তিন হাজার ৩৩৯ জন এবং অক্টোবরে চার হাজার ৬৬২ জনকে সৌদি থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এদের সবাইকে একেবারে শূন্য হাতে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ফেরত পাঠানো কর্মীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে।

ফিরে আসা ব্যক্তিরা ঢাকায় বিমান থেকে নেমেই তাদের মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরছেন। তারা অভিযোগ করেন, সৌদি পুলিশ কারো কোনো কথা শুনছে না। যাকে পাচ্ছে তাকেই ধরছে। তারা কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে না। যাকে হাতের কাছে পাচ্ছে তাকেই ধরে ক্যাম্পে নিয়ে যাচ্ছে। নির্মমভাবে নির্যাতন চালানো হচ্ছে। প্রতিবাদ করলেই নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। অনেকেই শার্ট খুলে ও প্যান্ট তুলে দেখাচ্ছেন সৌদি পুলিশের নির্যাতনের চিহ্ন। ঢাকার দোহার উপজেলার আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, তিনি বৈধভাবেই সৌদি আরবে গিয়ে দোকানের সেলসম্যান হিসেবে কাজ করতেন। এখনো ১১ মাস তার আকামার মেয়াদ ছিল। সৌদি পুলিশ দোকান থেকে ধরে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। অনেকেই ফিরে এসেছেন যাদের কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার পথে পুলিশ গ্রেপ্তার করে এক কাপড়েই প্লেনে তুলে দিয়েছে।

চার লাখ টাকার বিনিময়ে মাত্র দুই মাস আগে ফদিরপুরের রফিকুল ইসলাম সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। একটি এনজিওর কাছ থেকে ঋণ বাবদ নিয়েছিলেন তিনি তার ওই টাকা। যাওয়ার পর পুলিশের ধরপাকড়ের কারণে দুই মাসই তিনি সৌদিতে পালিয়ে ছিলেন। এরপর ধরা পড়ে দেশে ফেরেন। ঋণের টাকা কীভাবে পরিশোধ করবেন সেই ভাবনায় কথা বলতে বলতেই কেঁদে ফেললেন রফিকুল।

নারায়ণগঞ্জের সাইফুল ইসলাম জানান, নয় মাস আগে তিনি বৈধ আকামা নিয়ে সৌদি গিয়েছিলেন। আরো ছয় মাস তার আকামার মেয়াদ ছিল। তাকেও দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের আবদুল্লাহ জানান, তার আকামার জন্য কফিলকে আট হাজার রিয়াল জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ গ্রেপ্তারের পর কফিল কোনো দায়িত্ব নেয়নি।

এ ধরনের অভিযোগের যেন শেষ নেই। সবারই অভিযোগ এক বছর ধরে সৌদিতে পুলিশের ধরপাকড় চলছে। বাংলাদেশ কমিউনিটির লোকজন সৌদিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে বিষয়টি অবহিত করেছে। কিন্তু দূতাবাস থেকে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। সৌদি কারাগারে অনেক বাংলাদেশি নাগরিক বন্দি রয়েছে। তাদেরও দেশে পাঠানো হবে। যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে তাদের নতুন করে বৈধ হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে না। অনেকেই ইতোমধ্যে সাত থেকে ১০ হাজার রিয়াল পর্যন্ত জমা দিয়েছে। গ্রেপ্তার আতঙ্কে বাংলাদেশিরা এখন রাস্তায় বের হচ্ছে না। কাজে যেতে পারছেন না।

ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান জানান, সৌদিতে ধড়পাকড় দিন দিন বেড়েই চলছে বলে ফিরে আসা কর্মীরা জানিয়েছেন। সেপ্টেম্বর থেকে ধরপাকড় জোরালো হয়েছে। চলতি বছর অক্টোবর মাস পর্যন্ত প্রায় ২১ হাজার বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বৈধ ও অবৈধ সবাইকেই সৌদি পুলিশ ধরে দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। সৌদি কারাগারে তাদের নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App